1

অতীতে বিভিন্ন সময় দেশের চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন ঘটনায় মানুষ যখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল তখনই র‌্যাব সেই সকল ঘটনার অনুঘটকদের গ্রেফতার করে জনমনে স্বস্থির সঞ্চার করেছে। সাম্প্রতিক কালে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক’কে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে পুড়িয়ে অঙ্গার করার বিভৎস দৃশ্য মানুষের অন্তরাত্মাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনার বিভৎসতা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। গত ২০ মে ২০১৪ তারিখে আনুমানিক ১১০০ ঘটিকার সময় ফুলগাজী উপজেলার জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ একরামুল হক (৪৭)কে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ফেনী শহরের একাডেমী সড়কের বিলাসী সিনেমা হলের সামনে নির্মমভাবে খুন করে। জনপ্রিয় এই তরুন উপজেলা চেয়ারম্যান এর লোমহর্ষক খুনের ঘটনার পর স্থানীয় সাধারণ জনগন জেলা শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং তারা খুনীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবীতে জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে মিছিল বের করে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উক্ত নৃসংশ হত্যাকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন। উক্ত খুনের ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের বিভিন্ন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালাতে থাকে। র‌্যাবও দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য তৎপর হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হক প্রতিদিনের মতো শহরের মাষ্টার পাড়ার বাসা থেকে গাড়ীতে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের দিকে রওনা হন। এই সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফেনী প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মহিবুল্লাহসহ মোট ৫ জন। তাদের বহনকারী গাড়ীটি শহরের একাডেমী এলাকায় বিলাসী সিনেমা হলের সামনে পৌছা মাত্রই পূর্ব থেকেই ওৎ পেতে থাকা এক দল দুস্কৃতিকারী গাড়ীটিকে একটি ইজিবাইক দিয়ে পথরোধ করে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে চেয়ারম্যান একরামকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে কয়েকটি গুলি করে ও বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটায়। একই সঙ্গে দুর্বৃত্তরা লাঠি ও রামদা দিয়ে গাড়ীতে উপর্যুপরী হামলা চালায়। এ সময় গাড়ীতে থাকা চালকসহ চারজন আহত অবস্থায় বেরিয়ে যেতে পারলেও গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যান একরামুল হক গাড়ী হতে বের হতে পারেননি। পরে সন্ত্রাসীরা তার গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। নৃশংস এ হত্যাকান্ডটি সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত বিধায় হত্যাকারীরা কৌশলে বিভিন্নস্থানে আত্মগোপন করে। এ সকল বিষয়াদি বিবেচনায় রেখেই র‌্যাব গোয়েন্দা দল নৃশংস হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনের নিমিত্তে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে।

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল’কে নির্মমভাবে হত্যাইতোমধ্যে র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান ও বিশ্লেষন কার্যক্রম সমাপনান্তে নিশ্চিত হয় যে, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হক হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মোঃ আবিদুল ইসলাম আবিদ তার সাথে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সদস্য নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থান করছে, উক্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল বসুন্ধরা বি ব্লক, এইচ-১৩৯, রোড নং-০৫ হতে (১) মোঃ আবিদুল ইসলাম @ আবিদ (২৩), পিতা- মৃত ফকরুল ইসলাম বাবর, সং- সোনাপুর, থানা-সোনাগাজী, জেলা- ফেনী, (২) জাহিদুল ইসলাম @ সৈকত (২২), পিতা-কামরুল হাশেম, সং- উত্তর গুত্থমা, থানা-পরশুরাম এবং জেলা-ফেনী (৩) চৌধুরী মোঃ নাফিজ উদ্দিন @ অনিক (২০), একাডেমী রোড, শহীদ আতিকুল আলম সড়ক, ফেনী সদর, ফেনী, (৪) কাজী শানান মাহমুদ (২৩), পিতা-কাজী কামাল উদ্দিন, সাং- বালিগাঁও আফতাব বিবির হাট, থানা ও জেলা-ফেনী, (৫) মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী @সিফাত (২৪), সাং-সেনা পোসকুনী, থানা-ফুলগাজী, জেলা-ফেনী, (৬) মোঃ শাহজালাল উদ্দিন @ শিপন (২২), পিতা-মোঃ শাহ জাহান মজুমদার, সাং-মনতলা, সালদারবাজার, ফুলগাজী, ফেনী, এবং (৭) হেলাল উদ্দিন (২৩), পিতা-মোঃ রফিক মিয়া মজুমদার, সাং-পলিটেকনিক্যাল এর সামনে হোল্ডিং নং-৬৭৪, জেলা- ফেনী,। পরবর্তীতে আবিদের স্বীকারোক্তিমতে হত্যা মিশনে অংশগ্রহণকারী অন্যতম কিলার (৮) মোঃ জাহিদ হোসেনকে র‌্যাব-৭ এর একটি দল ফেনীর রামপুর এলাকা অদ্য ভোররাতে আটক করে। এদের মধ্যে ০৭ জনই কিলিং মিশনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং হেলাল উদ্দিন (২৩) এদের কে তার ভাড়া করা বাসায় জেনে শুনে আত্মগোপনে সাহায্য করে।

আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জিহাদ চৌধুরী উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ একরামুল হককে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১৯ মে ২০১৪ তারিখ রাতে সালাম জিমনেশিয়ামের ভিতরে একটি কক্ষে মোঃ জিহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরো কয়েক জনের উপস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার দিন ২০ মে ২০১৪ তারিখ আনুমানিক সকাল ০৮০০ ঘটিকার সময় তারা সকলেই শহরের একাডেমী এলাকায় অবস্থান নেয়। জিহাদ চৌধুরী উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে হত্যার বিষয়ে প্রত্যেকের কার্যক্রম সম্পর্কে চুড়ান্ত ব্রিফিং প্রদান করে। এরপর জিহাদ চৌধুরী (১) মোঃ আবিদ, (২) মোঃ কাজী শানান, (৩) সিফাত, (৪) সানী ও (৫) সৈকতকে সর্বমোট ০৫টি ৭.৬২ মিঃমিঃ পিস্তল প্রদান করে। বেলা আনুমানিক ১১০০ ঘটিকার সময় চেয়ারম্যানকে বহনকৃত PRADO গাড়ীটি বিলাস সিনেমা হলের সামনে আসার সাথে সাথেই আবীদের নেতৃত্বে একটি ইজিবাইক দিয়ে রাস্তায় বেরিকেড সৃষ্টি করে। সাথে সাথে রুটি সোহেলের নেতৃত্বে কিছু লোক হাত বোমা নিক্ষেপ, রামদা, লাঠি ইত্যাদি সরঞ্জামাদি দিয়ে আতংক সৃষ্টিসহ গাড়ীটি ভাংচুর করে। অতঃপর আবীর উপজেলা চেয়ারম্যানকে লক্ষ্যে করে খুব কাছ থেকে ০২ রাউন্ড গুলি করে। এর পরপরই পিস্তল বহনকারী অন্যান্য সদস্যরা উপুর্যপরী গুলি করতে থাকে। এরই মধ্যে গাড়ীতে অবস্থানরত ড্রাইভারসহ ০৪ জন গাড়ী থেকে আহত অবস্থায় বের হতে সক্ষম হয়। হত্যাকারীদের মূল টার্গেট উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হওয়ায় তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গাড়ীটিতে রুটি সোহেল তার লোকজন দিয়ে পূর্বে সংগৃহিত পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামীরা জিহাদ চৌধুরীর সাথে দেখা করে পিস্তলগুলো ফেরত দিলে, জিহাদ চৌধুরী তাদেরকে আত্মগোপনে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়। উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যরা বর্তমানে পলাতক আছে। এক্ষেত্রে র‌্যাবের পর্যায়ক্রমিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।

উপর্যুক্ত ঘটনাটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।