11দৈনিক বার্তাঃ শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রাইম ব্যাংকের ৩৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কশিমন (দুদক)।বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।দুদকের জন সংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রাইম ব্যাংকে ৯৫ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির ১৬ কর্মকর্তাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া চার্জশিটে ব্যাংকটির ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্তে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বুধবার কমিশনের নিয়মিত সভায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর দিলকুশায় প্রাইম ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখাসহ বেশ কয়েকটি শাখা থেকে বিভিন্ন হিসাবের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ভুয়া ঋণগ্রাহক দেখিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নেয় আসামিরা।

যে ১৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে তারা হলেন- প্রাইম ব্যাংকের দিলকুশা শাখার শাখার প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ অফিসার কামরুল আহমেদ ফেরদৌস, আইবিবি দিলকুশা শাখার প্রাক্তন ম্যানেজার ইজবাহুল বার চৌধুরী, অফিসার এফ এম আশফাকুর রহমান, সিনিয়র অফিসার আবু ওয়াহেদ মো. আমিনুল ইসলাম, জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম মানিক, প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, প্রধান কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট এইচ এম জাকির হোসাইন, ফার্স্ট অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বালী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন,মো.কামরুল ইসলাম ভূইয়া, মিরান হোসেন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, এস এম এ মজিদ আনছারী, সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ নূরুল আমিন ও প্রাক্তন ট্রেইনি অ্যাসিসট্যান্ট মুহাম্মদ শামসুল আলম।

এছাড়া ব্যাংকের বাইরে যে ২২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে তারা হলেন- নিউ এস কে এন্টারপ্রাইজের মালিক সাজেদুর রহমান, কে এস এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শাহাদাত ইসলাম, এস কে এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল ইসলাম, এস এল এন্টারপ্রাইজের মালিক কাউছার আলী খান, ত্রিটেক ৬৯ প্রতিষ্ঠানের মালিক তাসনিম আলম, ব্রাঞ্চ সলুশনের পরিচালক জাহিদুল ইসলাম, পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম. লুলু কর্নারের মালিক জাকির হোসেন, ইলহাম এন্টারপ্রাইজের মালিক তাসমিন শারমীন, চন্দ্রঘোনা শেরপুরের বাসিন্দা রুহুল আমীন সিদ্দিকী, ফিরোজ ট্রেডার্সের মালিক মো. ফিরোজ আলম, নাজমুন নাহার, মিরপুরের বাসিন্দা রাজিয়া জান্নাতী ডালিয়া, কামরুন নাহার, মিসেস রতœা মাহবুব, মকবুল হোসেন খান, ইউরো এক্সপ্রেসের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন, ইজরা এশিয়া ট্রেড অ্যান্ড প্যাক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এনায়েত উল্লাহ ইকবাল, পরিচালক এম এরশাদ উল্লাহ আকমল, মিরপুর-১ এর বাসিন্দা মিসেস ফাহানা আক্তার, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কৃষিবিদ আবুল হাসেম ও সাব ভেলি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-ই-এলাহী।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ বছরে প্রাইম ব্যাংকের দিলকুশা শাখার প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ অফিসার কামরুল আহমেদ ফেরদৌস ব্যাংকটির আইটি সিস্টেম, নিজের পাসওয়ার্ড এবং ওই শাখার সংশ্লিষ্ট অপর কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড কৌশলে ব্যবহার করেন। বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ভুয়া ঋণগ্রাহক দেখিয়ে ৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৯০৩ টাকা তুলে আত্মসাত করেন।

প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১২ সালের ২৯ মার্চ প্রাইম ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইফতেখার হোসেন বাদী হয়ে ব্যাংকের ওই শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আহমেদ ফেরদৌসকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

পরে মতিঝিল থানা পুলিশ মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ থাকায় তদন্তের জন্য মামলাটি দুদকে পাঠিয়ে দেয়।

পরবর্তীতে দুদকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুর রেজা মামলাটির তদন্ত শেষ করেন। তদন্তে ৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৯০৩ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে ৩৮ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়। যার মধ্যে প্রাইম ব্যাংকের ১৬ জন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ২২ জন।

এছাড়া, প্রাইম ব্যাংকের যে ১৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন, তারা হলেন- সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. বাকী বিল্লাহ, সাময়িক বরখাস্তকৃত সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট খোন্দকার ইকবাল হোসেন, সিনিয়র অ্যাসিটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শফিকুজ্জামান ভুইয়া, অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ মহসিন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম, মো. আশরাফুল হক, মো. রাফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সোহেল, মো. আমিনুল ইসলাম খান, মো. মেজবা উদ্দিন কাজী, এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ সোলায়মান হোসেন, মো. সফিকুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ অফিসার মো শহিদুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার মো. হাসান জোবায়ের ও মো. আরিফুর রহমান।