01দৈনিক বার্তাঃ মুফতিইজাহারুলইসলামচৌধুরী ওতাঁর ছেলে হারুন ইজাহারইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর ছেলে হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজাহারের বিরুদ্ধে অ্যাসিড মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই)লোকমান হোসাইন। হারুন ইজাহার বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, তবে মুফতি ইজাহার পলাতক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসাইন বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর নগরের লালখান বাজার মাদ্রাসায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হয়। ঘটনার দিন মাদ্রাসার একটি কক্ষ থেকে ১৮টি বোতলে প্রায় নয় কেজি অ্যাসিড উদ্ধার করা হয়। পরে এ ঘটনায় অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হলে আলামত পরীক্ষার জন্য উদ্ধার হওয়া অ্যাসিড সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। ল্যাবের প্রতিবেদনে এসব পিকরিক অ্যাসিড বলে উল্লেখ করা হয়। এগুলো দিয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরক ও হাতবোমা তৈরি করা হয়। তাই এই মামলায় মুফতি ইজাহার ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে ২৫ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) বলেন, মুফতি ইজাহার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। তিন পাতার, পাঁচ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে ২ জনকে আসামী ও ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

সূত্র জানায়,দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্ন্তঘাতমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার এবং পরিকল্পিতভাবে নাশকতার জন্য আসামীরা পরস্পরের যোগসাজশে নিজেদের হেফাজতে এসিড মজুদ করেছিল বলে অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন।

উল্লেখ্য গত বছরের ৭ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে নগরীর লালখান বাজারে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন ছাত্র আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’ছাত্র মারা যায়।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ল্যাপটপ চার্জার থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে। তবে পুলিশ ওই কক্ষ তল্লাশি করে চারটি তাজা গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। রাতে মুফতি ইজহারের বাসায় তল্লাশি করে ১৮ বোতল এসিড পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে নগরীর খুলশী থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৪ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় গত ১০ ফেব্র““য়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারের পর্যায়ে আছে।

এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের পর বর্তমানে আরও একটি মামলা তদন্তাধীন আছে।

মুফতি ইজহার ও তার ছেলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।লস্কর ই তৈয়বার সঙ্গে কানেকশনের অভিযোগে ২০১০ সালে একবার মুফতি হারুন ইজহার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ডাউকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর-ই তৈয়বার দুটি জঙ্গি নাজের ওরফে নাজের পারবন এবং শফিক ওরফে সাহাফাজ শামসুদ্দিন সেদেশের পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের সঙ্গে ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে মুফতি হারুনের কয়েক দফা বৈঠক হয়। এমনকি তারা মার্কিন ও ভারত দূতাবাসে হামলারও পরিকল্পনা নিয়েছিল। এরপর মুফতি হারুন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

তার পিতা মুফতি ইজহারের মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে। দেড় দশক আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশ চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গি জানায়, তারা মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসাতেই ট্রেনিং নিয়েছিল।

আসামীদের মধ্যে মুফতি ইজহার ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন। মুফতি ইজহার ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বে আছেন।