1দৈনিক বার্তাঃ  ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যার বিচার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাইদুল রহমানের কার্যালয় ঘেরাও ও সড়ক অবরোধ কওে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মানববন্ধন শেষে ইউএনও মাইদুল রহমানের কাছে স্বারকলিপি প্রধান করে তার অফিস  ঘেরাও করে জনতা।

এদিকে নেতাকর্মীদের অপর একটি অংশ ফুলগাজী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়ক কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে রাখেন। এতে জেলা শহরের সঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

অন্যদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে উপজেলা আ.লীগ।হরতাল ছাড়াও আরও ৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ হরতালসহ ৬ দিনের কর্মসূচি  ঘোষণা করেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম জানান, নিহত একরাম  চেয়ারম্যানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় শুক্রবার মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ, শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের শোকসভায় অংশগ্রহণ, হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে রোববার গণস্বাক্ষর, সোমবার উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, মঙ্গলবার উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির শোক সভা, বুধবার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিক্ষুব্ধরা দাবি করেন, এ হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করে প্রকৃত আসামিদের, প্রয়োজনে ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম হাজারীকে গ্রেফতার করা হোক। তারা  দোষীদের শাস্তির দাবি করেন।

এদিকে, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে বেলাল হোসেন পাটোয়ারীকে গতকাল বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য।

ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সার্কেল) মো. সামছুল আলম সরকার চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় বেলাল হোসেন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকান্ডের পর থেকে বেলাল হোসেন পাটোয়ারী পলাতক ছিলেন।

এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান একরামের হাত ধরেই বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয় এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদটিও পেয়েছেন। অল্প কিছুদিন আগেও বেলাল মেম্বার ছিলেন চেয়ারম্যান একরামের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ও আস্তাভাজন।

চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকান্ডে বেলাল মেম্বার জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর এলাকাবাসী ও একরাম সমর্থকরা তার ওপর ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে এবং গত ২৭ মে আনন্দপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে তার বাড়ী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

গত ২০ মে চেয়ারম্যান একরাম ফেনী থেকে ফুলগাজী যাওয়ার পথে ফেনী শহরের একাডেমি রোডের বিলাসী সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় তাকে গুলি করে, কুপিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
এঘটনায় সর্বশেষ বেলাল মেম্বারসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে পৌর শহরের প্রধান সড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব মীর আবদুল হান্নান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার আহাম্মদ ভূঞা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মজিবুর রহমান মজিব, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফা, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক জাফর উল্লাহ মজুমদার, ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল হক বাবলু।

এ সময় উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলেয়া বেগম মন্জু, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান বিবি জোলেখা শিল্পী, পাঠাননগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েল, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি এয়ার আহাম্মদ ডিপটী, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হোসেন মাসুদ, শুভপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শিমুল চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সদস্য গরীব শাহ হোসেন বাদশা, বাঁশপাড়া ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মির্জা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী ওমর ফারুক, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক শওকত হোসেন রুবেল, ছাগলনাইয়া সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক মোঃ জালাল হোসেন আসিব, যুগ্ম-আহবায়ক তানভীর হোসেন রনি, আমির হোসেন কিরণ, শুভপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক ফজলুল করিম নিশান, রাধানগর আহবায়ক সোহরাব হোসেন তারেক প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, একরাম হত্যাকান্ডটি  হচ্ছে ইতিহাসের একটি নৃশংস ঘটনা। তারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল কিলারদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক কঠিন শাস্তির দাবী জানান।