1দৈনিক বার্তাঃ দুর্বৃত্তদের নেতা হওয়া এবং  নেতাদের দুর্বৃত্ত হওয়ার প্রবণতা  দেশের সামগ্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে অযোগ্য এবং অদক্ষ দাবি করে সৎ  যোগ্যদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনেরও দাবি জানান তারা। রাজনীতিতে দুর্বত্তায়ন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিকেও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা বলেন।

চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও নির্বাচিতদের তথ্য প্রকাশ করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের নির্বাচন কমিশনকে  মেরুদণ্ডহীন উল্লেখ করে বলা হয় ৬ ধাপের এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে।নির্বাচনে কমিশনে প্রার্থীদের হলফনামা জমা  দেয়াকে ইতিবাচক উল্লেখ করলেও সুফল না আসার  পেছনে জাতীয়ভাবে হলফনামার তথ্য ব্যবহারে ব্যর্থতাকে দায়ী করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড.  তোফায়েল আহমদ।

ড. তোফায়েল বলেন, অপরাধীদের মধ্যে  নেতা হওয়ার প্রবণতা, দুর্বৃত্তদের মধ্যে  নেতা হওয়ার প্রবণতা সংঘাতিক রকম বৃদ্ধি  পেয়েছে। আবার অপর দিকে  নেতাদের মধ্যে দুর্বত্তায়নের প্রবণতাও  বেড়ে  গেছে। যারা আগে  নেতা ছিলেন তারা এখন দুর্বত্তদের কাছে  রেখে নেতার পদটাকে রক্ষা করবেন। এটা জাতির জন্য অশনি সংকেট।এ সময়  দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পস্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের কার্যকর  কোনো ব্যবস্থা না  নেয়ার কঠোর সমালোচনা করেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা  যে আমাদেরকে বৃভ্রান্ত করছে। তারা নির্বাচন বাতিল করতে পারে না, এর মাধ্যমে তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আশা করি ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন পুনঃগঠন হবে। স্বাধীনচেতা ও নির্ভিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।অবিলম্বে সৎ  যোগ্যদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পূনর্গঠনের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার নির্বাচনী ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেন, ৪৬৫ জন নির্বাচিত  চেয়ারম্যানের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিত প্রার্থী ১১৯ জন (২৫.৫৯ শতাংশ)। নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের গণ্ডি  পেরুতে পারেননি ৫৯ জন (১২.৬৮ শতাংশ) ।প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের  ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের গণ্ডি  পেরুতে না পারার হার ছিল ১৭.৯৬ শতাংশ (২,২৮৮ জনের মধ্যে ৪১১ জন)।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা যায়,  ভোটাররা উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীদের বেশি হারে নির্বাচিত করেছেন এবং স্বল্প শিক্ষিতদের কিছুটা হলেও বর্জন করেছেন।ফলাফল বিশ্লেষণে বলা হয়, ৪৬৫ জন নির্বাচিত  চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩০২ ধারায় (হত্যা মামলা) মামলা রয়েছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে। বর্তমানে মামলা রয়েছে এমন প্রার্থী দু’জন এবং অতীতে থাকা প্রার্থী ছিলেন ৫৪ জন।

নির্বাচিত  চেয়ারম্যানদের মধ্যে ২৮৮ জনের  পেশাই ব্যবসা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের  ক্ষেত্রে এ হার ছিল দুই হাজার ২৮৮ জনের মধ্যে এক হাজার ২৭৫ জন। হলফনামায়  পেশার বিষয়টি উল্লেখ না করা নির্বাচিত  চেয়ারম্যান ১৬ জন।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

সুজন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুদক  কোনোভাবেই কাউকে হুমকি দিতে পারে না, কিংবা হয়রানি করতে পারে না। কারণ, এটি একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান।তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও পরবর্তীতে এ ধারা অব্যাহত থাকেনি। অনেকেই হলফনামায় সম্পদের হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। দুদক চাইলে এদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের দাবি জানায়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমলাতন্ত্রের খবরদারি মুক্ত করতেই এ কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। বদিউল আলম মজুমদার দক্ষ,  যোগ্য, নিরপেক্ষ ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান। তিনি নির্বাচন কমিশনকে  মেরুদণ্ড  সোজা করে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ করার লক্ষ্যে যথাযথভাবে ক্ষমতা প্রয়োগের আহ্বান জানান।

এ সময় তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে দলভিত্তিক না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দলভিত্তিক নির্বাচন হলে তা মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হবে। ফলে জয়ের জন্য দলগুলোর মরিয়া প্রচেষ্টায় সংঘর্ষের জন্ম  দেবে। ক্ষমতাসীনরা জয়ের জন্য বিভিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার  চেষ্টা করে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি দলভিত্তিক নির্বাচন করতেই চায় তাহলে এজন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।সুজনের নির্বাহী সদস্য  তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা একটি সুন্দর নির্বাচনী সংস্কৃতি  তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।

তিনি অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুলসহ সাত খুনের ঘটনার আসামি কাউন্সিলর নূর  হোসেন ও অপর কাউন্সিলর নীলার সম্পদ ও হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।