12দৈনিক বার্তাঃ আব্বু কে বৃহস্পতিবার আসার সময় আমার জন্য একটি টিয়া রংয়ের খেলনার গাড়ী আনতে বলেছি। আব্বু বাড়ীতে আসার সময় সুন্দর দেখে গাড়ী কিনে আনবে বলেছে। এখন স্কুল বন্ধ গ্্রীষ্মকালীন বন্ধের মধ্যে সবাই মিলে বেড়াতে যাবো। কথাগুলো বলেছিল একরামের মেয়ে ফুল। তবে সে জানেনা তার বাবা আর কোনদিন ফিরে আসবে না।

নিহত একরাম চেয়ারম্যানের বড় মেয়ের নাম জারিন সুবাহ হক ডাক নাম ফুল। উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক ফুলগাজীকে বড়ই ভালোবাসতেন তাই বড় মেয়েকে আদর করে ফুল বলে ডাকতেন। যে উপজেলায় দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশী সময় ধরে রাজনীতি করেছেন সেই উপজেলার প্রতি ছিল তার অনেক বেশী ভালবাসা তাইতো একরামুল হক একরাম তার মেয়ের নামও রেখেছেন ফুলগাজীর সাথে মিলিয়ে ফুল। এখনো তার অবুঝ সন্তানের জানেনা তার বাবা আর নেই সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম ভাবে গত ২০ জুন খুন হয়েছে তার বাবা। বাবা রাজনীতি করেন তাই মাঝে মাঝে দেশের বাইরে যান এবারও হয়তোবা দেশের বাইরে সরকারী কোন কাজে গেছেন এমনটাই মনে করছেন তার অবুঝ সন্তানরা। শুক্রবার সকালে নিহত একরামুল হকের মাষ্টার পাড়াস্থ বাসায় গেলে দেখা যায় শুনশান নিরবতা। বড়দের মাঝে শোক আর আতংক দেখা গেলেও তার সন্তানরা এখনো অন্য শিশুদের সাথে খেলাধুলায় মগ্ন।

শুক্রবার এই প্রতিবেদক বাসায় গেলে দেখা মিলে বাড়ীর কেয়ারটেকার ইউসুফ এর সাথে তিনি নিয়ে যান মামলার বাদী জসিমের স্ত্রীর কাছে তিনি বলেন একরামের স্ত্রী এখনো কারো সাথে কথা বলবেনা। অনেক আবদার আর অনুরোধে নিয়ে যায় ওই বাড়ীর তৃতীয় তলায় যেখানে একরাম জীবনের অনেক গুলি বছর কাটিয়েছে। সেখানে দেখা যায় নিহত একরামের সন্তানেরা খেলাধুলা করছেন। যে কক্ষে একরাম বসে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলতে তার দক্ষিন পাশে জানালা ঘেষে দেখা গেছে ক্লোজ সার্কিট ক্যাম্রার (সিসি) কম্পিউটার ও মনিটর। ওই ঘরে মাঝে মাঝে একরাম চেয়ারম্যানের দুই একজন আত্বীয় কে দেখা যায়। তারা সবাই জানিয়ে দিয়েছেন ভাবি এখন কারো সাথে দেখা করবেনা। এবং কি কোন সাংবাদিককের সাথেও কথা বলবেনা। তারা জানান ঘটনার পর থেকে ঢাকার ও স্থানীয় পত্রিকার অনেক সাংবাদিক দেখা করতে চেয়েছেন তবে তিনি দেখা করতে রাজি হননি। তারা দাবি করছেন ইসলাম শরীয়তের দিক বিবেচনা করেই নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা বাইরের কারো সাথে দেখা করবেননা।
একদিকে রয়েছে নিহতদের একরামুল হকের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন তেমনই রয়েছে একরামের শুন্যতা। নিহত একরামুল হকের দুই মেয়ে এক ছেলে বড় ছেলের নাম তাহসিন। মেয়ের নাম আফরা জারিন সুবাহ হক আর সবচেয়ে ছোট মেয়ের নাম সাদিয়া যার জন্ম হয়েছে আমেরিকায়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে একরামুল হকের বড় ছেলে বর্তমানে চট্রগ্রাম রয়েছে তার খালার সাথে।

নিহত একরামুল হকের পরিবার থেকে শুরু করে ফেনী ডায়াবেটিস সমিতি, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে, স্থানীয় আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে চারদিকে শুধু শুন্যতা।

যে বাড়ীতে দিন রাত সারাক্ষন অসংখ্য নেতাকর্মী অপেক্ষা করতেন সেই মাষ্টার পাড়ার বাড়ীটি তে এখন দেখা যায় শুনশান নিরবতা বাড়ীর প্রধান ফটকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়া তেমন কাউকে এখন আর দেখা যায়না পুরা বাড়ি জুড়ে রয়েছে শুধু কান্না আর নিস্তবব্দতা। পুরো বাড়ী জুড়ে রয়েছে অজানা শংকা। পরিবারের সদস্যদের আশংকা একরাম হত্যার বিচার কি হবে? প্রকৃত আসামীরা কি সাজা পাবে নাকি অজনা অদৃশ্য কোন শক্তির হস্তক্ষেপে মামলাটি আদালতে স্থগিত হয়ে পড়ে থাকবে। নাকি প্রকৃত খুনিদের বাঁচিয়ে রাজনৈতিক ভাবে কাউকে ফাসিয়ে দিবে। খুনিদের মুখোস কি উম্মোচিত হবে? এই প্রশ্ন গুলি শুধু নিহত একরামুল হকের পরিবারের নয় প্রশ্ন গুলি এখন ফেনীবাসী তথা গোটা বাংলাদেশের কারন ফেনীর ইতিহাসে এমন বর্বরতার ঘটনা আর কেউ দেখেনি।

উল্লেখ্য, গত ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমী বিলাসী সিনেমা হলের সামনে রাস্তা গতিরোধ করে সন্ত্রাসীরা একরামুল হক কে প্রথমে গুলি করে পুড়িয়ে হত্যা করে।