11দৈনিক বার্তাঃ বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশে হামলা চালানোর কোনো সুযোগ নেই বলে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ উস্কানিমূলকভাবে মায়ানমারের বিজিপি সদস্যরা বিজিবির টহল দলের ওপর হামলা চালায়।

মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) হামলায় বিজিবি সদস্য নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমান নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মে.জেনারেল আজিজ।বাংলাদেশে মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ঘাঁটি থাকার ব্যাপারে মায়ানমারের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশে হামলা চালানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা তাদের বলেছি, দেশে আরএসও কোনো ক্যাম্প থাকলে তথ্য দেন। আমরা তাদের বিতাড়িত করবো।

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ওই সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক এ সময় নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত সংঘাতের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।এদিকে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দুদিন আগে গোলাগুলিতে নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ ফেরত দিয়েছে মিয়ানমার।

ওই গোলাগুলির পর সীমান্তে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। আরেক দফা গোলাগুলির পর ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবও করে সরকার।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে মিও মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকার পর লাশ হস্তান্তরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে বিকাল পর্যন্ত লাশটি ফেরত পাওয়া যাচ্ছিল না।এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে পরিস্থিতি সহনীয় করতে সরকারের যা যা করার দরকার তা করা হচ্ছে।

বিজিবির এক সদস্যের মৃত্যুর কথা জানিয়ে তার লাশ ফেরত আনার প্রক্রিয়ার কথাও বলেন তিনি।এরপর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সন্ধ্যায় বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ ফেরত দিয়েছে মিয়ানমারের শান্তিরক্ষী বাহিনী বিজিপি।

গত রাতে তারা (মিয়ানমার পুলিশ) বলে যে আজকে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তারা ৩৫২ নম্বর বর্ডার পিলারের কাছে ডেড বডি নিয়ে আসবে। একজন মেজরের নেতৃত্বে আমাদের ১০ জন লোক সেখানে যায়। জিরো লাইন পার হলে করলে তারা (মিয়ারমার পুলিশ) সেখানে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে গিয়ে তারা আমাদের ডেডবডি দেখায়। ডেডবডি আইডেন্টিফাই হয় যে এটা আমাদের নায়েক মিজানের। অন্যান্য ফরমালিটি শেষ করে আমরা ডেডবডি ফিরিয়ে আনি।

তবে মিজানের সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত পাওয়া যায়নি বলে জানান বিজিবি প্রধান।

তার (মিজান) সাথে যে একটি এসএমজি ছিল,১২০ রাউন্ড এ্যামুলেশন ছিল, এটির বিষয়ে আমরা তাদেরকে জানাই। তারা বলে যে এ মুহূর্তে সেটি নাই, তারা তাদের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এবিষয়ে আগামী ৩ জুন দুই দেশের বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হবে বলে জানান বিজিবি প্রধান।গত বুধবার রাতে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিজিবি সদস্যরা টহল দেয়ার সময় ওপার থেকে গুলিবর্ষণ হয়।তারপর থেকে মিজানকে পাওয়া যাচ্ছিল না।

বিজিবিও নিশ্চিত ছিল না যে মিজানের কী হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে উদ্ধৃত করে সেদেশের সংবাদপত্র ইরাবতী জানায়, বিজিবি সদস্য নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) এক সদস্যকে হত্যা ও সীমান্তে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থানকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শনিবার তাঁকে তলব করা হয়।বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিউ মিন্ট থানকে ডেকে এনে ঘটনার তীব প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ এবং নিহত বিজিবি সদস্যের লাশ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

গত বুধবার সকালে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিজিবির সদস্যরা টহল দেওয়ার সময় সীমান্তের ওপার থেকে বিনা উসকানিতে গুলিবর্ষণ শুরু করেন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা। ওই গোলাগুলির পর থেকে বিজিবির নায়েক মিজানুর রহমান নিখোঁজ রয়েছেন।

মিজানুরের নিহত হওয়ার তথ্য মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) দেশটির স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর লাশ বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেয়নি মিয়ানমার।

বিজিবির ওই সদস্যকে আটক ও সীমান্তে নির্বিচারে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মিউ মিন্ট থানকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।

ওই দিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মুস্তাফা কামাল মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তাঁর দপ্তরে ডেকে পাঠান। তিনি অবিলম্বে বিজিবির নায়েক মো. মিজানুর রহমানের মুক্তির দাবি জানান।তিনি এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এ ধরনের তত্পরতা রোধে বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান এ সময় সচিবকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি মিয়ানমারের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।