Toba-group20140802151417

দৈনিক বার্তা- ঢাকা,৬আগষ্ট : বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি৷ বুধবার বিকেলে তোবা কারখানার সাতলায় অনশনরত শ্রমিকরা এ ঘোষণা দেন৷ তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম  কমিটির নেত্রী জলি তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷বুধবার বেলা সোয়া ৩টায় বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় অনশনরত শ্রমিকরা মাইকে এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন৷  রাজধানীর উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেট থেকে তোবার শ্রমিকেরা বের হতে শুরু করেছেন৷ বুধবার বেলা তিনটার দিক থেকে বিচ্ছিন্নভাবে এক-দুজন করে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা বের হতে শুরু করেন৷ বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন বের হয়েছেন৷ তবে যাঁরা বের হচ্ছেন  পুলিশ আর তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না৷এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি৷ প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে৷  এসময় শ্রমিকরা বলেন,পুলিশ, ছাত্রলীগ, বিজিএমইএ এবং সরকারের দালালরা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন করছে৷ এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারাদেশের সকল শিল্প-কারখানায় সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘট পালন করা হবে৷

এর আগে পৌনে ৩টার দিকে মার্কেটের সামনে থেকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ৷ এছাড়া অনশনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন ও বুধবারের মধ্যে বেতন- বোনাসসহ সকল পাওনা পরিশোধের কথা থাকলেও  তা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা এই ধর্মঘটের ঘোষণা দেন৷প্রসঙ্গত, বেতন-বোনাসের দাবিতে ২৮ জুলাই থেকে রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় তোবা গ্রুপের ভেতরে শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন৷ তোবা গ্রুপের ৫টি কারখানার ১৬শ’ শ্রমিক এই  অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন৷  তোবা শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনরত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঢুকে পড়ে বাড্ডার হোসেন মার্কেটে৷একইভাবে অনশনস্থলে থাকা চিকিত্‍সকদেরও বের করে দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু  বলেছেন, পুলিশ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য স্যালাইন নিতেও বাধা দিচ্ছে৷গত ২৮ জুলাই থেকে তোবাকর্মীদের সঙ্গে অনশন চালিয়ে আসা মিশু এখনো হোসেন মার্কেটের সপ্তম তলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আছেন৷  তিনি বলেন,আমাদের জোর করে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে৷এখানে দুইশর বেশি শ্রমিক অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ তাদের জন্য ডাক্তার বা স্যালাইন আনতে দেয়া হচ্ছে না৷

কয়েকটি সংগঠন আংশিক বেতন নেয়ার জন্য তোবাকর্মীদের জোর করে বিজিএমইএ ভবনে নিয়ে যেতে চাইছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন৷তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তারা পরিচয়পত্র দেখে কেবল বহিরাগতদেরই বের করে দিচ্ছে৷  এদিকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিজিএমইএ ভবনে তোবাকর্মীদের বকেয়া পরিশোধ শুরু হলেও শ্রমিকদের উপস্থিতি একেবারেই কম৷তিন মাসের বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে গত নয় দিন ধরে বাড্ডার হোসেন মার্কেটে কারখানা ভবনে অনশন চালিয়ে আসছেন  তোবা গ্রুপের পাঁচ কারখানার দেড় হাজারেরও বেশি শ্রমিক৷  সরকারের মধ্যস্থতায় বিজিএমইএ দুই মাসের বেতন দেয়ার জন্য রোববার দিন ঠিক করলেও তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটি৷ পোশাক শ্রমিকদের ১৫টি সংগঠন এই আন্দোলনে তোবা গ্রুপের অনশনরত শ্রমিকদের সঙ্গে রয়েছে৷বিজিএমইএ  ভবন থেকে আংশিক বেতন দেয়া নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই বুধবার সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ ভবন এবং বাড্ডায় তোবার গার্মেন্ট ভবন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷

সকাল ১০টার দিকে খবর পাওয়া যায়, হোসেন মার্কেটের নিচ তলায় চারটি প্রবেশ পথের সবগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে৷সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রধান ফটকে একটি নতুন তালা ঝুলছে৷নিচে দেখা যায় ভ্যান, জলকামান ও এপিসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক পুলিশ সদস্য৷  আর ওপরে রেলিং ধরে চিত্‍কার করে পুলিশকে দায়ী করছেন শ্রমিকরা৷  বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার টেলিফোনে বলেন, নিচতলায় আমাদের কয়েকজন শ্রমিক ছিলেন৷ তারা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা নতুন একটি তালা নিয়ে এসে প্রধান ফটকে লাগিয়ে দিয়েছে৷  শ্রমিকদের সঙ্গে অনশন চালিয়ে আসা গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, তিন তলায় জনতা ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে আমার কথা হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, তালা দেখে পরে তিনি পুলিশের সহায়তায় প্রবেশ করেছেন৷  এরপর বেলা ১২টার দিকে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং বিজিএমইএ ভবনে গিয়ে বেতন নেয়ার জন্য শ্রমিকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের ভ্যান থেকে মাইকিং শুরু হয়৷এর কিছুক্ষণ পর বহিরাগতদের বের করে দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাড্ডার হোসেন মার্কেটে  ঢোকে৷ ওই ভবনের সপ্তম তলায় দশ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন তোবাকর্মীরা৷ অসুস্থ হয়ে পড়া শ্রমিকদের সেখানেই চিকিত্‍সা দেয়া হচ্ছিল৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের এডিসি মাহাবুব হাসান বেলা ১২টার দিকে বলেন, আমরা খবর পেয়েছি অনেক শ্রমিক বেতন  নিতে বিজিএমইএতে যেতে চাইলেও যারা ওই কারখানার শ্রমিক নয় তারা বাধা দিচ্ছে৷

শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত তারাই নেবে৷ বাকিদের বের করে দেয়া হবে৷ আমরা আইডি কার্ড দেখব৷ যাদের আইডি কার্ড নেই, তাদের বের করে দেয়া হবে৷  এ সময় লাঠি হাতে হেলমেট মাথায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ওই ভবনের ভেতরে ঢোকেন, যাদের মধ্যে নারী পুলিশও ছিলেন৷এ সময় সাংবাদিকসহ সবাইকে ভবনে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় এবং প্রায় ২০-২৫ জনকে কারখানা ভবন থেকে বের করে দেয় পুলিশ৷ভবন থেকে বেরিয়ে এসে  গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা মঞ্জুর মইন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ তাকে জোর করে বের করে দিয়েছে৷  অসুস্থদের চিকিত্‍সা সেবা দিতে কারখানায় থাকা এক চিকিত্‍সককেও বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি৷দুজন অভিযোগ করেন, তারা তোবা গ্রুপের পরিচয়পত্র দেখানোর পরও পুলিশ নিচ তলা থেকে তাদের বের করে দেয়৷এ সময় তোবা গ্রুপের তায়েফ ডিজাইনের কর্মী  নুপূর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্ট্রেচারে করে বাইরে এনে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়৷

ওপরে পুলিশি অভিযানের মধ্যেই ভবনের বাইরে মিছিল করেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী এ সময় কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে কারখানা ভবনে ঢুকতে চাইলে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে তাদের বের করে  দেয়৷  ঠিক কতোজনকে বের করে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে একজন উপ পরিদর্শক বলেন, আমরা সংখ্যা গুণছি না৷ পরিচয়পত্র দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক মোশরেফা মিশুটেলিফোনেজানান,বেলা আড়াইটা পর্যন্ত পুলিশ চতুর্থ তলা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে  আন্দোলনকারীদের বের করে দিয়েছে৷বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল কয়েকজনকে নিয়ে সাত তলায় আমাদের এখানেও এসেছিলেন৷ যারা তোবার কর্মী নন, তাদের সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেছেন তিনি৷ আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদেরও তারা জোর করে বের করে দেবে৷