20130127-192317_22764দৈনিকবার্তা : আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ তৈরি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চূড়ান্ত করতে আজ দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। একইভাবে আগামীকাল ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করবেন জোটপ্রধান। ইতিমধ্যে বিভিন্নজনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে মতামত নিয়েছেন। তবে অক্টোবরে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের পর নভেম্বর থেকে সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বিএনপি জোটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, রমজানের পর কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হাঁকডাক দেওয়া হলেও আপাতত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। সরকার বাধ্য না করলে আগামী অক্টোবরে ঈদুল আজহা পর্যন্ত রাজপথের সাদামাটা কর্মসূচিতেই থাকবে দলটি। এর মধ্যে বিএনপি তার অঙ্গ সংগঠনগুলো গুছিয়ে ফেলবে।সূত্রমতে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে জোটগতভাবে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল, নৌ দুর্ঘটনা রোধসহ নতুন নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ মাসের শেষের দিকে ২০-দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে দেশব্যাপী সফরে বের হবে বিএনপি। জোটের সিনিয়র নেতারা এতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া জোটের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস দূর করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে বেগম জিয়ার কয়েকটি জনসভা করার আলোচনাও চলছে। অক্টোবরের শেষ দিকে রাজধানীতে জোটগতভাবে বড় ধরনের একটি মহাসমাবেশ করেই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হবে।আন্দোলন প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদের পর মানুষ ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। আপাতত সভা-সমাবেশের আন্দোলন কর্মসূচি আসবে। এসব বিষয়ে আগামীকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এর পরই কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। প্রায় একই বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। সোমবার ২০-দলীয় জোটের বৈঠক। এসব বৈঠকের পরই আন্দোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। পরে তা গণমাধ্যমকেও জানানো হবে।জানা গেছে, সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে চলতি মাসেই হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে বেগম জিয়াকে বিভিন্ন মহল পরামর্শ দিয়েছে। তবে বিএনপি-প্রধান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত কোনো হরতাল নয়। আগে দল গুছিয়ে শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। জোটের শরিকদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে। সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে আপাতত একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়ার কথাও সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। তবে জোটের চূড়ান্ত আন্দোলনে এসব বিষয় যুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, নভেম্বরে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, জাসাসসহ মেয়াদোত্তীর্ণ অন্য সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। অতীতে ব্যর্থ হওয়া ঢাকা মহানগরী বিএনপির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বেগম জিয়া। তার চিন্তা অনুযায়ী যথাশীঘ্রই মহানগরী বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিও ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া শক্তি সঞ্চয় করতে ঢাকা মহানগরী বিএনপি ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান’ও চালাবে। নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর দফায় দফায় বৈঠক করছে সংগঠনটি। গতকালও বৈঠক হয়েছে।জানা গেছে, আন্দোলনের জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে মাঠ পর্যায়ে সফর ও সভা-সমাবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি জোটের। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে নানাভাবে হয়রানি হওয়া নেতা-কর্মীরা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ও হতাশ। হামলা-মামলার ভয়ভীতি কাটিয়ে উঠতেই তৃণমূল সফরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ-অবিশ্বাস বিরাজ করছে। জোটের নীতিনির্ধারক পর্যায়েও দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বেগম জিয়া জোটগতভাবে সফর ও কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।