Rotation-5

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৬আগষ্ট : সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ব্লকগুলোয় বহুমাত্রিক জরিপ (মাল্টি প্ল্যান সার্ভে) চালাবে পেট্রোবাংলা৷এজন্য শিগগিরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হবে৷এতে ব্লকগুলোয় বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা৷নতুন করে ব্লক ইজারার দরপত্র আহ্বানের আগেই এসব কাজ করা হবে৷বিষয়টির অনুমোদন চেয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে পেট্রোবাংলা৷ একই সঙ্গে ব্লকগুলো পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে৷ 

এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, ব্লকগুলোয় এ ধরনের জরিপ করা হলে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো (আইওসি) ইজারা নিতে রাজি হবে৷ এ ধরনের সার্ভে করে আইওসির কাছে তথ্য-উপাত্ত বিক্রি করবে এমন আগ্রহী প্রতিষ্ঠান রয়েছে৷ এতে আমাদের খরচ করতে হবে না, বরং তথ্য-উপাত্ত বিক্রি থেকেই আমরা মুনাফা করতে পারব৷ উত্‍পাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) মাধ্যমে এসব কাজ করা হবে৷ অফ সিজনেও এ সার্ভে করা সম্ভব৷মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ যেসব ব্লকে ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তি ছিল এখন আর তা থাকছে না৷ ভারত-মিয়ানমার সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ শুরু করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে৷ অগভীর সমুদ্রের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাগুও বন্ধ হয়ে গেছে৷ 

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার জ্বালানি বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্লক পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ যেসব ব্লক এরই মধ্যে ইজারা দেয়া হয়েছে সে অংশ বাদ দিয়ে ব্লকগুলোর নতুন সীমানা নির্ধারণ হবে৷ এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব নাও হতে পারে৷ তবে এসব প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ 

সমপ্রতি মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর জ্বালানি সচিব আবুবকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ঠিক কতগুলো ব্লক হবে, তা নির্ধারণের পর দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ 

বৈঠকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷ তখন সমুদ্রের সম্পদ ও মোট সীমার ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করা হবে৷ ওই উপস্থাপনার একটি অংশে জ্বালানি বিভাগ গভীর ও অগভীর সমুদ্রে ব্লক নির্ধারণ এবং কী প্রক্রিয়ায় কাজ করা হবে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে৷জ্বালানি বিভাগ বলছে, মূলত নিজস্ব বিনিয়োগ, যৌথ অংশীদারিত্ব এবং বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ইজারা এ তিন প্রক্রিয়ায় সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চিন্তা করছে সরকার৷ 

এর আগের হিসাব অনুযায়ী সমুদ্রে বাংলাদেশের ৩০টি ব্লক ছিল৷তবে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধের পর ব্লকের সংখ্যা কমতে পারে৷ আবার কিছু কিছু ব্লকে ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাহার হওয়ায় ব্লকগুলোয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আর কোনো বাধা থাকছে না৷ 

পেট্রোবাংলা জানায়,এখন অগভীর সমুদ্রে এসএস-০১ ও এসএস-০৫ এবং গভীর সমুদ্রে ডিএস-০৯, ডিএস-১৪, ডিএস-১৫, ডিএস-১৯, ডিএস-২৪, ডিএস-২৫ নম্বর ব্লকে ভারত আমাদের কোনো বাধা দিতে পারবে না৷ বর্তমানে গভীর সমুদ্রে শুধু ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে কাজ করছে কনোকোফিলিপস৷ প্রতিষ্ঠানটি সাত নম্বর ব্লকের জন্য পিএসসি করার কথা বলেও পরে সরে আসে৷ তবে এ দুই ব্লকে অনুসন্ধান চালাতে চুক্তির অতিরিক্ত দাম (গ্যাসের) দাবি করছে কোম্পানিটি৷ এ নিয়ে সরকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে৷ তবে এরই মধ্যে পিএসসি সংশোধনের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে৷ 

বিডিং রাউন্ড ২০০৮-এর পর বঙ্গোপসাগরের গভীর ও অগভীর অংশের মোট ১২টি ব্লকের জন্য বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০১২ আহ্বান করা হয়৷ এর মধ্যে গভীর সমুদ্রের তিনটি ব্লকের জন্য কোনো আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) দরপত্র দাখিল করেনি৷ শুধু অগভীর সাগরের নয়টি ব্লকের জন্য দর প্রস্তাব জমা পড়ে৷ প্রাথমিক বাছাইয়ে সাত নম্বর ব্লকে কনোকো এবং ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে ওএনজিসিকে নির্বাচিত করা হয়৷ এরপর অগভীর সাগরের ছয়টি ব্লকের জন্য আবারো দরপত্র আহ্বান করা হয়৷ এর মধ্যে শুধু ১১ নম্বর ব্লকে সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি যৌথভাবে দর প্রস্তাব দাখিল করে৷ এদের মধ্যে কনোকোফিলিপস ছাড়া বাকিরা পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করেছে৷