Fokrul Islamদৈনিকবার্তা-২৩ আগস্ট: নিজস্ব সংবাদদাতা: সরকার বিএনপিকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷আওয়ামী লীগের মন-মানসিকতার কারণেই দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ৷

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন৷ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দির ৫০০ দিন উপলক্ষে দৈনিক আমার দেশ পরিবার এ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে৷মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ দেশের মানুষ একসময় আপনাদের নেতাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ভালোবেসেছিল, অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল৷ কিন্তু কী এমন ঘটলো যে সে অবস্থার পরিবর্তন হলো৷ কী এমন ঘটলো যে এদেশের মানুষ এখন আপনাদের সহ্য করতে পারছে না৷ এর মূল কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের মন-মানসিকতা৷

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সময় মনে করে, তারাই সব৷ তাদের সমকক্ষ আর কেউ নেই৷ তাদের সমালোচনা করার মতো কেউ নেই৷ দেশের সব মানুষ তাদের বশ্যতা ও অধীনতা স্বীকার করে নেবে৷ তারাই সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে- এ মন-মানসিকতার কারণেই দেশ আজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনাদের নেতার মৃতু্যর পর যারা তার লাশ বঙ্গোসাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, যারা আপনাদের নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আজ বিরোধী দলীয় জোটকে নির্মূলের চেষ্টা করছেন৷ এর পরিণতি ভালো হবে না৷

বিরোধী দলের নেতাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই ২১ আগস্ট বোমা হামলার দায় তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব৷তিনি বলেন, একবার নয়, দুই বার নয়, পাঁচ পাঁচ বার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় জড়ানো হয়েছে৷ তাদের একটিই উদ্দেশ্য, বিরোধী দলের নেতাদের নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখা৷

নেতাকর্মীদের কথা কম বলার পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, কথা কম বলে এখন আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷ এছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই৷তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে৷ দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একের এক মামলা দেওয়া হয়েছে৷ এখন ২১ অগাস্টেও গ্রেনেড হত্যামামলায়ও জড়াচ্ছে৷ এসবের উদ্দেশ্য একটাই- বিএনপিকে রাজনীতি তথা নির্বাচন থেকে দূরে রাখা৷ যাতে তারা নির্বাচনে আসতে না পারে৷সরকারের দমননীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে বিরোধী দলের কথা বলার অধিকার হরণ করছে৷ আমরা রাজপথে প্রতিবাদ করবো, সেই অধিকারও আজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ ঘরোয়া আলোচনা করতে গেলেও এখন অনুমতির প্রয়োজন হয়৷ কেবল তাই নয়, সমপ্রচার নীতিমালার করে সরকার গণমাধ্যমের অধিকারও হরণ করতে চলেছে৷

বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সরকার সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ কোন সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে, যে সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না৷বিচার বিভাগ ছাড়াও গোটা প্রশাসনকে সরকার দলীয়করণ করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মুখপাত্র৷

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘটনার সময়েও আমরা এর নিন্দা জানিয়েছি, এখনো নিন্দা জানাই৷ সরকার প্রধান সমপ্রতি বলেছে, ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে নাকি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ তত্কালীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা জড়িত!জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকার তারেক রহমানকে ওই মামলায় জড়াচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি৷

আওয়ামী লীগের আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে দাবি করে ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নয়; একে সমর্থনও করে না৷ আওয়ামী লীগের আমলে এই জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে৷ আমরা ক্ষমতায় এসে তা নির্মূলে ব্যবস্থা নিয়েছি৷আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমানকে সাহসী ব্যক্তি অভিহিত করে তার ওপর সরকারের নির্মম নির্যাতনের সমালোচনা করেন ফখরুল৷তিনি বলেন, এই অবৈধ ও দানব সরকারের কাছে তার মুক্তি চেয়ে লাভ নেই৷ তাদের পতন ঘটিয়ে মাহমুদুর রহমানকে মুক্ত করতে হবে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ফরহাদ মজহার, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সদরুল আমিন ও আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য রাখেন৷আমার দেশের জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন৷