38110_f7দৈনিকবার্তা-২৪,আগস্ট:নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শূন্য ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি (প্রতীক সিংহ)। তিনি পেয়েছেন ৫২৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক (প্রতীক আপেল) ইকবাল হোসেন পেয়েছেন ১৯৫৮ ভোট। নির্বাচনে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুম রানা (প্রতীক পদ্মফুল) পেয়েছেন ৬৮৭ ভোট। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন১৬ হাজার ৭২৯। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৭৭৭৫। বাতিল হয়েছে ৪৪ ভোট। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ হয়। পরে বিকাল সোয়া ৫টায় বেসরকারি ভোটের ফলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিংহ প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। পরে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ প্রতীক আর চাননি অন্য দু’জন প্রার্থী।
এদিকে ফল ঘোষণার পর এলাকাবাসী সেলিনা ইসলাম বিউটির পক্ষে বিজয় মিছিল বের করে। মিছিল শেষে নিহত নজরুলের কবর জিয়ারত করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। এ সময় সেলিনা ইসলাম বিউটি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এলাকাবাসী নজরুলকে ভোট দিয়েছেন। আমি নজরুলের আদর্শ অনুসরণ করে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাসহ এলাকার উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। এ সময় তাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করায় এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মিজমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও মিজমিজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি বিদ্যালয় পাশাপাশি হওয়ায় সেখানে ৬টি কেন্দ্র এবং মিজমিজি কান্দাপাড়া রহিম মার্কেট এলাকায় আনন্দলোক উচ্চবিদ্যালয়ে ২টি কেন্দ্রে মোট ৫০টি বুথে ভোটাররা ভোট দেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিপুল সংখ্যক আনসার, পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন ছিল। তবে বিজিবি কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করলেও কেন্দ্রের ভেতর র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তারা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করেন। এদিকে সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার পর কমতে থাকে। ওই সময় ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে বেলা ২টার পর কিছুটা ভোটার বাড়তে থাকে।
মফিজ উদ্দিন (৮১) তার ছেলে নাসির উদ্দিনের কাঁধে চড়ে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। প্রতিবন্ধী মো. বাবুল ট্রলিতে চড়ে একই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। এ সময় মহিলা ও বয়স্ক ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে গেছেন। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মিজমিজি পশ্চিমপাড়া কেন্দ্রে সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোন অনিয়ম বা জাল ভোটের সুযোগ নেই। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সব বিভাগের পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বেলা দেড়টার দিকে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা। সাংবাদিকদের তিনি জানান, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। নির্বাচনে কোন অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়া হবে না। কোন প্রার্থীই জালভোট দেয়ার অভিযোগ করেননি। তিনি আরও জানান, ৮টি কেন্দ্রেই শতভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রের বাইরেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কোন প্রার্থীই নির্বচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। এ সময় কাউন্সিলর প্রার্থী সেলিনা ইসলাম বিউটি নির্বাচনের ফল ঘোষণার বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জিজ্ঞেস করলে জেলা প্রশাসক জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গণনা শেষে ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করে ভোট কেন্দ্র পরিত্যাগ করবেন। তবে সার্বক্ষণিক ভোট কেন্দ্র মনিটরিং করেন রিটার্নিং অফিসার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান। ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি, পাইনাদী, মৌচাক, নতুন মহল্লা, আবদুল আলী পুল, হীরাঝিল, মুজিববাগ, মিতালী মার্কেট এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড গঠিত। এ ওয়ার্ডে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৭২৯। এর মধ্যে পুরুষ ৮৫১৬ এবং মহিলা ৮২১৩। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিন প্রার্থী। তারা হলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি (সিংহ), সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন (আপেল) ও মাসুদ রানা (পদ্মফুল)।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালেরর ৩০শে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম। পরে কাউন্সিলরদের ভোটে ২নং প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন। গত ২৭শে এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি মামলায় নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নজরুল ইসলাম তার ৪ সহযোগীসহ অপহৃত হন। একই সময় একই স্থান থেকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক অপহৃত হন। ৩০শে এপ্রিল ৬ জন ও ১লা মে একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে জেলা নির্বাচন কমিশনার নজরুল ইসলামের শূন্য হওয়া পদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন ২১শে আগস্ট। পরে ২ দিন পিছিয়ে ২৩শে আগস্ট নির্ধারণ করা হয়।