123_120972দৈনিকবার্তা,২৫ আগস্ট:তিন মেয়েকে নিয়ে বাবা রুহুল আমিনের বেজায় গর্ব। হওয়ারই কথা। দরিদ্রতার মধ্যেও তিন মেয়েই যে একের পর এক সাফল্য অর্জন করছে! মেয়েদের পড়ালেখায় এমন সাফল্যে রুহুল আমিনের অনেক বড় স্বপ্ন, আশা। তাঁর স্বপ্ন-আশার অনেকটা পূরণও হয়েছে। কিন্তু বাকিটায় বাদ সেধেছে সেই দারিদ্র্য।রুহুল আমিন লৌহজং উপজেলা সদরে থানার গেটে ছোট্ট একটি দোকানে চা-পান বিক্রি করেন। স্ত্রী তাসলিমা বেগম গৃহিণী। চার মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। সংসারে উপার্জনক্ষম লোক বলতে রুহুলই। তাঁর এই স্বল্প আয়ে সংসার কোনোরকমে চললেও মেয়েদের পড়াশোনা চালানোটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।বড় মেয়ে রুবি পড়াশোনা করেন লৌহজং কলেজে। ২০১০ সালে ওই কলেজের বাণিজ্য বিভাগ থেকে রুবি এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পান। এরপর ব্র্যাকের সহযোগিতায় তিনি ভারতের হায়দরাবাদে তিন বছর পড়াশোনা করেন। রুবি বর্তমানে ঢাকায় বিবিএ করছেন। মেজ মেয়ে মেরিন আক্তার ২০১২ সালে লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এবার (২০১৪) একই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে ছোট মেয়ে মুন্নী আক্তার। রুহুল আমিনের স্বপ্ন মুন্নিকে তিনি ডাক্তার বানাবেন। কিন্তু সাধ আছে তো সাধ্য নেই। দারিদ্র্য যে তাঁর পিছু ছাড়ছে না।রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার তিন মেয়েকে এই পর্যন্ত আনার পেছনে আমার আত্মীয়স্বজন, ব্র্যাক ও শিক্ষকদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। স্বপ্ন আছে ছোট মেয়েটিকে ডাক্তারি পড়াবার। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই আমার। ছোট্ট চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয়, তা প্রায় সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যায়। মেয়েরা এখন ওপরের ক্লাসে উঠেছে, বড় হয়েছে, তাদের পেছনেও খরচ করতে হয়। আমার মেয়েদের পড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ। ওদের চেষ্টায়ই ওরা বারবার সাফল্য অর্জন করছে। আমার টাকা থাকলে আমি ছোট মেয়েটিকে ডাক্তারি পড়াতাম সমাজের সেবা করতে। কিন্তু মনে হয় আমার সে আশা পূরণ হবে না।’রুবি, মেরিন ও মুন্নি জিপিএ ৫ পেয়ে হাসি ফুটিয়েছেন মা-বাবার মুখে। এই তিন মেয়ের মেধা, সাফল্য বরাবর তাক লাগিয়ে দিয়েছে আশপাশের অন্যদেরও। সময় ও চাহিদামতো বই, পোশাক পাননি তাঁরা। তবুও দমে যাননি। হার মানেননি দারিদ্র্যের কাছে। কিন্তু এখন অর্থাভাবে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয়ে পড়েছে রুহুল আমিনের পরিবার।