jituদৈনিকবার্তা,২৫ আগস্ট: ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ ঈদের পর প্রায় একমাস হতে চলেছে এখনও এই সংক্রানত্ম কোন কর্মসূচি দিতে পারেননি৷ তিনি কবে নাগাদ সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারবেন তাও জানেন না৷ কারণ তার দল ও জোট এখনি সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়৷ ডাক দিলেও মাঠের চলমান অবস্থায় আন্দোলন সফল হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ তারা এবার সফল আন্দোলন করতে চান বলেই আরো প্রস্তুতির দরকার৷
সূত্র জানায়, এই প্রস্তুতি না থাকার কারণে আপাতত সরকার পতনের আন্দোলন থেকে পিছু হঁটছে বিএনপি৷ আগামী এক দুই মাসের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই আন্দোলনে নামতে চাইছে৷ টার্গেট নভেম্বর৷ এর আগের দুই মাস দল গোছানো ছাড়াও এই সময়ে বিভিন্ন ইসু্য ধরে সভা সমাবেশ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিভিন্ন জেলা সফরের মতো কর্মসূচি দিতে চাইছে৷ রাজপথে সরকারের বাঁধা ভেঙ্গে আন্দোলন করার নির্দেশনা তারেক রহমানের কাছ থেকেও আসেনি৷ তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা ছাড়াও দল গোছানোর উপর তাগিদ দিচ্ছেন৷
বিএনপির একটি বিশস্ত সূত্র জানায়, বিএনপি এখনও বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠন করতে পারেনি৷ ১৪ জেলায় কমিটি করা হলেও সেখানে অভ্যনত্মরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে৷ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক নেতাই জেলায় যেতে পারছেন না৷ ইতোমধ্যে শমমের মুবীন চৌধুরী, এম কে আনোয়ারও এলাকায় বাঁধাগ্রস্ত হয়েছেন৷ বাঁধার মুখে বিভিন্ন জেলার কমিটিও গঠন করতে পারছেন না দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা৷ অন্য দিকে ঢাকা মহানগরের কমিটি করার জন্য আহ্বায়ক কমিটি করে দিলেও তারা বেশিদূর কাজ এগুতে পারেননি৷ সময় ইতোমধ্যে এক মাস চলে গেছে৷ হাতে সময় আছে আর এক মাস৷ এই সময়ের মধ্যে কমিটি করতে হবে,নতুন করে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে হবে৷ এর কোনটি এখনও বিএনপি করতে পারেনি৷ সূত্র জানায়, আন্দোলন ডাকলেই হবে না৷ জামায়াতের সহযোগিতা লাগবে৷ বিএনপির জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্বও তৈরি হয়েছে৷ বিএনপি কর্মসূচি দিলেই তারা সফল করার জন্য এখন ঝাঁপিয়ে পড়বে না৷ তারা তাদের নেতাদের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন৷ এই অবস্থায় বিএনপির সামনে এখন কঠিন পরীৰা৷
বিএনপি জোটের একাধিক নেতা বলেছেন, তারা এখনও জানেন না আগামি দিনের আন্দোলন কেমন করে হবে৷ এখনও কোন পরিকল্পনা চূড়ানত্ম করা হয়নি৷ তবে যতখানি জানানো হয়েছে এখন সাধারণ কর্মসূচি দিয়ে চালানো হবে৷ সরকার পতনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে আরো প্রস্তুতির পর৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট এক নেতা বলেন, বিএনপির জন্য এখন বড় দরকার হচ্ছে ঢাকায় ১০০ ওয়ার্ড সহ সব থানার কমিটি করা, জেলা পর্যায়ে যে কমিটিগুলো করা হয়নি তা করা, দলের অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো করা, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষক দল ছাড়া অন্যান্য যে সব অঙ্গসংগঠন রয়েছে সেগুলোকে শক্তিশালী করা৷
ঢাকার বিভিন্ন থানায় বিএনপি কমিটি গঠন করতে পারছেন না৷ ইতোমধ্যে চার থানায় নেতারা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছেন৷ তাই নয় কমিটি গঠন করার দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা তোপের মুখে পড়ছেন৷ এই অবস্থায় ঢাকায় ঝুলে গেছে ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ৷ এদিকে ২১ আগষ্ট থেকে দেশব্যাপী তৃণমূলে জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷ ৩১ আগষ্ট পর্যনত্ম চলবে৷ এই কমর্ূসূচিতে দক্ষিণের কয়েকটি জেলা ছাড়া বেশিরভাগ জেলায় ভাল সাড়া মিলছে না৷ অনেক জেলার নেতা মাঠের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না৷
মহানগর কমিটির একজন নেতা বলেন, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন শেষ না হওয়ায় হতাশ হতে রাজি নন৷ তারা মনে করছেন, আগামী একমাসেই সব কমিটি করে ফেলবেন৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন নেতা থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করছেন৷
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, ১৪ জেলায় কমিটি করা হলেও বাকিগুলোতে হয়নি৷ এই কারণে অন্যান্য জেলায় কোন কোন নেতার মধ্যে হতাশা থাকতে পারে৷ সেগুলো কেটে যাবে৷ জেলা ছাড়াও যুবদল, ছাত্রদলের কমিটি করার জন্য সময় নেয়া হচ্ছে৷ ছাত্রদলের কমিটি করার জন্য দুই দফা বৈঠক হয়েছে৷ যুবদলের কমিটির আহ্বায়ক ঠিক করা হয়েছে৷ সদস্য সচিব কে হবেন তা ঠিক হয়নি৷ এটা না হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে৷ তবে হয়ে যাবে৷
বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, এখন সরকার পতন ঘটানোর মতো আন্দোলনের প্রস্তুতি শেষ হয়নি৷ এটা করতে সময় লাগবে৷ এই জন্য আপাতত কঠোর কর্মসূচি আসছে না৷ অক্টোবরের পর কিছুটা কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে৷ তাও ঠিক হবে ঈদ উল আযহার পর৷
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বেশিরভাগ মাঠে নেই৷ তারপরও তারা মনে করছেন, দল গোছানোর কাজ শেষ করতে না পারলেও আন্দোলনে সমস্যা হবে না৷ জোট নেত্রী ও দলের প্রধান আন্দোলন কর্মসূচি দিলে সবাই একযোগে মাঠে নামবে৷ এছাড়াও আগামী মাসেই দল গোছানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে৷
জোটের নেতা এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, আমরা আন্দোলনে যাবো৷ আন্দোলনের প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি৷ তাই কি কি কর্মসূচি থাকবে তা বলতে পারছি না৷ তবে কর্মসূচি কঠোর হবে৷ আমরা আশাবাদী৷ আলো দেখতে পাচ্ছি৷
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আমরা অন্দোলনে যাবো৷ এখন সময় বলতে পারবো না৷ তবে কঠোর আন্দোলনের আগে সংলাপ করে সমঝোতা হলে ভাল হতো৷ এটা সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ আমরা সেই জন্য অপেক্ষা করছি৷ সরকার সমঝোতা না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো৷