untitled-47_81907_0দৈনিকবার্তা,২৭আগস্ট: মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান দেশে এনে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন কক্সবাজারের আবদুল্লাহ জুবায়ের। ইয়াবা বিক্রির টাকায় রাজধানীর গুলশানের মতো এলাকায় কিনেছেন দুটি ফ্ল্যাট। কিনেছেন পাজেরো গাড়িও। তবে আর মিয়ানমার নয়, এবার দেশেই ইয়াবার কারখানা দিতে চেয়েছিলেন জুবায়ের। এজন্য মিয়ানমার থেকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ইয়াবা তৈরির মেশিনও আমদানি করেছিলেন। সেই মেশিনে ঘণ্টায় আড়াই হাজার ইয়াবা উৎপাদন করা সম্ভব ছিল বলে জানিয়েছেন জুবায়ের। তবে তার আগেই গত রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা আর ইয়াবা তৈরির মেশিনসহ জুবায়েরকে গ্রেফতার করলে তার সেই স্বপ্ন ভেস্তে যায়।জুবায়েরের মেশিনে ঘণ্টায় আড়াই হাজার ইয়াবা!
জুবায়ের ও তার তিন সহযোগী গোয়েন্দা পুলিশের কাছে সাত দিনের হেফাজতে রয়েছেন। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন দেশে ইয়াবা কারখানাতৈরির আদ্যোপান্ত।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জুবায়ের জানিয়েছেন, তার জন্ম বাংলাদেশের কক্সবাজারে হলেও মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নেন। দেশে আগে বিয়ে করলেও মিয়ানমারে সেখানকার এক নারীকে বিয়েও করেন। এর নেপথ্যে ছিল ইয়াবা তৈরির কলাকৌশল আয়ত্ত করা। গত চার বছর ধরে তিনি মিয়ানমারে ইয়াবা তৈরির ফর্মুলা শেখার পাশাপাশি দেশেও ইয়াবা পাচার করছিলেন।
জুবায়ের জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বৈধপথেই তিনি ইয়াবা তৈরির মেশিনটি আমদানি করেন। ওই সময় মেশিন সম্পর্কে তিনি অন্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমদানির পর সেটি চট্টগ্রামের একটি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপনও করা হয়েছিল। তখন ঘণ্টায় দেড় হাজার ইয়াবা উৎপাদন করা হতো ওই মেশিনে। তবে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ইয়াবা বহনে ঝুঁকি থাকায় ঢাকাতেই ইয়াবা কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে তা থেকে ঘণ্টায় আড়াই হাজার ইয়াবা উৎপাদন করা সম্ভব হতো।
দেশে ইয়াবা তৈরির কারখানা দেওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জুবায়ের জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আমদানিতে খরচ বেশি পড়ে। নানা মাধ্যমে টাকা দিতে হয়। ঝুঁকিও থেকে যায়। তবে নিজে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার জন্যই ইয়াবা কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এর আগে মিয়ানমার থেকে দেশে প্রতি মাসে অন্তত চারটি চালান আনা হতো বলেও গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেন জুবায়ের। একটি ইয়াবায় তার ৫০ টাকা করে লাভ থাকত।
জুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জুবায়ের নিকেতনের একটি ফ্ল্যাটে অথবা বনশ্রীর একটি বাসায় ইয়াবা তৈরির মেশিনটি স্থাপনের চেষ্টা করছিল। এ ছাড়া ছয় মাস আগে মুরাদ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে পাজেরো গাড়িটি কেনা হয়েছে বলে জুবায়ের জানিয়েছে। ওই গাড়িটি একজন সংসদ সদস্যের ছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর দৈনিকবার্তাকে বলেন, জুবায়ের দেশে ইয়াবা তৈরির কারখানা স্থাপনের চেষ্টা করছিল। তবে তার মেশিনপত্র, পাজেরো গাড়িসহ সবকিছু জব্দ করা হয়েছে। দেশে ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল কোথায় পেত সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জুবায়ের মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে যে চক্রগুলোর কাছে সরবরাহ করত, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।