CPB

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,০৪ সেপ্টেম্বর: পল্টনে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় পাঁচজন নিহতের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা (হুজি) মুফতি হান্নানসহ ১৩ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত৷ঢাকার মহানগর বিশেষ ট্রাইবু্যনাল-৪ এর বিচারক ইমরুল কায়েস বৃহস্পতিবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২৩ অক্টোবর দিন রাখেন৷ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গত ২১ অগাস্ট এই ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে একই আদালত৷

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং পরে একজন হাসপাতালে মারা যান৷ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার ১৩ বছর পর গত বছর ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন৷

বৃহস্পতিবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবু্যনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে বিষ্ফোরক আইনের ৩ ধারার সঙ্গে অতিরিক্ত ৬ ধারা সংযোজনের আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া৷তিনি জানান, আগে এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে বিষ্ফোরক আইনে শুধুমাত্র ৪ ধারায় চার্জ গঠিত হয়েছিল৷ বৃহ্স্পতিবার ওই ধারার সঙ্গে ৬ ধারা সংযোজনের আবেদন জানাই৷ শুনানি শেষে বিচারক আগামি ১৪ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন৷

মামলার ১৪ আসামির মধ্যে ৯ জন মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা আব্দুর রউফ, মওলানা সাবি্বর ওরফে আব্দুল হান্নান সাবি্বর, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া ও মওলানা আকবর হোসাইন কারাগারে আটক৷ তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়৷_-------------------------_83706_0

বাকি ৫ জন আসামি মওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই পলাতক আছেন৷

রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ইতিহাসের বর্বরোচিত বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি পৃথক মামলা হয়৷ এর আগে গত ২৩ জুন এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায়ে মুফতি হান্নানসহ ৮ জনের ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন একই আদালত৷

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- মুফতি হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মওলানা আকবর হোসাইন, মওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই৷

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা আব্দুর রউফ, মওলানা সাবি্বর ওরফে আব্দুল হান্নান সাবি্বর, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া৷

মৃতু্যদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে৷ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত৷২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলে ৯ জন এবং পরে হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় একজন মারা যান৷ আহত হন অনেকে৷

নৃশংসতম এ বোমা হামলা মামলাটির তদন্তে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করা হয়৷ বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়৷ বিপাকে পড়ে তদন্তকাজ৷অবশেষে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঘটনার প্রায় ৮ বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)৷

বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ,চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনখোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তি৷