Ec-logo

দৈনিকবার্তা-ঢাকা: নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন, সংশোধন, হারানো পরিচয়পত্র নতুন করে ওঠানো, স্থানানত্মর ইত্যাদি কাজে পদে পদে ভোগানত্মির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলা, পদ্ধতিগত ত্রম্নটিই এসব ভোগানত্মির কারণ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের৷

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ৭ম তলায় গত বুধবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয়পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রকল্পের দফতরের সামনে দেশের বিভিন্ন প্রানত্ম থেকে আসা কয়েকশ লোকের ভিড়৷ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে অথবা হারিয়ে ফেলায় নতুন পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে তারা এসেছেন৷ কেউ কেউ এসেছেন স্থানানত্মরিত ঠিকানায় নতুন ভোটার হতে৷ তবে বেশিরভাগ ৰেত্রেই তারা ভোগানত্মির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন৷

ভুক্তভোগীরা জানান, দেশের বিভিন্ন প্রানত্ম থেকে প্রতিদিন জরম্নরি প্রয়োজনে প্রথমেই আসেন ঢাকার নির্বাচন কমিশন অফিসে৷ এনআইডি অনুবিভাগ কোথায়, তা জানতেই তাদের সময় লেগে যায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা৷ তারপর খুঁজে বের করেন আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবন৷ সেখানে পেঁৗছাতেই শেষ হয় দিনের বেশিরভাগ সময়৷ এনআইডি অনুবিভাগের খোঁজ মিললেও কোনো ধরনের সমস্যার জন্য করণীয় কী, তা জানতে লেগে যায়

আরো একদিন৷ একটি তথ্যকেন্দ্র থাকলেও সেখানে যথাযথ সহায়তা করা হয় না৷ বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিয়ে করণীয় জানা হলেও পড়তে হয় প্রক্রিয়াগত ঝামেলায়৷ তখন তদনত্মের নামে শুরম্ন হয় কালক্ষেপণ৷ ফলে সাধারণ নাগরিকদের ভোগানত্মির কোনো সীমা থাকে না৷

ভোটার তালিকা বিধিমালা অনুযায়ী, স্থানানত্মর হতে চাইলে কোনো নাগরিককে যে উপজেলায় স্থানানত্মর হতে চান, সে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে৷ আর সংশোধনের জন্য তিনি যে উপজেলার ভোটার, সেই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে৷ সংশিস্নষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা সংশোধন বা স্থানানত্মরের কারণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হলে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেন৷ কিন্তু বাসত্মবে এসবের কিছুই হয় না৷ ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা থেকে অনুমোদন দিয়ে আবেদনপত্র এনআইডি শাখায় পাঠালে তা মাসের পর মাস আটকে থাকে৷ তখন বাধ্য হয়ে গ্রাম থেকে সেবাগ্রহীতাকে ঢাকাতেই আসতে হয়৷ এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা কর্মকর্তারা এখন আর কোনো সমস্যা সমাধানের অনুমোদন দেন না৷ এদিকে উপজেলায় সমাধান না পেয়ে কেউ এনআইডিতে আসলে তাকে আবার সংশিস্নষ্ট উপজেলাতেই যেতে বলা হয়৷ এমন পরিস্থিতিতে বিভ্রানত্ম আর অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ৷ অনেকেই বিরক্ত হয়ে পরিচয়পত্রের আশাই ছেড়ে দেন৷ তবে যাদের জরম্নরি ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন পড়ে, তারা তদবির সুপারিশের মাধ্যমে কাজ উদ্ধার করে নেন৷ এ বিষয়ে ইসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মূলত উপজেলা কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতা দেয়ায় নাখোশ হয়েছেন এনআইডি শাখার কর্মকর্তারা৷ যে কারণে উপজেলা থেকে কোনো আবেদন আসলে তারা কাজ করতে চান না৷

লাইনে দাঁড়ানো আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, ২০০৮ সালে ভোটার হয়েছেন তিনি৷ কিন্তু সময় মতো জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারেননি৷ সম্প্রতি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির জন্য জরম্নরি ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়ে পড়ে তার৷ এজন্য তিনি গত কয়েকদিন ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনে এসে তা ওঠানোর জন্য চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু কোথায় গেলে তা পাওয়া যাবে সেই তথ্যটিই পাওয়া যাচ্ছে না৷ তিনি জানান, ৪ দিন এখানে আসলাম৷ কিন্তু কেউ কোনো সঠিক তথ্য দিচ্ছে না৷ এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য এক মাস থেকে এক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অন্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘুরছেন রফিকুল ইসলাম৷ ২০০৮ সালে ভোটার হওয়ার সময় তার নাম ভুল করে লেখা হয়েছে রকিবুল ইসলাম৷ জরম্নরি ভিত্তিতে সংশোধন প্রয়োজন৷ আবেদনের সঙ্গে জন্ম সনদসহ সকল ধরনের প্রমাণপত্র জমা দিয়েছেন৷ এছাড়া তার আবেদন পত্রের শুনানিও হয়েছে৷ কিন্তু তদনত্মের জন্য স্থানীয় উপজেলায় তার আবেদন এক মাসের মধ্যেও পাঠানো হয়নি৷

পুরান ঢাকার গে-ারিয়া থেকে এসেছেন এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি৷ তিন মাস আগে তার জাতীয় পরিচয়পত্রটি হারিয়ে গেছে৷ এরপরে সেটি সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে আসলে সেখান থেকে তাকে থানায় জিডি করতে বলা হয়৷ পরে তিনি থানায় জিডি করে তার কপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে আসেন৷ জিডির কপি নিয়ে পরপর তিনদিন আসলেও এখন পর্যনত্ম কোনো সুরাহা হচ্ছে না৷ তার অভিযোগ কাজ ফেলে এভাবে আর কতোদিন আসতে হবে৷ আর কবেই বা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যাবে৷ এভাবে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রানত্ম থেকে আসা অসংখ্য সাধারণ মানুষ হয়রানি হয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ এ বিষয়ে এনআইডি শাখার পরিচালক মহসীন আলী বলেন, আইন অনুযায়ী সব প্রমাণ দাখিল করলেই কেবল তা আমলে নেয়া হয়৷ অনেকে সঠিক কাগজ আনেন না বলে ভোগানত্মির অভিযোগ করেন৷ তাছাড়া যে কোনো অভিযোগ পাওয়ার পর তদনত্মের জন্য কিছু সময় লাগে৷ যাদের কাগজপত্র ঠিক থাকে তাদের কোনো ঝামেলা হয় না৷