অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৭ সেপ্টেম্বর: জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন (এমডিজি) লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল হয়েছে৷ মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অব্দুল মুহিত৷

রোববার সকালে  লক্ষ্যসমূহ অর্নগরীর পরিকল্পনা কমিশনে এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে ‘উন্নয়নজন: বাংলাদেশের অগ্রগতি ৭ম প্রতিবেদন-২০১৩’র সার সংক্ষেপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন৷ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি পলিন টমাসি প্রমুখ৷

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অব্দুল মুহিত বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন(এমডিজি) লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল হয়েছে৷ মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে৷অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ পরবর্তী ধাপে অর্থাত্‍ ২০১৫-২০৩০ সালের মধ্যে এমডিজি’র অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে সক্ষম হবে৷ এ লক্ষ্য পূরণে আমরা অনেক বেশি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং প্রস্তুত৷ আমরা জানি কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় এবং সকল বাধাসমূহ অতিক্রম করতে হয়৷ স্বল্প উন্নত দেশসমূহের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ সেগুলো অর্জন করবেই৷

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলে (এমডিজি) আমাদের অর্জন সন্তোষজনক৷ দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি৷ যেগুলো অর্জন করতে পারিনি সেগুলো এমডিজির পরবর্তী এজেন্ডায় যুক্ত হবে৷ আশা করছি ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের যে লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জন করতে পারব৷ বাংলাদেশ মানসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে এমডিজি ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে৷

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বলেন, এমডিজির অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের চেয়ে এগিয়ে রয়েছি৷ তারপরও দারিদ্র্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, যারা অতিদরিদ্র রয়েছে তাদের সেখান থেকে বের করে আনতে হবে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রত্যেক মানুষের ক্ষুধা দূর হবে৷ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন থামাসিস বলেন, বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে গোল মডেল৷ নীতিনির্ধারণসহ সাধারণ মানুষের জন্য এটি ভালো খবর৷ দারিদ্র্য নিরসন, প্রাথমিক শিক্ষা, মৃত্যুর হার কমানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়৷

প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, অর্থায়নের সমস্যা না থাকলে অনেক বেশি লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব ছিল৷ এমডিজি লক্ষ্য অর্জনে ফিসক্যাল পলিসি ও মনিটরিং পলিসি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে৷ তা ছাড়া রেমিটেন্সের ভূমিকা অনেক৷ কেননা বাংলাদেশ ব্যাংকে সাত মাসের সমান রিজার্ভ রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ভালো৷

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এমডিজিতে আমাদের যেসব অর্জন হয়েছে সেগুলো ধরে রাখতে হবে৷ অর্থের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এ সব অর্জন প্রশংসনীয় ও সরকারের অন্যতম সাফল্য৷

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ(এমডিজি) অর্জন: বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন- ২০১৩ পর্ালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ২৷ রোববার সকালে নগরীর পরিকল্পনা কমিশনে এনইসি-২ সম্মেলনকক্ষে উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন: বাংলাদেশের অগ্রগতি ৭ম প্রতিবেদন ২০১৩ সারসংক্ষেপ প্রকাশের সময় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের(জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম এ-তথ্য জানান৷

মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি বলেন,অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কারণে ১৯৯১-৯২ সালের ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷ বিগত দশক অপেক্ষা বর্তমান দশকে দারিদ্র্যের অধিক হ্রাস পেয়েছে৷ সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০০০-২০১০ মেয়াদে গড়ে প্রতিবছর দারিদ্র্যের হার কমেছে ১ দশমিক ৭৪৷ বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ২৷

জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অধিকাংশ পূরণ সম্ভব হলেও কিছু বিষয় নির্দিষ্ট সময়ে অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম৷

মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনের শেষে তিনি জানান বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও আগামী ৫শ’ দিনের কম সময়ে (২০১৫) কিছু অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হবে না৷ যার মধ্যে- কর্মক্ষম সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তিকৃত শতভাগ ছাত্র-ছাত্রীর পঞ্চম শ্রেণী অতিক্রম, ১৫-২৪ বছর বয়স সীমায় শতভাগ শিক্ষার হার অর্জন, ১৫ বছর ঊধের্্ব সকলের শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীতকরণ, অকৃষিখাতে মহিলাদের পঞ্চাশ শতাংশের অংশগ্রহণ ও বনজ এলাকা ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ যেখানে গাছের ঘনত্ব থাকবে ৭০ শতাংশ৷তিনি জানান, এসব অনর্জিত লক্ষ্যগুলো ২০১৫ উত্তর উন্নয়ন এজেন্ডায় অন্তর্ভূক্তকরণের প্রচেষ্টা নেবে বাংলাদেশ৷

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন: বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০১৩ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশ এরইমধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সফলতা পেয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে, দারিদ্র পরিমাণ ও গভীরতা কমানো, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জেন্ডার সমতা আনয়ন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃতু্যহার কমানো,এন্ট্রিরেট্রোভাইরাল ড্রাগ সহজলভ্যতা করার মাধ্যমে এইআইভি সংক্রমণ রোধ করা হয়েছে৷

ড. শামসুল আলম মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে তিনি আরো জানান, ৫ বছরী কম বয়সী শিশুদের কীটনাশক-চিকিত্‍সা মশারির নিচে ঘুমানো, ডটস এর মাধ্যমে যক্ষারোগ চিহ্নিতকরণ ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে৷অপরদিকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিশুদের অপর্যাপ্ত ওজনের প্রকোপ, শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হার, মাতৃমৃতু্য হার, শিশুদের টিকা দেওয়ার আওতা বৃদ্ধি এবং সংক্রাকমক রোগের বিস্তার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ৷

খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৯৯১-৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে দারিদ্র্য হার কমেছে ২ দশমিক ৪৭৷

প্রতিবেদন পর্যালোচনা কালে জানানো হয়, ২০১১-১৫ সালের মধ্যে এমডিজির সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের ৭৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউএস ডলার প্রয়োজন৷ সাধারণভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথাক্রমে ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন৷বাংলাদেশ গড়ে প্রতিবছর ১দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার ওডিএ(অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স)পেয়েছে৷ যা, কিনা উচ্চ প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় ৩ বিলিয়ন ইউএস ডলারে চেয়ে কম৷তবে এমডিজি লক্ষ্য অর্জনসহ নানা উন্নয়নে সহায়তার দিক দিয়ে জাপান শীর্ষ স্থানে রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়৷

উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের জাতিসংঘ বিশ্বসম্মেলনের ওপর ভিত্তি করে ২০০০ সালে জাতিসংঘ এমডিজি ঘোষণা দেয়৷১৮৯টি দেশ এ ঘোষণা বাস্তবায়নের সিদ্দান্ত নেয়৷বিশ্বব্যাপী এমজিজি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি(ইউএনডিপি)৷ আর বাংলাদেশে বিষয়টি দেখভাল করছে পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি৷