1b2e005661377080fa00b995c20c4f39-Untitled-3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, সেপ্টেম্বর ১০: সম্পর্কের ফাঁকি যেকোনো সময় প্রকাশ্যে চলে আসতে পারে। মডেল: আলভিন, চয়ন ও অর্পিতা।  রিমির বড় বোনের বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো। তাঁর স্বামী আসিফ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সাবলীল ও স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবহার আর দৃপ্ত ব্যক্তিত্বের জন্য বিয়ের পর থেকেই রিমিদের পরিবারের সবার কাছে আসিফ খুব প্রিয়। কিন্তু সংকটটা ঘটে তখনই, যখন রিমি টের পান আসিফ তাঁর প্রতি কেমন যেন বাড়তি মনোযোগ ও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই বিশেষ মনোযোগটির মধ্যে যে একধরনের প্রেমময় হাতছানি রয়েছে, সেটা ২৫ বছর বয়সী রিমি খুব সহজেই বুঝতে পারেন। বেশ সুদর্শন ও প্রাঞ্জল আসিফের তাঁর প্রতি এমন আকর্ষণ রিমির যে খুব খারাপ লাগে, তাও না। তবে তাঁর মন এটা ভালোভাবেই বোঝে যে তাঁর প্রতি বড় বোনের স্বামীর এ ধরনের আকর্ষণ কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু কীভাবে বিষয়টা মোকাবিলা করবেন, সেটা ভেবে ভীষণ ধন্দে থাকেন তিনি। আসিফের সঙ্গে কি সরাসরি বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেন? বড় বোন বা পরিবারের অন্য কাউকে কি জানাবেন? বোনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগটা কি আগের মতোই রাখবেন—নানা প্রশ্ন রিমির মনে।
রিমির এই সংকটের কথা শুনতে অস্বস্তিকর লাগলেও আমাদের সমাজে এমন ঘটনা চোখে পড়ে। শুধু বোনের স্বামীর ক্ষেত্রেই যে এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়, তা নয়। অনেক সময় বান্ধবীর স্বামী বা নিকটাত্মীয়দের সঙ্গেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি পারে। তবে যে সীমারেখাটা রিমি বুঝতে পেরেছেন, সেটা অনেক ক্ষেত্রে অনেক মেয়ে নাও বুঝতে পারেন। ফলে অনিবার্যভাবে জড়িয়ে পড়েন ত্রিভুজ সম্পর্কের জটিলতায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সম্পর্কগুলো কোনো পরিণতি না পেলেও জীবনের একটা দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ সময় এ ধরনের টানাপোড়নের সম্পর্কের জালে আটকে থাকে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক ছন্দপতন ঘটে ত্রিভুজ প্রেমের মধ্যে পড়ে যাওয়া মানুষদের পারস্পরিক সম্পর্কের। দুই বোন বা দুই বন্ধুর মধ্যে বহুদিন ধরে একটু একটু করে আস্থা ও ভালোবাসার বুননে যে একটা চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, সেটা ভেঙে যায় মুহূর্তেই। আর এই ছন্দহীনতা শুধু তিনজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এর জের টানতে হয় এই তিনজনের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। তবে এ ধরনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানেরা। বাবা-মায়ের অহরহ ঝগড়া বা শীতল সম্পর্ক, অবিশ্বাস—সর্বোপরি পরিবারে সার্বক্ষণিক একটা গুমোট পরিবেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সন্তানের ব্যক্তিত্ব বিকাশে।
তা হলে একটা সরল প্রশ্ন খুব সহজেই চলে আসে যে এর সমাধান কী?

সীমারেখা টানুন
বিবাহিত হলেও বা নানা রকম বাস্তবতা সত্ত্বেও নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বা ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের সম্পর্কের নেতিবাচক বিস্তার ও প্রভাব যেহেতু বিস্তৃত, তাই আবেগ আপনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা অবস্থাতেই এ সম্পর্কের সীমারেখা টানা জরুরি। সেটা নারী–পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই। বিশেষ করে যিনি আরেকজনের স্বামী তাকে বুঝতে হবে যে, তাঁর কারণে একটি পরিবার ভেঙে যেতে পারে। তাই নিজেকে সংযত করার দায়িত্ব তাঁর নিজেরই।

প্রশ্রয় নয় একেবারেই
নিজের প্রতি বোন বা বন্ধুর স্বামীর বাড়তি মনোযোগ একেবারেই উপেক্ষা করুন। এই বাড়তি মনোযোগ আপনার ভালো লাগছে না খারাপ লাগছে, সেটা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকুন। ফোন করলে বা খুদে বার্তা পাঠালে খুব অল্প কথায় উত্তর দিন। আপনি যে তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেটা মুখে না বলে আচরণে বুঝিয়ে দিন।

বাহ্যিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক
যেহেতু সম্পর্কটার মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে, তাই যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়তো সম্ভব না। সুতরাং দেখা হলে কুশল বিনিময় এবং অন্যান্য স্বাভাবিক আচরণ বজায় রাখুন। প্রয়োজনে সাময়িকভাবে বোন বা বন্ধুর বাসায় যাওয়া কমিয়ে দিতে পারেন।

আলাদা সময় কাটানো একেবারেই নয়
এ ধরনের সংকটে বোন বা বন্ধুর স্বামীর সঙ্গে বাসায়, অফিসে বা অন্য কোথাও দেখা হলে একসঙ্গে সময় না কাটানোই ভালো।

আলোচনা
অনেকেই এসব ক্ষেত্রে বন্ধু বা বোনের স্বামীর সঙ্গে আলাদা করে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টা যে ঠিক হচ্ছে না, সেটা বোঝাতে চান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের আলোচনা বা বোঝানো ফলপ্রসূ হয় না; বরং আকর্ষণ বা আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বিষয়টা নিয়ে কথা না বলে আচরণের মাধ্যমে আপনার অনাগ্রহ বুঝিয়ে দিন। খুব প্রয়োজন হলে বোঝানোর পরিবর্তে সরাসরি অল্প কথায় স্পষ্টভাবে অপনার অনাগ্রহ জানান। খেয়াল রাখবেন, এ ক্ষেত্রে পারতপক্ষে এমন কথা বলবেন না, যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করে।

বন্ধু বা বোনকে জানাবেন কি না
আগ্রহের বিষয়টা খুব প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে বোন বা বন্ধুকে না জানানোই ভালো। দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টা আপনি মোকাবিলা করতে পারলে একসময় ঠিকই আকর্ষণ কেটে যাবে এবং সম্পর্কগুলো ফিরে আসবে আগের স্বাভাবিক ছন্দে।

বোন বা বন্ধুর করণীয়
যাঁর স্বামীর ক্ষেত্রে এমন একধরনের ঘটনা ঘটে, তার জন্য বিষয়টা সবচেয়ে টানাপোড়েনের ও যন্ত্রণাময়। এর আকস্মিকতা শুরুতে একরকম বিহ্বলই করে ফেলে। এমন একটা কঠিন ও রূঢ় সত্যের ভয়াবহ চাপ অনেকেই সামলাতে পারেন না। এমনকি অনেক নারীই স্বামীর এ ধরনের অবিশ্বস্ততার মুখোমুখি হতে চান না বা দেখতে চান না। ফলে কোনোভাবে এ ধরনের কিছু জানলে অযাচিতভাবে বোন বা বন্ধুর ওপরই এককভাবে দোষারোপটা পড়ে।
সুতরাং এ ধরনের কোনো একটা বিষয় আপনার বান্ধবী বা বোনের কাছ থেকে জানলে উত্তেজিত না হয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে না এসে আপনার স্বামীর আপনার বন্ধু বা বোনের সঙ্গে কথাবার্তা, আচার-আচরণের ক্ষেত্রে ইদানীংকালের কোনো পরিবর্তন আছে কি না, সেটা খেয়াল করুন।
আপনার বোন বা বন্ধুর অভিযোগের ভিত্তি আছে বলে মনে হলে আপনার স্বামীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। কোনো প্রকার উত্তেজনা, গালমন্দ, কান্নাকাটি না করে তাঁর এ আচরণ যে আপনার কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না, সেটা দৃঢ়ভাবে জানান।
বোনের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। তবে আপনার স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ সাময়িকভাবে নিরুৎসাহিত করুন। যতই অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত হোক না কেন, একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে মানুষের মন বিষয়টা এমনই যেকোনো সময়ই এটা নাজুক হয়ে যেতে পারে। যে কেউ হারাতে পারেন মনের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ। তাই মনের এই নাজুকতাকে কতখানি প্রশ্রয় দেব, সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের বিবেচনাবোধের ওপর। আমাদের সম্পর্কের দায়বদ্ধতার ওপর, আমাদের মূল্যবোধের ওপর এবং সর্বোপরি নিজের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণের ওপর। সুতরাং যিনি ইতিমধ্যেই একটি সামাজিক সম্পর্কে জড়িয়েছেন তাঁকে রাশ টেনে ধরতে হবে নিজের এবং পরিবারের মঙ্গলের জন্যই। কারণ কোনো সম্পর্কের মধ্যেই অসততা থাকা কারো জন্যেই কাম্য নয়।