untitled-2_127199

দৈনিকবার্তা-১০ সেপ্টেম্বর: গতকাল মিটফোর্ড এলাকায় র‌্যাবের নেতৃত্বে নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
রোগ থেকে জীবন বাঁচাতে যে ওষুধের প্রতি আস্থা রাখে মানুষ, সেই ওষুধের মধ্যেই ঢুকে যাচ্ছে ভেজাল। শুধু আটা ও লবণ দিয়ে ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ ওষুধ তৈরি করছে একটি অসাধুচক্র, যেগুলো বাজারে ছাড়া হচ্ছে নামিদামি বিভিন্ন কম্পানির নামে। এ ধরনের একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার মিটফোর্ড ও কেরানীগঞ্জে ভেজাল ওষুধ তৈরির কারখানায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্য রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম। সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে কারখানাগুলো। দেড় বছর আগেও একই অপরাধে রাসেলকে দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জামিনে বের হয়ে আবারও একই স্থানে ভেজাল ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার পাশা কালের কণ্ঠকে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে র‌্যাব-১০ এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার মো. অজিউল্লাহর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড় কুশিয়ারবা ও আমির মার্কেট, ৫১ ইসলামপুর রোড, বাবুবাজার ঔষধ মার্কেটের নিচতলায় বিশেষ অভিযান চালান। এ সময় তিনটি গোডাউন থেকে এসিআই, বেক্সিমকো, স্কয়ার, এসকেএফসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, উচ্চমানের মিনারেল, ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের নকল ওষুধ, ওষুধ তৈরির যন্ত্রপাতি, উপকরণ, ফয়েল ও মোড়ক উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত কারখানার মালিক রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আনোয়ার পাশা আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাসেল ভেজাল ওষুধ তৈরি করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাঁর সঙ্গে শক্তিশালী চক্র জড়িত। চক্রের সদস্যদের ধরার চেষ্টা চলছে। রাসেলকে আগেও সাজা দেওয়া হয়েছিল। তবে এবার আর তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া হয়নি। ভেজাল ওষুধ তৈরির অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ দণ্ড মৃত্যুদণ্ড।
গ্রেপ্তার হওয়া রাসেল সাংবাদিকদের জানান, এসিআই কম্পানির ফ্লুক্লক্স ৫০০ (ফ্লুক্লক্সসিলিন) নামের অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল তিনি তাঁর নিজ বাড়িতে এবং দোকানের ভেতর বসেই তৈরি করতেন। এ ওষুধের অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল এবং প্যাকেট প্রেস থেকে ছাপা হয়। খালি ক্যাপসুল কিনে তার ভেতর আটা এবং লবণ মিশিয়ে ক্যাপসুলটি তৈরি করা হতো। ছাপানো অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল টুকরা করে হিট দেওয়ার মেশিন দিয়ে চারটি করে ক্যাপসুল প্যাকিং করা হয়। এ ধরনের ১০টি প্যাকেট একটি কাগজের বাক্সে ভরে পাইকারি বিক্রি করে দিতেন। ফয়েল এবং কাগজের বাক্সটি তিনি এসিআই কম্পানিকে হুবহু নকল করে ছেপে নিয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, এগুলো নকল অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ।
রাসেল জানান, এক বাক্স ওষুধের খুচরা মূল্য ৪২১ টাকা। এসিআই কম্পানি ৩৫০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করলেও তিনি তাঁর নকল ওষুধ পাইকারি হিসেবে ২০০ টাকায় বিক্রি করতেন। অসাধু খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় তাঁর কাছ থেকে ওষুধ ক্রয় কিনে নেন। তাঁরা ভেজাল ওষুধ জেনেই বাসা ও গোডাউন থেকে কেনেন। রাসেল দাবি করেন, তাঁর বানানো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কারো কোনো ক্ষতি হবে না, আবার লাভও হবে না। কারণ এতে আটা ও লবণ ছাড়া আর কোনো ক্ষতিকর কেমিক্যাল নেই।
রাসেল আরো জানান, একইভাবে শ্বাসকষ্টের ওষুধ ডার্মাসিন ও এলার্জির জন্য হিস্টাসিন নকল তৈরি করে ২০০ টাকার ওষুধ ১০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করতেন। এসকেএফ কম্পানির ওস্টোক্যাল ডি বেক্সিমকো কম্পানির বেক্সট্রাম গোল্ড, স্কয়ার কম্পানির নিউরো বি, কেলবো-ডি এবং ফিলওয়েল ওষুধের হুবহু নকল করা হয়েছে। প্লাস্টিক কারখানা থেকে ওষুধের কৌটা ও মুখ বানানো হয়। ওষুধগুলো বিভিন্ন ধরনের মিনারেল, ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম হলেও কৌটার ভেতর ২০ পয়সা দামের ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ভরে দেওয়া হয়। দেড় থেকে ২০০ টাকার ওষুধগুলো ৬০ থেকে ৭০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়। একই কৌশলে আমেরিকার ওষুধ এক্স-ক্যাল, বডিফিট, সেন্ট্রাম গোল্ড হুবহু নকল করছিলেন, যেগুলো বাজার থেকে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায় কিনে সাধারণ লোকজন প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিদর্শক অজিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারক রাসেল মানুষের জীবন নিয়ে খেলে আসছেন। তাঁর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাসেলের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সার্বক্ষণিক ওঠাবসা থাকত। মিটফোর্ডের বেশ কিছু ভবনের নিচতলা ও দোতলার পাইকারি দোকান এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ওষুধের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করতেন রাসেল। তাঁর অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা সবাই জানলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।