Rajshahi_bulbul_bg_985110486
দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ২৯সেপ্টেম্বররা:
জশাহীতে টহল ট্রাকে বোমা মেরে পুলিশ হত্যার ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কেন্দ্রীয় নেতা নাদিম মোস্তফাসহ জোটের ৮৯ বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)৷মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নূর হোসেন জানান, ওই ঘটনায় হত্যার অভিযোগে এবং বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র রোববার সন্ধ্যায় আদালত পরিদর্শকের কাছে জমা দেয়া হয়েছে৷ সোমবার সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে৷ দুই মামলায় এহাজারভুক্ত আসামি ছিলেন ৮৮ জন৷ তদন্তে আরো একজনের নাম যোগ করে ৮৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে৷

পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক মো. নূর হোসেন খন্দকার রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন৷ সোমবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন৷

কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম জানান, রোববার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিলের পর আদালতে উপস্থাপনের জন্য সোমবার সকালে তা নথিভুক্ত করা হয়৷ দুপুরে আদালতে নথি উপস্থাপনের পর মামলার বিচারকার্য (ট্রায়াল) শুরুর জন্য আদালতে নির্দেশ জারি হবে৷ এর মধ্যে একটি সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা ও অপরটি একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলা৷পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও বিএনপির বিশেষ সম্পাদক এবং রাজশাহী জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা, মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ মোট ৮৯ জন বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি৷

এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশের পরিদর্শক মো. নূর হোসেন খন্দকার বলেন, মামলায় এজাহার নামীয় ৯০ জন আসামির মধ্যে তদন্ত সাপক্ষে ৮৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷ বাকি দু’জনের নাম-পরিচয়ে মিল পাওয়া যায়নি৷ তবে তদন্তে এজাহার নামীয় আসামির বাইরে আরও একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে৷

ডিবির পরিদর্শক মো. নূর হোসেন খন্দকার বলেন, ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়৷ তিনি হলেন মামলার তিন নম্বর ও সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা৷ এর আগে মামলার তদন্ত করেন বোয়ালিয়া মডেল থানার উপ পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী ও ডিবির তত্‍কালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন৷

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী জানান, দীর্ঘ তদন্তে মামলার এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে৷ মামলায় এজাহার নামীয় ৯০ জন আসামির মধ্যে নাম-ঠিকানা সঠিক না থাকায় অভিযোগপত্রে দু’জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ এরা হলেন- ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি কাবিল ও মহানগর শ্রমিক ফেডারেশনের সারোয়ার জাহান৷ সেসঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় বাঁধন নামের একজনকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷

এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগরীর লোকনাথ স্কুল মার্কেট এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি কাভার্ডভ্যানে বোমা হামলা চালায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা৷ এতে গুরুতর আহত হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ সরকার মারা যান৷এ ঘটনায় আহত হন অরও ৮ পুলিশ সদস্য৷ ওই রাতেই বোয়ালিয়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা এবং মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৮ দলের সাড়ে ৩শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা দায়ের করেন৷

পরে কারাবন্দি অবস্থায় গত ৪ মার্চ উচ্চাদালতে ৬ মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন পান মিনু, বুলবুল, মিলন৷ এছাড়া একই মামলায় ১৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হন অন্তবর্তী জামিনে থাকা অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা৷ ওই দিন তার জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত৷ পরে ৩০ এপ্রিল তিনিও কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান৷ বর্তমানে সবাই জামিনে রয়েছেন৷