news_img

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০১অক্টোবর: জনরোষ থেকে বাঁচতে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর অব্যাহতি নিয়ে সরকার ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলের পক্ষ থেকে তিনি এ কথা বলেন৷হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় লতিফ সিদ্দিকীর সমালোচনা করে তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান মির্জা ফখরুল৷

তিনি বলেন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস ও অনুভুতিতে আঘাত করেছে৷ তিনি আগেও এ ধরনের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন বেশ কয়েকবার৷ এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রকৃত সত্য উত্‍ঘাটিত হয়েছে৷ এ অবৈধ সরকার তাদের দায় এড়াতে পারে না৷ তাই অবিলম্বে মন্ত্রীসভা ও সংসদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ পূর্বক গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক৷পূজা ও ঈদের কারণে এখনই কোনো কর্মসূচি না দিলেও পরবর্তিতে এ বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে ২০ দলীয় জোট বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল৷

জোট অক্ষুন্ন আছে দাবি করে, জনগণের অধিকার আদায়ে জোট ঐকবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপির এ নেতা৷এদিকে, প্রায় দেড় মাস পর মঙ্গলবার রাতে গুলশানে জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন জোট প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷

বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি, জোট থেকে বেশ কয়েকটি দলের একাংশের বেরিয়ে যাওয়া এবং হজ নিয়ে মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্যসহ বিভিন্ন ইসু্য নিয়ে আলোচনা হয়৷

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,লতিফ সিদ্দিকীর ধর্ম বিরোধী বক্তব্যের বিরোধীতা করে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে৷ তার এ বক্তব্য কোটি কোটি মানুষের মনে চরম আঘাত হেনেছে৷ এ মন্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ পেয়েছে৷ তাই তাকে অবিলম্বে অপসারণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি৷তিনি আরও বলেন, সরকার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার ও মামলার হার বাড়িয়ে দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে৷ এছাড়া তারা বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করছে৷ সমপ্রতি মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল হালিম এবং ছাত্রদল নেতা হাবিবসহ সকল নেতাদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি৷

ফখরুল বলেন, সারাদেশের মানুষ গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চান৷ যদি তারা দেশে নির্বাচন না দেয় তবে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে এবং দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে৷

বুধবার ২০ দলীয় জোটের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঈদ ও পূজার কারণে এখনই আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না৷ আমরা অবিলম্বে মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ চাইছি৷ তা না হলে ঈদ ও পূজার পর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব৷ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অব্যাহতি দেয়ার একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচার হলেও তার কোনো ‘ভিত্তি’ খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এই অব্যাহতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না৷ প্রধানমন্ত্রী কিছুই তাকে জানাননি৷ আমরা মনে করি, একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এরকম প্রচারণা চালিয়ে সরকার ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে৷

গত রোববার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী৷আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী৷তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়৷

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়৷ এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন৷ এদের কোনো কাজ নাই৷ কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে৷ শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে৷মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দায় মঙ্গলবারই তাকে বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান৷

একই দিনে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে বলেন, তার লাগামহীন বক্তব্যকে ক্ষমতার শীর্ষ থেকে সবসময় উত্‍সাহ প্রদান করা হয়েছে বলেই এখন তিনি এখন সকল সীমানা অতিক্রম করে পবিত্র হজ ও হাজীদের কটাক্ষ এবং মহানবী (সা:) সম্পর্কে বিদ্রুপাত্মক ভাষায় তাচ্ছিল্য করা ও তাবলিগ জামায়াতকে নিয়ে কটূক্তি করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন৷

এরপর রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া৷ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোটের মহাসচিবদের এই সংবাদ সম্মেলন হয়৷

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার মেঙ্েিকা থেকে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্‍কারে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি চাপের মুখে পদত্যাগ করবেন না৷একজন স্বাধীন ও আধুনিক মানুষ হিসেবে হজ সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কিছুই করব না৷ প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন আমি সেটা প্রতিপালন করব৷

এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়েছে৷ আমরা মনে করি, এই অবৈধ সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না৷ কারণ ওই বক্তব্যের পরও লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি তার কথায় অনড় আছেন৷ সংকট উত্তরণে খালেদা জিয়ার সংলাপের আহ্বানে সাড়া না দিলে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল৷

জোটের মহাসচিবদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জামায়াতের রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খোন্দকার লুত্‍ফর রহমান, ডিএল-এর সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, কল্যাণ পাটির্র এম এম আমিনুর রহমান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির গাজী রবিউল ইসলাম সাগর, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি রেজাউল করীম, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি তৈয়ব, লেবার পার্টির মাসুদ খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন৷এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করীম শাহিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷