hilsa-fish-fishing

দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া,৮অক্টোবর : প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুয়াকাটা ও তত্‍সংলগ্ন গভীর সাগরবক্ষে অনত্মত দুই শ’ ট্রলার নিয়ে হাজারো জেলে ইলিশ শিকারের মহোত্‍সবে মেতেছে৷ ৪ অক্টোবর বিকাল থেকে এসব ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সাগরে ইলিশ শিকার করছে ৷ যার ৯০ ভাগ মা ইলিশ৷

লাখ লাখ মা ইলিশ ইতোমধ্যে ধরা হয়েছে৷ ধরা ইলিশ নিয়ে সাগরবৰে অবস্থান করছে জেলেরা৷ ১৫ অক্টোবর শেষ বিকাল থেকে রাতের বেলা ট্রলারগুলো মাছ বোঝাই করে কিনারে ফেরার পরিকল্পনা করেছে৷ যেখানে নিষেধাজ্ঞার সময় ফিশিংবোটগুলো মহিপুর-আলীপুর ঘাটে বেধে রাখার কথা৷ সেখানে ৯০ভাগ ট্রলার হাওয়া হয়ে গেছে৷ মত্‍সবিভাগ কোস্টগার্ডসহ সংশি্ষ্টদের চরম উদাসীনতায় মা ইলিশ রৰায় সরকারের নেয়া পদৰেপ ভেসত্মে গেছে৷ একই সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ এলাকায় ইলিশের বংশবিসত্মার প্রক্রিয়া৷

মত্‍সবন্দর আলীপুর ও মহিপুর এলাকায় সচরাচর অনত্মত তিন/চার শ’ ট্রলার ঘাটে ভিড়ানো থাকে৷ কিন্তু বর্তমানে নিষেধাজ্ঞাকালে ৫০টি ট্রলারও ঘাটে নেই৷ অপেক্ষাকৃত কিনারে ইলিশ শিকারি অনত্মত তিন হাজার জেলে রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকায়৷

এরা সবাই নৌকা কিনারে তুলে বাড়িতে বেকার দিন কাটাচ্ছে৷ অথচ গভীর সমুদ্রগামী ট্রলারের জেলেরা অধিকাংশরা বাড়িতে নেই৷ ট্রলার মালিকদের অধিক লোভের যোগান দিতে গিয়ে জেলেরা বাধ্য হয়ে গভীর সমুদ্রে মা ইলিশ শিকার করছে৷ অভিযোগ রয়েছে জলদসু্যবাহিনী পর্যনত্ম ম্যানেজ করেই মহিপুর আলীপুরের প্রভাবশালী কয়েকজন আড়ত ও ট্রলার মালিক মা ইলিশ শিকারের তান্ডব চালাচ্ছে৷ ইতোমধ্যে সাগরে অবস্থান করা ট্রলারগুলো মা ইলিশে কানায় কানায় পুর্ণ করেছে বলে সর্বত্র আলোচনা চলছে৷ কেউ কেউ আবার এতো বেশি পরিমাণ ইলিশ শিকার করেছে যে রাতের আধারে লালুয়ার চর-চান্দুপাড়া, খাজুরা, গঙ্গামতি, চরধুলাসার, ফাতরার বনাঞ্চল এলাকায় ধরা ইলিশ নিয়ে আনলোড করতে হচ্ছে৷ ১৫দিনের বাজারঘাট, বরফ ও পর্যাপ্ত জালানি নিয়ে এ উপকূলের অনত্মত ২০০ ট্রলার সাগরবৰে অবস্থান করছে৷ মঙ্গলবার রাতে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারের সময় রহস্যজনকভাবে মারা যায় আলম হাওলাদার (৩৫) এক জেলে৷ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঝাউবাগান সংলগ্ন এলাকার এক খুটা জেলেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আলমের লাশ আনতে সাগরে পাঠানোর সময় বিষয়টি সকলের নজরে আসে৷ তুলাতলী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে কামাল মাঝি, নিহত জেলে আলমসহ (৩০) অন্যান্যরা সাগরে মা ইলশ শিকারে বাধ্য হয়েছেন৷ আলমের বাড়ি দিয়ারামখোলা গ্রামে৷ বাবার নাম হানিফ হাওলাদার৷ কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই সঞ্জয় মন্ডল জানান, খবর শোনার পরে জেলে আলমের লাশ ফাড়িতে নিয়ে গেছেন৷

একাধিক সুত্রে জানা গেছে, প্রত্যেকটি ট্রলারে অনত্মত দুই-পাঁচ হাজার ইলিশ এ কয়দিনে মজুদ করা হয়েছে৷ এভাবে কুয়াকাটা এলাকায় কমপৰে দু’শ ট্রলারে কয়েক লাখ মা ইলিশ মারা হয়েছে৷ গভীর সমুদ্রে নিরাপদে মাছ শিকার ও অবস্থানের জন্য বিভিন্ন সত্মর ম্যানেজ করতে আগেভাগেই মোটা অঙ্কের টাকা ঢালা হয়েছে৷ মহিপুর আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ দিদারউদ্দিন আহম্মেদ মাসুম জানান, তার সমিতিভূক্ত সদস্যদের কোট বোট সাগরে নেই৷ আলীপুর মালিক সমিতির নেতাদের একই দাবি৷ কিন্তু আলমের কেন সাগরে মৃতু্য হলো এর কোন জবাব এরা দিতে রাজি হননি৷ এব্যাপারে মত্‍স, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন প্রশাসন তাদের গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷

তবে স্থানীয় ট্রলার মালিকদেরকে তাদের ট্রলারের অবস্থান নিশ্চিত করতে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এর কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায় নি৷ এভাবেই সংশিস্নষ্টদের চরম উদাসীনতায় মা ইলিশ রৰায় সরকারের পদক্ষেপ ভেসত্মে গেছে৷ কুয়াকাটা আশার আলো মত্‍সজীবি জেলে সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জানান, মাছ শিকারে সরকারের যে কোন নিষেধাজ্ঞা কুয়াকাটার সকল খুটা জেলেরা মানেন৷ কিন্তু বড় ট্রলারের মালিকরা ঠিকই গভীর সাগরে জেলেদের পাঠিয়ে লাখ লাখ মা ইলিশ ধরাচ্ছেন৷