536a8a882f9f3-7-murder-in-Narayanganj

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ,৮অক্টোবর : নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া র্যাব কর্মকর্তা রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন জানালে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে৷ বুধবার নারায়ণগঞ্জের বিচারিক হাকিম শফিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন৷

(র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) র্যাব – ১১ এর এ সদস্যকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল৷রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল আদালতে বলেন, ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম,জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সাতজনের অপহরণের পর খুনের সঙ্গে রুহুল আমিন সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে এ মামলার অন্য আসামিরা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন৷

এদিকে, মঙ্গলবার পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সানেশ্বর গ্রাম থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ নারায়ণগঞ্জ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও বাউফল থানার পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে৷প্রসঙ্গত, রুহুল আমিন সেনাবাহিনীতে ল্যান্স করপোরাল পদে চাকরি করতেন৷ সাত খুনের ঘটনার সময় তিনি প্রেষণে (ডেপুটেশনে) র্যাব-১১-এ কর্মরত ছিলেন৷

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির দায়ের করা পাঁচ খুনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালত রুহুল আমিনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে৷রিমান্ড শেষ হলে আইনজীবী চন্দন সরকারসহ অপর দুইজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের মামলাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে৷

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল আদালতে বলেন, র্যাব সদস্য রুহুল আমিন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর গাড়িতে তুলে চেতনানাশক স্প্রে করে তাদের অচেতন করেন এবং সবার মুখে পলিথিন বেঁধে শ্বাসরোধে মৃতু্য নিশ্চিত করেন৷

র্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ গ্রেপ্তার অপর সদস্যরা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে আদালতকে জানান তদন্ত কর্মকর্তা৷ পাঁচ মাস পলাতক থাকার পর কোরবানির ঈদের পরদিন মঙ্গলবার পটুয়াখালীর বাউফল থেকে রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল৷ তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, সাত খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১ জন র্যাব সদস্যসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন৷ পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷

অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়৷ নূর হোসেন র্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন৷শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন৷ পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন৷

র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ,মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন৷সাত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এই তিন কর্মকর্তাসহ মোট দশজন আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ আর ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র্যাবের নয় সদস্যসহ মোট ১২ জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন৷