12-10-14-PM_Visited Ministry of Textiles And Jute-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০১৪ : ব্যক্তি মালিকানায় বন্ধ থাকা সরকারি শিল্পকারখানা উদ্ধার করে পুনরায় চালু করা–রাজধানী কেন্দ্রিক কারখানা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আর কোনো সরকারি কারখানা বেসরকারি খাতে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷তিনি বলেছেন, বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর যেসব শিল্প কারখানা এখনো চালু হয়নি- সেগুলো আবার উদ্ধার করা হবে৷

রোববার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন৷পাটের নানা সাফল্য তুলে ধরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য তৈরির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি৷ শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের প্রত্যাশা ও করনীয় নানা বিষয়ে তুলে ধরে কারখানাগুলো ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া এবং মন্ত্রণালয়কে নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া কারখানাগুলো চালু না করলে তাদের কাছ থেকে দ্রুত উদ্ধার করাতে হবে৷

পাট ও পাটজাত দ্রব্য তৈরির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর প্রতিও আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পাট ও পাটজাত দ্রব্য তৈরিতে আগ্রহ দেখাবে সেইসব পাটকল মালিকদের কাছে কারখানা লিজ দিতে হবে৷এছাড়া, পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের জন্য যে আইন করা হয়েছে তা যথাযথভাবে প্রয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা৷

তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে শিল্পগুলি বা জায়গাগুলি রয়ে গেছে এখনো; এখনো বহু ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আর ইন্ডাস্ট্রি ব্যক্তিমালিকানায় বিক্রির পদক্ষেপ নেব না৷ বরং যেসব শিল্প কলকারখানা যারা ব্যক্তিমালাকানায় কিনে নিয়েছে চালু করবে বলে, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা চালু করে নাই, তাদের হাত থেকে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে৷

বিষয়টি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনে রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশ দিয়েছি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়কে আরো উদ্যোগ নিতে হবে৷বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে ১৯৯৩ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানাগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া শুরু হয়৷ওই বছর বেসরকারিকরণ বোর্ড (পরে বেসরকারিকরণ কমিশন) প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ৭৪টি রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷এরমধ্যে ৫৪টি কারখানা সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে; ২০টি কারখানায় নেওয়া হয়েছে অংশীদার৷

চালু করার শর্তে প্রচুর জমিসহ এসব কারখানা কিনে নিলেও নতুন মালিকদের অনেকেই তা করেননি৷ কারখানার জায়গায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে বিরাষ্ট্রীকরণের উদ্যোগ নেয়া; আপনারা জানেন বেসরকারিকরণ বোর্ড করে কারখানাগুলো বিরাষ্ট্রীকরণ করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, এতে আমরা দেখেছি যে, অনেকেই হয়তো শিল্প কিনেছে পানির দামে৷ কেনার পরে ওর যে কাঁচামাল, কেমিক্যালস, মেশিনারিজ বিক্রি করে, কেনার পয়সাটা উঠে গেলে কেউ আর শিল্প চালু করেনি৷ এ প্রসঙ্গে নাবিস্কো বিক্রির সময়ের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷আমি নিজে একসময় তেজগাঁও এলাকায় সংসদ সদস্য ছিলাম৷ নাবিস্কো তখনকার টাকায় চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়৷ ওই কেমিক্যালস আর কাঁচামাল বিক্রি করেই চার লাখ টাকার অনেক বেশি টাকা উঠে যায়৷ সেটা দিয়েৃ তারপর তারা ওই ইন্ডাস্ট্রি আর চালু করেনি৷

একইভাবে তেজগাঁওয়ের আরো কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে সেগুলো চালু করতে নেওয়া উদ্যোগের কথা কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা৷স্বাধীনতার পর সব পরিত্যক্ত কারখানা চালু করার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, মা যেমন তার রুগ্ন শিশুকে কোলে তুলে যত্ন করে, পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলেন, ঠিক সেভাবেই আমাদের শিল্পগুলিকে তিনি যত্ন করে আবার চালু করেছিলেন, জনগণের মালিকানা দিয়েছিলেন৷

বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো ১৯৯১ সালে৷ আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, ক্ষমতায় বিএনপি ছিল৷ বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে একটা মেমোরেন্ডাম সই করে আসে সরকার৷ সেখানে ছিল- বাংলাদেশের পাটকলগুলি ধীরে ধীরে সব বন্ধ করে দেয়া হবে৷ আড়াই লক্ষ বেল পাট রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে৷

মজার বিষয় হলো, একই মেমোরেন্ডামে ভারতের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের যে চুক্তি- সেখানে ছিল, তারা ভারতে নতুন নতুন পাটকল করতে সহায়তা দেবে এবং আড়াই লক্ষ বেল পাট ও পাটজাত পণ্য তারা রপ্তানি করতে পারবে৷ শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে এখনো বোধগম্য না, কেন একটা দেশের সরকার এই ধরনের সমঝোতা স্মারকে সই করে আসে৷ যে বাজার বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে সে বাজার আমি ছেড়ে দিচ্ছি অন্য একটা দেশকে৷ আর কীভাবে? আমাদের নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকে বন্ধ করে দিয়ে৷ এটা উনাদের ৯১ থেকে ৯৬ সালের কর্মকাণ্ড৷

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমদজী পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে তার সরকারই আদমজী চালু করে৷ পাশাপাশি ওই কারখানার পাশে ফাঁকা জায়গায় পাটজাত পণ্যের কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়৷

গত চার বছরে বেশ কয়েকটি পাটকল চালু করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পাটের জন্ম রহস্য আবিস্কার করেছি আমরা৷ এর জন্য অনেক কাজ আমাদের করতে হয়েছে, কিন্তু খুব সিক্রেটলি করতে হয়েছে৷ ইতোমধ্যে পাট থেকে তৈরি করা যায় এরকম ৩৬টা আইটেম আবিস্কার করা হয়েছে৷
পাট নিয়ে গবেষণা ও পাট পণ্য উত্‍পাদনে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, এক সময় গ্রাম-বাংলায় পাটের শাড়ি ছাড়া বিয়েই হতো না৷ অথচ সেই ঐতিহ্যটা হারিয়ে সিনথেটিকের যুগে চলে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু এখন আবার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে৷ সেই ঐতিহ্য ফিরে পেতে পাট নিয়ে গবেষণা আরো বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী৷

উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, আমাদের পাট নিয়েই চায়না থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ অনেক উন্নতমানের বস্ত্র তৈরি করছে৷ আমরা পাট উত্‍পাদনকারী দেশ, কিন্তু আমরা সেটা এখনো সে জায়গায় পৌঁছতে পারি নাই৷ সেজন্য আমি মনে করি পাটের ওপর আমাদের আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷

প্রধানমন্ত্রী মনে করেন,দেশের পাটকলগুলোর জন্য নতুন যন্ত্রপাতি দরকার৷এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানাগুলোর খালি জমিতে ছোট ছোট প্লট করে ব্যক্তি মালিকানায় পাটজাত পণ্য তৈরির কারখানা করতে ইজারা দিলে তা লাভজনক হতে পারে৷পাটের ব্যবহার বাড়াতে ২০১৩ সালে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা’ করার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বস্ত্র খাতের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তিনি তুলে ধরেন৷

ইতোমধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন আমরা যেভাবে বাড়িয়েছি, আমি চ্যালেঞ্জ দিতে পারি পৃথিবীর কোন উন্নত দেশও এতো দ্রুত এতো বেশি বেতন বাড়াতে পারে নাই৷ ন্যূনতম মজুরি মাত্র ১৬০০ টাকায় ছিল, এখন ৫৩০০ টাকা৷ মাত্র চার বছরের মধ্যে বাড়ালাম৷

তুলা উত্‍পাদনের জন্য সরকারের নেওয়া প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে যে ভাল বস্ত্র তৈরি হয় সেটার একটা ঐতিহ্য আমাদের আছে৷ সেই সময়ে মসলিনের জন্য সুতি তৈরি হতো কোনো কোনো এলাকায়৷ সেটা ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যেতে পারে যে কোন কোন এলাকায় আমরা সুতা তৈরি করতে পারি৷পাট থেকে উন্নতমানের সুতা তৈরির উদ্যোগ নিতে তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি রেশম শিল্পের গুরুত্বও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন৷

বাংলাদেশের রাজশাহী সিল্ক এক সময় এতো জনপ্রিয় ছিল যে লেডি ডায়নার বিয়ের ড্রেস রাজশাহী সিল্ক থেকে তৈরি হয়েছিল৷ অথচ সেই সিল্ক এখন আর সেইভাবে নাই৷ আমরা যতোবার সরকারে ছিলাম এই রেশম শিল্পটাকে গুরুত্ব দিয়েছি৷ এখনও দেওয়া হচ্ছে৷মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে রপ্তানি শিল্পটাকে৷ আমরা একটা জিনিসের ওপর নির্ভর করে থাকতে পারি না৷ আমাদের রপ্তানিমুখি পণ্য আর কী কী হতে পারে সেগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে৷ অন্যদের মধ্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন৷