দেশের তৃতীয় 'পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ' প্রকল্পের

দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ১৮অক্টোবর: সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ায় হাজার হাজার মানুষের অর্থনৈতিক জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে৷ যেসব মানুষ বছরের কমপক্ষে চারটি মাস বাড়িঘর, স্ত্রী-সনত্মান ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গিয়ে করত নির্মাণসহ বিভিন্ন শ্রমিকের কাজ৷ দেশের তৃতীয় ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরম্ন হওয়ায় এসব মানুষ এখন নিজের বাড়িতে থেকেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন৷ পায়রা বন্দর নির্মাণ কাজকে ঘিরে টিয়াখালী নদী তীর এলাকা এখন আলোকিত জনপদে পরিণত হয়েছে৷ যেখানে মানুষ তার জমিজমা আবাদে দেখাতো অনীহা৷ এখন তারা সোনার দামে জমি বেচাকেনার স্বাদ নিচ্ছেন৷ আর্থিক দৈন্যের যেন ইতি টানতে যাচ্ছেন এসব বঞ্চিত মানুষ৷ প্রকল্প এলাকা অনেক আগেই ভরাট করা হয়েছে৷ পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্প এলাকা পর্যনত্ম ইটবিছানো সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে৷ দু’টি সংযোগ সড়ক সিলকোট করা হয়েছে৷ আশাপাশেই অসংখ্য দোকানপাট বসেছে৷ লিকার চায়ের বদলে এখন কফির স্বাদ নিচ্ছেন মানুষ৷

প্রকল্প এলাকায় টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে৷ সৌরবিদু্যত সিস্টেম চালু করা হয়েছে৷ পলস্নী বিদু্যতের খুটি বসানো হয়েছে৷ নিরাপত্তা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ৷ জেলা সদর পটুয়াখালী থেকে পর্যটন শহর কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে সোজা গাড়িতে মানুষ যেতে পারছে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকায়৷ এখন পড়নত্ম বিকালে দর্শনাথর্ীর ভিড় লেগে থাকে পায়রা বন্দরে৷ শত শত নারী-পুরুষ প্রতিদিন এখানে ভিড় করছে৷ রিঙ্া, হোন্ডা, অটোবাইকের নতুন রম্নটে পরিণত হয়েছে এ পথটি৷ অজানা, অচেনা এ জনপদ এখন হয়ে আছে কর্মমুখর৷ আগামী ২৩ অক্টোবর বন্দরের নিরাপত্তা ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে৷ নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ মন্ত্রীপরিষদের একাধিক সদস্যদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

ঝড়-ঝঞ্চা বিৰুব্ধ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে শুধুমাত্র কৃষি এবং মাছ ধরার পেশা ছিল জীবিকার অবলম্বন৷ কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় এ পেশায় দেখা দেয় অনিশ্চয়তা৷ পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মান প্রকল্প শুরম্ন হওয়ায় ধুঁকে ধুঁকে চলা ওই পেশার মানুষগুলো এখন কর্মসংস্থানের নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরম্ন করেছে ৷স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান জানান- প্রাকৃতিক বৈরি পরিবেশ, জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত বিপর্যয় উপলব্ধি করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় পরিবর্তনের ছোঁয়া এনে দিয়েছেন৷ শিল্পভিত্তিক অঞ্চল ছাড়াও পর্যটন শিল্পকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রম্নপ নিতেই তার এ প্রচেষ্টা বলে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প এলাকার উদ্বোধনী দিনে বলেছেন৷

পায়রা বন্দর কতর্ৃপক্ষের বোর্ড মোম্বার (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান জানান, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় বহর্িেনাঙ্গরের কাজ শুরম্নর পরিকল্পনা রয়েছে৷ এছাড়া ছোট ভ্যাসেলের মাধ্যমে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে এই বন্দরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার পরিকল্পনা চুড়ানত্ম পর্যায় রয়েছে৷ রামনাবাদ মোহনা থেকে কাজল, তেতুলিয়া নদী হয়ে কালীগঞ্জ পর্যনত্ম সমুদ্রের (নৌ-পথের) গভীরতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে৷ অধিকাংশ রম্নটের গভীরতা সাত থেকে ১৫মিটার৷ তবে শুধুমাত্র চালিতাবুনিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় খনন কাজ করতে হবে৷

এ কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য বন্দরে জাহাজ চলাচলে যেমন জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয়৷ পায়রা বন্দরের সঙ্গে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে এ ধরনের সমস্যা থাকবেনা৷ গভীরতা বেশি থাকায় এরম্নটে ২৪ ঘন্টা জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে৷ বন্দর কতর্ৃপৰের উদ্যোগে ইতোমধ্যে কাউয়ারচরে বাতিঘর স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে৷ পায়রা বন্দর থেকে কুয়াকাটাগামী মহাসড়কের রজপাড়া পর্যনত্ম চার লেনের মূল সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে৷ এ বছর লালুয়ার চারিপাড়াসহ আশপাশ এলাকার প্রায় দুই হাজার একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চুড়ানত্মের পথে৷ প্রকল্পের এ কাজ করতে তিন শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে৷ চারিপাড়ায় মূলবন্দরের কাজ শুরম্ন করতে বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ২০১৩ সালের ১৯ নবেম্বর৷ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ওই দিনটি হয়ে আছে ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ৷ যা ছিল তাদের কাছে স্বপ্নের মতো৷ এর বাসত্মব প্রতিফলন এখন দেখছেন তারা৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রম্নতি অনুসারে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এ জনপদকে ঘিরে৷ বেছে নেয়া হয় রামনাবাদ চ্যাণেলকে৷ বহুদফা দেশি এবং আনত্মর্জাতিক বিশেষজ্ঞদল সমীৰা চালায়৷ বন্দরসুত্রে জানা গেছে, মাদার ভ্যাসেলকে বহির্নোঙ্গরে রেখে লাইটার জাহাজে এই বন্দর দিয়ে পণ্য ওঠা-নামা করা যাবে৷ এই বন্দর এলাকা এঙ্ক্লুসিভ জোনে পরিণত হবে৷

টিয়াখালীতে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর, মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩ পাশ হয়৷ এ আইনের আওতায় রামনাবাদ পাড়ের মধ্যবতর্ী টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়াতে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়৷ পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি তদারকি সেলও গঠন করা হয়েছে৷