বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি উত্‍পাদনে

দৈনিকবার্তা-মৌলভীবাজার, ১৮অক্টোবর : চা-এর পর বাংলাদেশের মানুষের দ্বিতীয় পছন্দের সুপেয় পানিয় কফি উত্‍পাদনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়৷ এ জেলার মাটি, জলবায়ু ও আবহাওয়া কফি উত্‍পাদনের সম্পূর্ণ উপযোগি৷ ফলে এ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ লাভজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা৷ চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা চায়ের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে সমাধিক পরিচিত৷এ জেলার সোনাছড়া চা বাগান এলাকায় ১৯৮০ সালে ৫৬০ একর ভূমিতে দেশের শীর্ষ চা উত্‍পাদকারী কোম্পানী জেমস ফিনলে রোবাষ্টা ও এরাবিকা এ দুই জাতের কফি গাছ রোপন করে বাগান গড়ে তোলে৷ দেশের বাইরে এ বাগানের কফি ‘ফিনলে কফি’ নামে বিক্রি হতো৷ প্রথম দিকে এ বাগানের কফি চাষ ব্যাপক সফলতা পায়৷ মূল্য কম থাকায় আনর্ত্মজাতিক হোটেলগুলো এ কফির চাহিদা বৃদ্ধি পায়৷ কিন্তু শীর্ষ চা উত্‍পাদনকারী কোম্পানী জেমস ফিনলে ব্যবসায়ীক লাভের আশায় এ দেশের মৌলভীবাজার জেলায় কফি বাগান গড়ে তোলার মাধ্যমে কফি চাষ শুরু করলেও এ বাগানের কফি গুনগত মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মানের না হওয়া, উত্‍পাদন প্রত্যাশামতো না পাওয়া ও উত্‍পাদন ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবার কারণে চা উত্‍পাদনের তুলনায় কফি উত্‍পাদর ততোধিক লাভজনক না হবার কারণ দেখিয়ে ওই কোম্পানী মাত্র ১২ বছরের মাথায় ১৯৯২ সালে কফি চাষ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করে৷

চা এর সাথে সংশ্লিষ্ট জানায়, বর্তমান বিশ্বে কফি একটি জনপ্রিয় পানিয়৷ বাংলাদেশেও এ পানিয়টি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে৷ প্রতিদিন শতকরা গড়ে ১০ ভাগ মানুষ কফি পান করছেন৷ দেশে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের অসংখ্য হোটেল৷ এছাড়া পর্যটন এলাকাগুলোতে বিশেষ করে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য নামী-দামী হোটেল-রেসত্মোরা৷ এসব হোটেল ও রেস্তোরাগুলোতেও কফি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বিদেশ থেকে কফি আমদানী করতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ দেশী মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে৷ চা-এর পাশাপাশি কফি পানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবার কারণে কফি চাষ পুনরায় শুরু করতে চিন্তা-ভাবনা চলছে৷এ অবস্থায় মৌলভীবাজার জেলায় তথা দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে একাধিক জাতের অধিক উত্‍পাদনশীল কফি চাষ করে দেশের চাহিদা মেটানো অবশ্যই সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল৷ অপর একটি সূত্র মতে, মৌলভীবাজার জেলার মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু কফি চাষের সম্পূর্ণ উপযোগি৷ এছাড়া পাহাড়ি ঠিলাবেষ্টিত এ জেলায় অধিক বৃষ্টিপাত হবার কারণে সঠিক পরিকল্পনা করলে সাফল্যজনকভাবে বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব৷ চা এবং কফি উভয়টিই প্রায় একই প্রজাতির উদ্ভিদ হবার কারণে যেখানে চা চাষে সফলতা লাভ করা যায় সেখানে সাফল্যজনকভাবে কফি চাষও করা সম্ভব৷

শুধু প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোগ আর আনত্মরিকতার৷ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিবহুল এলাকা এবং বৃষ্টির পানি যেখানে জমে তাকে না সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ লাভজনক হতে পারে৷ মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি অঞ্চল ঠিলাবেষ্টিত হবার কারণে এবং এ জেলায় অসংখ্য পাহাড়ি ঠিলা পতিত অবস্থায় থাকায় এ জেলায় অধিক পরিমাণে কফি চাষ করা যেতে পারে৷ এতে করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা সম্ভব৷ জেলার শ্রীমঙ্গলের চা গবেষণা কেন্দ্রে রোবাষ্টা ও এরাবিকা জাতের ক’টি কফি গাছ রয়েছে৷ এসব গাছে প্রতি বছর কফি ফল ধরে৷ এখানে রোপনকৃত গাছগুলো দেখে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, এ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ করে সফলতা লাভ সম্ভব৷