1415456313-300x290

দৈনিকবার্তা-নারায়ণগঞ্জ, ১১নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুমের ভাইকে নারায়ণগঞ্জের ফরাজিকান্দা থেকে আটক করেছে র্যাব৷র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, সোমবার রাতে মো. মোনায়েম ওরফে মনোয়ার হোসেন ওরফে মনাকে আটক করা হয়৷

র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন,ভাইয়ের জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই মোনায়েমকে আটক করেছেন তারা৷ভারতের গোয়েন্দারা বাংলাদেশের দুই নেত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে যাদের কথা বলে আসছিলেন, সাজিদ তাদেরই একজন৷ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক সাজিদ জেএমবির কমান্ডার এবং বর্ধমান বিস্ফোরণের পেছনের মূল ব্যক্তি৷ তার বিষয়ে তথ্য দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা ছিল৷

গত শনিবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সাজিদ ও জিয়াউল হক নামের আরেকজনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ৷ জিয়াউলও জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দারা বলছেন৷সাজিদকে ইতোমধ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এনআইএর গোয়েন্দারা৷তারা বলছেন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও কাশ্মিরের জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে পশ্চিমবঙ্গে একটি জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশে কোনঠাসা জেএমবি৷এর অংশ হিসাবে মুর্শিদাবাদের একটি মাদ্রাসাকে ঘিরে জঙ্গি তত্‍পরতা চালিয়ে আসছিলেন সাজিদ৷

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর ভারতে তার তদন্তে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে৷ যে বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখান থেকে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ; যারা জেএমবির সঙ্গে যুক্ত এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি৷ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের তদন্তে তারা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যায় জঙ্গিদের একটি পরিকল্পনাও জানতে পেরেছেন৷ভারতের শীর্ষ বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুম ওরফে বুরহান শেখকে নারায়ণগঞ্জের ফরাজিকান্দার মানুষ চিনত মাসুদ রানা ওরফে মাসুম নামে৷

তার ভাই ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মোনায়েম ওরফে মনাকে (৪৫) উদ্ধৃত করে সোমবার আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর ৪ ভাই, ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট মাসুমকে (সাজিদ) ঢাকার একটি মাদ্রাসায় পাঠানো হয়৷ সেখানেই সে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে৷বছর আট-দশ পরিবারের সঙ্গে মাসুমের সম্পর্ক নেই৷ শুনেছিলাম সে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছে৷ বেঁচে আছে কিনা তা-ও জানতাম না৷ এখন শুনছি, সে ভারতে ধরা পড়েছে৷

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে র্যা বের পক্ষ থেকে মোনায়েম ওরফে মনাকে আটকের বিষয়টি জানানো হয়, যদিও তার ১২ ঘন্টা আগেই আটকের বিষয়টি প্রকাশ করে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনন্দবাজার৷ এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,মাসুম ওরফে সাজিদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা আত্মগোপন করেছেন৷ ফরাজিকান্দায় তাদের পৈত্রিক বাড়িতে এখন আছেন কেবল শেফালি ও রোকেয়া নামের দুই নারী৷ এর মধ্যে শেফালি মনার স্ত্রী৷আনন্দবাজার বলছে, বাংলাদেশের মাসুম ভারতে গিয়ে সাজিদ নাম নেন এবং পরে বুরহান শেখ নামে ভারতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করে৷ বুরহান আসলে তাদের আরেক ভাইয়ের নাম, যিনি মালয়েশিয়ায় চাকরি করতেন৷

ফরাজিকান্দার বাসিন্দাদের দাবি, মাসুম যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তা তারা জানতেন৷ তবে সে যে এত বড় জঙ্গি নেতা তা তাদের জানা ছিল না৷ তাদের দাবি, মাসুমের কাজকর্মে মনাও মদত দিতেন৷ ১৯৯৭-এ চট্টগ্রামে প্রচুর বিস্ফোরক, ডিটোনেটর, জেহাদি বইসহ গ্রেপ্তার হয় মাসুম৷ তখন মনাই তাকে জামিনে ছাড়ান৷ পরে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয় মাসুম৷ তখন পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ফের তার জামিনের ব্যবস্থা করেন মনা৷ শেষ পর্যন্ত মাসুম দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়ে৷