image_150942.min

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ নভেম্বর: বর্তমান সরকারের ওপর বিজেপি সরকারের অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী৷শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত হাই কমিশনার’স সামিট অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তিনি এ কথা বলেন৷ ভারত-বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আদলে আয়োজিত এ সম্মেলনের সহ আয়োজক হিসাবে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় এই উদ্যোগ ব্রিলিয়ান্ট অ্যান্ড ইউনিক৷বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি,পানিবন্টন চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে৷

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় গিয়েছে৷দুই দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে কখনও কখনও সম্পর্কের ওঠানামা করলেও সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে৷পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের ওপর বিজেপি সরকারের অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে৷ ভারতের মোদী সরকারের বিভিন্ন বক্তব্যে তা সুস্পষ্ট উঠে এসেছে৷মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত দুই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটা বেটার সম্পর্ক বজায় রয়েছে৷

বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ‘সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ’ হয়েছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, অন্যরাও এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পারে৷ভারতে সামপ্রতিক সময়ে সরকার বদলের পরও দুই দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন৷

বাংলাদেশ-ভারত হাই কমিশনার সম্মেলনের উদ্বোধন করে মন্ত্রী বলেন, অতীতের উত্থান-পতনের পরও দুই দেশের সম্পর্ক আজ এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে এখন কেবল ‘বিকাশই সম্ভব৷

দুই দেশের সাবেক ও বর্তমান হাই কমিশনাররা এ সম্মেলনে অংশ নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় অংশ নেন৷
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে আলোচনা করে দুই দেশের সাবেক ও বর্তমান কূটনীতিকদের উদ্দেশে মাহমুদ আলী বলেন, আপনারাই এ সম্পর্কের জীবন্ত দলিল, ইতিহাস নির্মাণের বিরল সাক্ষী৷

কূটনীতিক থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সময়ের আবর্তে জটিল ও বহুমাত্রিক একটি সমন্বিত রূপ পেয়েছে৷ এক দশক আগেও গুরুত্ব পেত না এমন সব ক্ষেত্রেও এখন দুই দেশের সহযোগিতা বিস্তৃত হয়েছে৷

এই সম্পর্ক অন্যন্য অঞ্চলের দেশের জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে৷ আমাদের দ্বিপীক্ষয় সম্পর্কের বিস্তৃতি, গভীরতা ও আস্থার প্রতিফলনও এতে পাওয়া যায়৷পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, বাংলাদেশ ও ভারত তার ব্যতিক্রম নয়৷ তবে খোলা মন নিয়ে চেষ্টা করলে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব৷

আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্র সীমার বিরোধ নিষ্পত্তির সামপ্রতিক উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, অমীমাংসিত অন্য বিষয়গুলোর সমাধানের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আমি আশাবাদী৷ তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আজ সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ৷ বিশ্ব আজ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী৷

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে এইচ মাহমুদ আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের ভাতৃপ্রতীম সম্পর্কের পক্ষে থাকলেও তিনি নিহত হওয়ার পর এই সম্পর্ক ভিন্ন দিকে যায়৷দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে দুই দেশের সম্পর্ক আবার ছন্দে ফিরতে শুরু করে৷ আর ২০১০ ও ২০১১ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে তা নতুন মাত্রা পায় বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ আলী৷

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক চক্রবর্তী বলেন, বিশ্বের একটি বৃহত্‍ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনপ্রতিষ্ঠা চায়৷ আর আমি একজন কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কামনা করি৷পিনাক চক্রবর্তী বলেন, ভারতের টওতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে এ দেশে যে সরকার এসেছে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করেছি৷ বর্তমানেও যে সরকার রয়েছে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করে যাবো৷ এর আগে সামরিক সরকারের সঙ্গেও আমরা কাজ করেছি৷

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী বিরোধীদল চাই৷ তাদের যে সব অধিকার আছে তা তারা অর্জন করে নিতে পারবে৷অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশিকা ইরশাদ, অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ৷