bhola

দৈনিকবার্তা-ভোলা,৮ডিসেম্বর :  আজ সেই ৯ ডিসেম্বর ভোলার লালমোহন পাক হানাদার মুক্ত দিবস৷এই দিনে লালমোহন থেকে পাক বাহিনী চলে যায়৷ ১৯৭১ সালের ৮ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এখানে পাক বাহিনী এস অবস্থান নেয়৷ তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল লাঙ্গলখালীর সি.ও অফিসে৷ তখন লালমোহন থানা ছিল আলবদর, আল সামস, রাজাকারও তাদের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে৷

ভোলা জেলার মক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, নভেম্বর মাসের শেষর দিকে লালমোহনের মুক্তিযোদ্ধারা থানা আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ ও যুদ্ধের কৌশল নিধর্ারণ করেন৷ পহেলা রমজান বৃহস্পতিবার রাতে সেহরি খাবার পর ভোলার সর্বত্রই যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী ছিদ্দিক কমান্ডার (বাঘা ছিদ্দিক) এর নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রায় এক থেকে দেড়শ জনের এক দল মুক্তিবাহিনী দেউলা হাজী বাড়ি ক্যাম্প থেকে লালমোহন থানা দখলের উদ্দেশ্যে যাত্র শুরম্ন করেন৷ তারা দেউলা শানত্মিহাট হয়ে সোজা লালমোহনের রাসত্মা ধরে শাহবাজ পুর কলেজের কাছাকাছি আসতেই কমান্ডার বাঘা ছিদ্দিক তার দলকে ৪ ভাগে বিভক্ত করে দেন৷ থানার পশ্চিম দিকে সামছল হক ও তার বাহিনী, উত্তর দিকে মোচু সিদ্দিক, দৰিণ দিকে হাবিলদার সিরাজ উদ্দিন ও পূর্বদিকে হাবিলদার শানুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ যোদ্ধারা খুব দ্রম্নত্ব যে যার জায়গাই গিয়ে লালমোহন থানা ঘিরে ফেলেন৷

ভোরে হাইকমান্ডার ছিদ্দিক ৮/১০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে থানার পশ্চিম দিকের আরসিও অফিসের সম্মুখে রাইফেল ঠেকিয়ে ওই স্থান থেকে তিনি নিজেই থ্রী নট থ্রী রাইফেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পৰ থেকে সর্ব প্রথম শত্রম্নদের লৰ করে গুলি ছুড়েন৷ তখন থানা থেকেও শত্রম্ন পৰ এলোপাথারীভাবে গুলি ছুড়তে থাকেন৷ তখনকার থানার ভারপাপ্ত কর্মকতর্া (ওসি) মুক্তিবাহিদের পৰে ছিলেন বলে জানা যায়৷ এই ভাবে সকাল থেকে উভয়ের মাঝে গুলি পাল্ট গুলি চলতে থাকে৷ ভেতর থেকে ১০ গুলি হলে বাহির থেকে ১টি গুলি ছোড়া হয়৷

থানার ভেতরে অবস্থান রত রাজাকার ও পুলিশকে বোঝানো হয়েছে তোমাদের চারদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে আছে, তোমরা আত্মসমর্পণ ব্যতিত কোন উপায় নেই৷ এদিকে মুক্তিবাহিনীরা মাইকিংয়ের মাধ্যেমে থানায় অবস্থানকারী শত্রম্ন পৰকে সাড়েন্ডার করার অনুরোধ করে যাচ্ছেন৷ এছাড়া ওয়েস্টর্ান পাড়ার মহাদ্দেস সাহেবের বাড়ির শফিকুল ইসলামের মা লালমোহন বাজারে এস মাইক দিয়ে তার ছেলে সহ রাজাকার, আলবদর বাহিনীর সকল সদস্যকে সাড়েন্ডার করার অনুরোধ করেন৷ একই সময়ে লালমোহনের শানত্মি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস সাসেবও শত্রম্ন পৰকে সাড়েন্ডার করার জন্য অনুরোধ করেন৷ বিন্তু কিছুতেই শত্রম্ন পৰ আত্মসমর্পণ করতে রাজী হচ্ছে না৷ দুপুরের দিকে গুলি ও পাল্টা গুলির মাত্র আরো বেড়েই যায়৷

গোলাগুলির এক পর্যায়ে থানা থেকে ধেয়ে আসা রাজাকার বাহিনীর গুলিতে ২নং ওয়ার্ড বাগান বাড়িতে মনা পাল গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মারা যান৷ দুপুর শেষে উত্তর বাজার জামে মসজিদের পাশে গুলিবিদ্ধ হন চরভূতা ইউনিয়নের মকবুল খনকার৷ একই রকম ঘটনায় ডাকবাংলো পোলের উপর গুলিদ্ধি হণ রাধা- রমণ কুন্ডু৷ ৩ ঘন্টা লড়াই করে উভয় মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়৷ এতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছাঁয়া নেমে আসে৷ দুপুরের পর থেকে মুক্তিবাহিনীরা বৃষ্টির মতো চারদিক থেকে গুলি ছুড়তে থাকে৷ মুক্তিবাহিনীর গুলিতে রাজাকার বাহিনী থানার মধ্যে অবদ্ধ ও দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ এ সময় থানার খেদমতে থাকা ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান৷ ফলে জারাকার বাহিনী আরো ভীত সন্ত্রসত্ম হয়ে থানা থেকে পলিয়ে যায়৷ পরে মুক্তিযোদ্ধার গিয়ে থানা দখল করেন৷