14-12-14-President_PM_Martyred Intellectuals-1

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর: শহীদ বুদ্ধীজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপ্রতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ রোববার সকাল ৭ট ৫৯মিনিটে তারা একই সঙ্গে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধীজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷ এর পর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী৷শহীদ বুদ্ধীজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপ্রতি ও প্রধানমন্ত্রী এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন৷

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে রোববার রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে ফুল দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷রাষ্ট্রপতি সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির জন্য জীবন উত্‍সর্গকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷রাষ্ট্রপতি কিছু সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এসময়ে বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে৷রাষ্ট্রপতি ফুল দেয়ার পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের কাছে হেঁটে যান ও তাদের কুশলাদি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন৷

এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসে পৌঁছুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, তাঁকে অভ্যর্থনা জানান৷ এসময় মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন৷১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিত্‍সক, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখকসহ প্রায় দু’শতাধিক বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীকে পাকিসত্মানি দখলদার বাহিনী তাদের স্থানীয় সহযোগীদের সহায়তায় ধরে নিয়ে যায়৷

আটক এ সকল বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেধে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখাল পাড়া, রাজারবাগ ও অন্যান্য স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে বিভিন্ন বধ্যভূমি বিশেষ করে রায়ের বাজার ও মিরপুরে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়৷এর পর থেকে প্রতিবছর দিবসটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়৷এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষেরোববার সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পসত্মবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷প্রধানমন্ত্রী পুষ্পসত্মবক অর্পণ শেষে মাটির কৃতি সনত্মানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন৷এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করম্নণ সুর বেজে ওঠে৷মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন৷

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবেও শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরো একটি পুষ্পসত্মবক অর্পণ করেন৷পরে প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের ভালোমন্দের খোঁজ-খবর নেন৷ প্রধানমন্ত্রী পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পসত্মবক অর্পণ করেন৷

পুষ্পসত্মবক অর্পণ শেষে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন৷বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে দলীয় প্রধান হিসেবেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরো একটি পুষ্পসত্মবক অর্পণ করেন৷

এ সময়ে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন৷১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিসত্মানী দখলদার বাহিনী অধ্যাপক, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখকসহ দুশ’রও বেশি বাঙালিকে তুলে নিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ নগরীর বিভিন্ন টর্চার সেলে নিয়ে যায়৷ পরে বিভিন্ন বধ্যভূমি বিশেষ করে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের গণহারে হত্যা করে৷

এরপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে৷এর পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ রোববার সকাল থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন৷ কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে লাল সবুজের পতাকা ও বাহারি সব ফুল হাতে তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের৷রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে যারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন৷

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা রকম কর্মসূচি পালন করছে৷ তার মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, কালো পতাকা উত্তোলন, মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা৷১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস৷ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিধনের মর্মন্তুদ স্মৃতিঘেরা দিন৷বাঙালীর মেধা-মনন-মনিষা শক্তি হারানোর দিন৷ মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে, ঠিক সেই সময়ই রাতের আঁধারে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে৷বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিত্‍সক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী ছিলেন৷