শেখ-হাসিনা-৬_33335_9900

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ২৩ ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি দিয়ে কারারক্ষীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, আপনাদের মধ্যে কেউ জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদান করলে তার বিরম্নদ্ধে কঠোর শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ কেউ আইন-শৃঙ্খলার বাইরে নয়৷ কারারক্ষীদেরও নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে৷ অন্যথায়, কারাগারের মঙ্গলের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারাগারে আগত বন্দিদের বন্দি হিসেবে না দেখে সমাজের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে৷ সমাজের একজন সদস্য কারাগারের পরিবেশের কারণে অপরাধী হয়ে বের হলে সমাজ আরো কলুষিত হবে৷ তিঁনি বলেন, আগামি জুনের মধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানানত্মর করা হবে৷ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানানত্মরিত হওয়ার পর এখানকার জমির প্রায় ৯ একর জায়গায় পার্ক স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ যাতে পুরোনা ঢাকাবাসী সহ দেশের সকল নাগরিক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে প্রতিষ্ঠিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর’ অবাধে পরিদর্শনের সুযোগ পান৷ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গনে জাতীয় কারা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে এসব কথা বলেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ সাত বছর পর কারা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে৷ আমি আশাকরি কারা সপ্তাহ পালনের মধ্য দিয়ে আপনাদের কর্মস্পৃহা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বন্দিদের শৃংখলভাবে নিরাপদ আটক ও তাদের প্রতি তাদের প্রতি মানবিক ব্যবসহার নিশ্চিত হবে৷ অপরাধীদের নিরাপদে আটক রাখার মাধ্যমে সমাজে আইন শৃংখল পরিস্থিতি অটুট রাখতে কারারৰীগণ গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন৷ আদিকালে মূলত অপরাধীদের সাজা প্রদানের জন্যই কারাগার সৃষ্টি হয়েছিল৷ কিন্তু সভ্য দুনিয়ায় কারাগারকে সংশোধনাগার ও পুনর্বাসনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ‘ পাপকে ঘৃনা কর, পাপিকে নয়’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা কারা প্রশাসন পরিচালনা করছি৷ তাই আমাদের সরকার সব সময় কারাগারের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাসত্মবায়ন করছে৷ ১৯৯৬ সালে রাস্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা কারা বিভাগের সদরদপ্তরসহ ৩৬টি কারাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম৷ যার সুফল বর্তমানে কারাবন্দিসহ পুরো প্রশাসন পাচ্ছে৷ বন্দিদের বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন, পেশাগত দৰতা অর্জনের জন্য প্রশিৰণ অপরিহার্য৷ স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৩ বছরেও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোন প্রশিৰণ কেন্দ্র গড়ে উঠে নি৷ কারা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যথোপযুক্ত প্রশিৰণ দেওয়ার জন্য রাজশাহীতে কারা প্রশিৰণ একাডেমি এবং ঢাকায় একটি কারা স্টাফ কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধানত্ম নেওয়া হয়েছে৷ এছাড়াও দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যাতে কারাগারের ভেতর থেকে জঙ্গী তত্‍পরতা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে সে লৰ্যে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে৷ তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ‘কারা স্মৃতি যাদুঘর’ স্থাপন করি৷ এটি জাতীয় যাদুঘরের শাখা যাদুঘরের শাখা যাদুঘর হিসেবে অনত্মর্ভক্ত করা হয়েছে৷ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানানত্মরের পর এ যাদুঘর দুটি সর্ব সাধারনের জন্য খুলে দেয়া হবে৷ যাতে জনগণ জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার কারাবাসকালীন স্মৃতি সম্পর্কে সম্মক ধারণা পেতে পারেন৷ এ ছাড়াও আমরা একশ বছরের পুরোনো, জরাজীর্ণ খুলনা জেলা কারাগারকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বৃহত্‍ আকারে নির্মানের কাজ শুরম্ন করেছি৷ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারকেও আরো বড় পরিসরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরম্ন হয়েছে৷

তিনি আরো বলেন, কারা কর্মকর্তাদের জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় অফিসার্স মেস নির্মাণ করা হয়েছে৷ কারারৰীদের প্যারেড প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণের ব্যবস্থা আমরাই করেছি৷ বেশ কিছু কারাগারে মহিলা কারারৰীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাদের আবাসনের সমস্যা সমাধানের আরো একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে৷ ঢাকা, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টার চালু করেছি৷ দীর্ঘ মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজার বন্দিকে বিশেষ বিবেচনায় কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে যাতে তারা সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন৷ পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে পারেন৷ বর্তমানে কারা বিভাগে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে৷ এগুলো দ্রম্নত বাসত্মবায়ন করে কারা বিভাগকে আরো যুগোপযোগী করার জন্য সরকার আনত্মরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ কারা প্রশাসনের দৰতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, বন্দিরা সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যাতে সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পায় সে জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি৷ প্রধান মন্ত্রী দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অপরাধীদের তথ্যভান্ডার গড়ে তোলার ওপর গুরম্নত্ব দিয়ে বলেন, আমি মনে করি দেশের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ‘ক্রিমিনাল ডাটাবেইজ’ তৈরী করা প্রয়োজন৷ এই ডাটা বেইজের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের তথ্যের সমন্বয় করে সহজেই অপরাধী বা ভূয়া পরিচয় প্রদানকারীকে সনাক্ত করা যাবে৷ এ উদ্দেশ্যে কারাগারে আগত একটি বন্দিদের একটি ডাটাবেইজ তৈরীর প্রয়োজনীয় পদৰেপ গ্রহণ করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিয়েছে৷ বাংলাদেশ আজ আর পরমুখাপেৰি দেশ নয়৷ মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন হয়েছে৷ আমরা খাদ্যে সয়ং সম্পূর্ণতা পেয়েছি৷ মত্‍স উত্‍পাদনে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ৷ তৈরী পোশাক রফতানিতে বিশ্বের আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়৷ বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে৷ বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ ২০০৬ সালে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বর্তমানে ২২ দশমিক ৩৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে৷ মাথাপিছু আয় ৬৩০ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১২’শ ডলারে উন্নীত হয়েছে৷ গত পাঁচ বছরে সরকারি- বেরকারি মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন সৰমতা প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াটে পৌছেছে৷ ১৪টি বৃহত্‍ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১টি কালভার্ট এবং ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে৷ নিজস্ব তহবিলে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরম্ন করেছি৷ সারাদেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে৷ ১২ হাজার ৫৫৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৩ হাজার ৮৮১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করা হয়েছে৷ আগামি পহেলা জানুয়ারি সারাদেশে সাড়ে ৩২ কোটিরও বেশি পুসত্মক বিতরণ করা হবে৷

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্যারেড গ্রাউন্ডে প্যারেড পরিদর্শন ও সশস্ত্র অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ এরপর কারা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন৷ প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা গাড়িতে চড়ে প্যারেড পরিদর্শন করেন৷তিনি কারা মেলা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র উদ্বোধন এবং পরিদর্শন করেন৷ পরে প্রধানমন্ত্রী দরবারে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন৷ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, স্বরাস্ট্র সচিব মোজাম্মেল হোসেন খান, আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ নূরম্নল ইসলামসহ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন৷ এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে এসে পৌঁছলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাঁকে স্বাগত জানান৷ পরে প্রধানমন্ত্রী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্যারেড গ্রাউন্ডে প্যারেড পরিদর্শন ও সশস্ত্র অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ জাতীয় কারা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর তিনি কারা মেলা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র উদ্বোধন এবং পরিদর্শন করেন৷ পরে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দরবারে উপস্থিত হয়ে কারারৰী, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন৷ এ সময় মঞ্চে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কারা মহা পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন৷