দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১ জানুয়ারি: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দরিদ্র মাতা-পিতার সনত্মানদের শিক্ষার অধিকার বাসত্মবায়নে সরকার বিনামূল্যে বই দেয়া কর্মসূচি চালু করেছে৷তিনি বলেন, দারিদ্রের কারণে বই কিনতে পারতো না বলে দরিদ্র সনত্মানরা স্কুলে আসতে পারতো না৷ কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের যুগানত্মকারী সিদ্ধানত্মের কারণে আজ দেশের প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছেছ৷

তিনি আরো বলেন, সরকারের এই দূরদর্শিতার কারণেই বিগত ৬ বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ ঝরে পড়ার হারও কমে এসেছে৷তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল সরকারী বালক বিদ্যালয় মাঠে নতুন বছরের পাঠ্যপুসত্মক উত্‍সবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন৷

আড়ম্বরপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিৰা মন্ত্রী মোসত্মাফিজুর রহমান৷ বক্তৃতা করেন শিক্ষা সচিব নজরম্নল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিৰা সচিব কাজী আখতার হোসেন, মাধ্যমিক শিৰা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, জাতীয় শিৰাক্রম ও পাঠ্যপুসত্মক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: আবুল কাসেম মিয়া প্রমুখ৷

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা সত্মরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন৷ আর এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন৷ এতেই প্রতীয়মান হয় শেখ হাসিনার সরকারের দূরদর্শিতার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, ঝরে পড়ার হার কমে এসেছে৷তিনি বলেন, বই উত্‍সবের আজকের দিনে সরকার সারা দেশে বই বিতরণ করছে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি৷ আর ২০১০ সালে এ সরকার বই বিতরণ করেছিল ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১টি৷ ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যনত্ম সরকার মোট বই বিতরণ করেছে ১৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১২৩টি৷

নাহিদ বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল৷ বিশ্বের অনেক ধনী দেশও বিনামূল্যে বই দিতে পারেনি৷ কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে৷তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের এ সাফল্যের কারণেই জাতিসংঘরের মহাসচিব বাংলাদেশকে বিশ্বের রোলমডেল বলে উল্লেখ করেছেন৷ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বলেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশই পারে, আর কেউ নয়৷ আর ইউনেস্কো বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে৷

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য আকাশচুম্বী৷ নারী-পুরুষের সমতা বা শিৰাৰেত্রে ছেলেমেয়েদের সমতা লক্ষ্যমাত্রার ৩ বছর আগেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে৷ যা বিশ্বের কোন দেশ পারেনি৷

তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা আজ ভয় পেয়ে গেছে৷ বছরের প্রথম দিন সারা দেশে শিশুকিশোর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মুখরিত পদচারণায় তারা আজ ভীত সন্ত্রসত্ম৷ তবে তাদের ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে৷ এ জন্য বই উত্‍সবের দিন তারা হরতাল দিয়েছে৷ যুদ্ধাপরাধীর রায়ের বিরম্নদ্ধে তাদের এ হরতাল বলে তারা প্রচার চালালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য- শিশুদের শিক্ষা জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি৷নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে চাইছি৷ এ জন্যই সরকার ২০১০ সালে সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে৷

তিনি বলেন, সেই আলোকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে৷ যেন গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের পাশাপাশি বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে নিজেরাই নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে, বর্তমানে সে শিক্ষাই দেয়া হচ্ছে৷

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোসত্মাফিজুর রহমান বলেন,শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এ বিনিয়োগ কখনই বৃথা যাবে না৷ কারণ, এখাতের বিনিয়োগ হচেছ দেশের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ৷

তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকরা যেখানে বেশি দরদী, সেখানকার শিক্ষার্থীরা বেশি ভাল করেছে৷ তাই দেশের সব স্কুলের শিৰকদের বলব: আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো বেশি দরদী ও মনোযোগী হন, তাহলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের রেজাল্টও আরো ভাল হবে৷পাঠ্যপুসত্মক উত্‍সব ২০১৫ উপলক্ষে মতিঝিল সরকারী বালক বিদ্যালয়কে নানা রঙের বেলুন ও কাপড় দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত এবং লালগালিচা বিছিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়েছে৷ স্কুল জুড়েই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উত্‍সব আমেজে মেতে উঠতে দেখা গেছে৷ শিক্ষার্থীদের ব্যান্ডের তালে তালে দুই মন্ত্রী লাল ও হলুদ রঙের গ্যাস বেলুন উড়িয়ে উত্‍সবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন৷ এ সময় মাঠভর্তি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হাতের বই শূন্যে উঁচিয়ে ধরে৷ তখন আকাশে উড়তে থাকে ঝলমলে কাগজের টুকরো৷

নতুন বছরের কারিকু্যলামে এবারই প্রথম ৮ম শ্রেণীতে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং ৯ম শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয় চালু করা হয়েছে৷ জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সাথে মাদ্রাসা সত্মরের বইয়ের সঙ্গতিবিধান এবং ইবতেদায়ী সত্মরের সকল বই ৪ রঙে মূদ্রণ করা হয়েছে৷