1420373356

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ জানুয়ারি: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি বরং নিরাপত্তা চেয়ে থানায় করা জিডির আলোকেই তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷রোববার দুপুরে কাছে এ দাবি করেছেন টওতিমন্ত্রী৷

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন বেগম জিয়ার ওপর হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা করে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি জিডি করেছিলেন খালেদার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া৷

জিডি প্রসঙ্গে ওইদিন আইনজীবী প্যানেলের আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই জিডিটি শুধু বিএনপিরচেয়ারপারসনের নিরাপত্তার জন্য নয়৷ এটি তার আইনজীবী ও নেতাকর্মীসহ সবার নিরাপত্তার স্বার্থে দায়ের করা হয়েছে৷স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও ডিএমপি মুখপাত্র নিরাপত্তার কথা বললেও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, চেয়ারপারসনকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করে বলেছে, নিরাপত্তা দিতেই গুলশানে ওই অফিসের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷

কেন তার নিরাপত্তার প্রয়োজন হলো সে ব্যাখ্যা পুলিশের কাছে পাওয়া যায়নি৷ তবে এ নিয়ে একই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দুই নেতার দুই রকম কথা এসেছে৷খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপির নেত্রী তার দলের কর্মী ও জঙ্গিদের হামলার শিকার হতে পারেন এমন গোয়েন্দা তথ্যেই নিরাপত্তার এ ব্যবস্থা৷আর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়া রাতে নয়াপল্টনে আসতে চেয়েছিলেন বলেই পুলিশ তাকে আটকেছে৷

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তেজনা তৈরি হলে শনিবার রাতে নয় পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ৷

ওই পরিস্থিতিতে খালেদা তার গুলশানের কার্যালয় থেকে নয়া পল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ পথ আটকায়৷ ফলে তাকে অফিসেই রাত কাটাতে হয়৷তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস রাতেই সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে৷

রোববার সকালে গুলশানের৮৬ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার দুই মাথায় দুটি তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ৷ যান চলাচল বন্ধ রাখার পাশাপাশি কার্যালয় থেকে ১০ গজ দূরে পুলিশ সদস্যদের বহনকারী বড় আকারের দুটো গাড়ি আড়াআড়ি রেখে আটকে দেওয়া হয়েছে বের হওয়ার পথ৷

তবে রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন,খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন৷ তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷বিএনপি নেত্রী নিজে থেকে নিরাপত্তা চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন৷ সুতরাং গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই তিনি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন৷ তা বিবেচনা করে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে৷প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের দায়িত্ব বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷খালেদা কি ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ ঠিক নয়৷

খালেদা চাইলে কোথাও যেতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে৷তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় পুলিশের অভিযানের বিষয়টি অস্বীকার করেন এই যুগ্ম কমিশনার৷

এদিকে দুপুরে সেগুনবাগিচায় এক আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার উপর তার দলের কর্মীদের হামলা হতে পারে৷ তিনি জঙ্গিদের দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারেন৷ যে কোনো সময় জঙ্গিরা তার উপর ছোবল মারতে পারেন৷ এমন তথ্য গোয়েন্দারা আমাদের দিয়েছে৷ এজন্যই তার কার্যালয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷তিনি বলেন, খালেদা ওপর হামলার মতো অস্বস্তিকর কোনো পরিস্থিতি’ সরকার চায় না৷আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আপনারা এখন যে হিসাব করেন, সেই হিসাব আমাদের আগেই করা থাকে৷

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে কামরুল বলেন, আন্দোলন করবেন, কিছুই করতে পারবেন না৷ শুধুমাত্র পত্র-পত্রিকা ভীতির খবর না দিলে আপনাদের অস্তিত্বও পাওয়া যাবে না৷বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এ আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল৷

আর প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বিএনপির নেত্রী নয়াপল্টনে আসতে চেয়েছিলেন৷ টওকৃতপক্ষে খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে এসে সারাদেশের সন্ত্রাসীদের আসতে বলতেন৷তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আসলে অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে যাওয়ার নাম করে নয়া পল্টনে গিয়ে বিএনপি অফিসে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন৷পুলিশ তো খালেদা জিয়াকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে চেয়েছিল৷ কিন্তু খালেদা জিয়া বাসায় যাবেন না কেন? তিনি গুলশানের কার্যালয়ে বসে নীল নকশা আঁকছেন৷ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সোমবার কাউকে রাস্তায় বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না৷ রাজপথ থাকবে আওয়ামী লীগের দখলে৷