bnp-nator-jugantor_200054

দৈনিকবার্তা-নাটোর, ৫ জানুয়ারি: নাটোরের তেবাড়িয়া হাটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর গুলিতে দুই ছাত্রদল নেতা রাকিব হোসেন ও রায়হান আলী নিহত ও ১৫ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে৷ এই হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নাটোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে ২০ দলীয় জোট৷ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ আইন শৃঙ্খলা রৰায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷ নিহতদের লাশ নাটোর আধূনিক সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে৷ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক বলেছেন, সকাল ১১টার দিকে ২০ দলীয় জোটের জনসমাবেশে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে রওনা হওয়ার প্রস্তুতির সময় পুলিশের সামনেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে গুলি করে দুই ছাত্রদল নেতা রাকিব হোসেন ও রায়হান আলীকে হত্যা করেছে৷ এ সময় আরো ১৫ থেকে ২০ জন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন৷ অপরদিকে নাটোর সদরের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেছেন, তেবাড়িয়ায় বিএনপির নিজেদের কোন্দলে দু’জনকে হত্যা করে এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে৷ বিএনপি কমর্ীরা বৃষ্টির মতো শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে৷ নিহতের মধ্যে রায়হান আওয়ামী লীগ পরিবারের ছেলে বলেও তিনি দাবী করেন৷

প্রত্যক্ষদশর্ী ও এলাকাবাসী জানায়, শহরের তেবাড়িয়া উত্তরপাড়া নিহত ছাত্রদল নেতা রাকিব হোসেন ও তার ভাগ্নে রায়হান সোমবার সকালে অন্য নেতাকমর্ীদের জেলা ২০দলীয় জোটের ডাকা সমাবেশে আসার জন্য সাথে তেবাড়িয়ায় আসে৷ এ সময় তাদের উপর হামলা হলে দুজনেই বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরম্নতর আহত হয়৷ তাত্‍ৰনিক তাদের নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিত্‍সক তাদের মৃত ঘোষণা করেন৷ নিহত রাকিব হোসেন তেবাড়িয়া উত্তরপাড়ার চাঁন মিয়ার ছেলে ও রায়হান আলী সিংড়া উপজেলার গায়েনপাড়া এলাকার দিনমুজুর দেলোয়ার হোসেনের ছেলে৷ রাবি্ব নামে ছয় বছর বয়সী এক সনত্মানের জনক রায়হান রোববার বিকেলে নাটোরে তার মামা রাকিব হোসেনের বাড়িতে বেড়াতে আসে৷ সোমবার সকালে ঘটনার পর পরই জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদে বিৰোভ মিছিল বের করে বিএনপি নেতাকর্মীরা৷

ঘটনার প্রত্যক্ষদশর্ী নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফয়সাল ইসলাম আবুল বেপারী বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের জনসমাবেশে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে রওনা হওয়ার প্রস্তুতির সময় শতাধিক সন্ত্রাসী নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হঠাত্‍ গুলি বর্ষণ করে পালিয়ে যায়৷ পরে গুলিবিদ্ধ রাকিব হোসেন ও রায়হান আলী নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে মারা যান৷ তিনি বলেন নিহত রাকিব হোসেন ছাত্রদলের নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজ শাখার ক্রীড়া সম্পাদক ও রায়হান আলী কমর্ী৷

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, বিনা ভোটে নির্বাাচিত নাটোর সদরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন ছাত্রদল নেতা সুজনকে হত্যা করে হাত রঞ্জিত করেন আবার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বর্ষপূতির দিন দুইজন ছাত্রদল নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করলেন৷ নাটোরের জনগণ এই তিনটি হত্যারই বিচার দাবী করে৷ অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেছেন, তেবাড়িয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের নিজেদের সংঘর্ষে দুই ছাত্রদল কমর্ী খুন হওয়ার পর এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে৷

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাকিব হোসেন ও রায়হান আলী মারা গেছেন৷ ময়নাতদনত্ম সম্পন্ন হলে মৃতু্যর কারন জানা যাবে৷

নাটোরের পুলিশ সুপার বাসুদেব বণিক বলেছেন, তিনি ঘটনা শোনা মাত্রই ঘটনাস্থলে যান৷ তিনি বলেন বিষয়টি তদনত্ম করে দেখা হচ্ছে, তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে মিছিলের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ অভিযুক্তদের বিরম্নদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ নাটোর সদর থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম খান বলেছেন, নিহত রাকিব হোসেনের ভাই আনজুল ইসলাম বাদী হয়ে এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরর করবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷

এদিকে, নাটোরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে৷ নাটোর রেল ষ্টেশনের একতার মোড় থেকে কালো পতাকা মিছিল বের হয়ে শহরের আলাইপুরে বিএনপি অফিসের সামনে এসে শেষ হয়৷ পরে সেখানে আয়োজিত সমাবেশে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল হক৷

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ রমিহ নেওয়াজ, নলডাঙ্গার উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম আফতাব, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম লিটন, সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী, যুবদল নেতা জহির উদ্দিন, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেন তুষার৷ বক্তারা দুই ছাত্রদল নেতা হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার নাটোরের সতাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করে বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যনত্ম আন্দোলনে মাঠে থাকার অঙ্গীকার করেন৷