01বিরোধী দলকে আন্দোলন করতে না দেওয়া ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।
আজ দৈনিকটির সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, ‘গণতন্ত্র মানে কেবল শাসকের অভিপ্রায় নয়, বিরোধীদেরও তাতে প্রতিবাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার স্বীকৃত। বিএনপি নেতৃত্ব যদি তার বয়কট করা নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে চায় এবং নতুন করে নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে, তবে তা নিষিদ্ধ করা ও নেতাদের গ্রেফতার করা কেমন ধরনের গণতন্ত্র?’
‘গণতন্ত্রের উদ্বেগ’ শিরোনামে ওই নিবন্ধে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ অবশ্যই দরিদ্র দুনিয়ায় গণতন্ত্রের অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কিন্তু সেই কারণেই, সে দেশে গণতন্ত্র যেভাবে খ-িত হচ্ছে, তাতে উদ্বেগের বড় কারণ আছে। এক বছর আগের পার্লামেন্ট নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই তাতে জয়ী হয়। বিরোধী বিএনপি ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশময় প্রতিবাদ-সমাবেশের ডাক দিলে তা বানচাল করতে হাসিনা ওয়াজেদের সরকার গোটা দেশে কার্যত জরুরি অবস্থার অনুরূপ নিরাপত্তার কড়াকড়ি কায়েম করে, বিরোধী দলনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ‘তাঁরই নিরাপত্তা’র নামে কার্যত অন্তরিন করা হয়। প্রতিবাদী আন্দোলন উত্তাল হয়ে উঠেছে। শাসক ও বিরোধী দলের সমর্থকদের মধ্যে দেশব্যাপী সংঘর্ষ, তাতে মানুষ হতাহত হচ্ছেন, দোকানপাট ভাঙচুর হচ্ছে, ঘরবাড়ি ভস্মীভূত, রাস্তায় লুঠপাট, গুলিবোমা, ইটপাটকেল। বাংলাদেশ নতুন করে অশান্ত, অগ্নিগর্ভ।’
এতে বলা হয়, ‘এই পরিস্থিতি এড়ানো কি অসম্ভব ছিল? হাসিনা ওয়াজেদ ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সম্পর্কের শৈত্য ও বৈরিতা সত্ত্বেও বিরোধী পক্ষের আন্দোলনের পথ খোলা রাখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামির যৌথ আন্দোলন সহজেই হিংসাত্মক হয়, তা সত্য। কিন্তু অতিরিক্ত দমন নীতি জনসাধারণের এক বৃহৎ অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাইরে আসার পথটিই রুদ্ধ করতে পারে, স্বাভাবিক নিষ্ক্রমণের পথ না পেয়ে এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ অন্তর্ঘাতেই বিস্ফোরণের পথ খুঁজবে। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়াও দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দলের গণভিত্তি যথেষ্ট মজবুত। তাঁকে কার্যত অন্তরিন রেখে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার উদ্যোগে কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ক্রিয়া নেই তো?’
পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে আনন্দবাজার বলেছে, ‘নওয়াজ শরিফের দল ‘কারচুপি করে ভোটে জিতে সরকার গড়েছে, অতএব সেই নির্বাচন বাতিল’ করার দাবিতে তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খান যে প্রবল দেশব্যাপী প্রতিবাদ-আন্দোলন সংগঠিত করেন, তা পাক সরকারের পক্ষে এক বিপুল সঙ্কট ঘনিয়ে তুলেছিল। কিন্তু নওয়াজ শরিফ ইমরানসহ বিরোধী পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসে দেশে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়েছেন। বিরোধী পক্ষকে দমন করা নয়, দেশে সুশাসন চালানোই যে একটি নির্বাচিত সরকারের জনাদেশ, তা বুঝতে শরিফের অসুবিধা হয়নি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি এক নয়, কিন্তু পাকিস্তানের সমস্যা কিছুমাত্র কম বলে মনে করারও কারণ নেই। গণতন্ত্রের স্বার্থেই নমনীয় হওয়া দরকার। আর শাসক পক্ষের দিক হতেই নমনীয়তা বেশি জরুরি। নতুবা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা প্রবল, মৌলবাদীরা তার সুযোগ নিতে পারে। তার পরিণাম কেবল দেশের উদীয়মান ও সংকটদীর্ণ অর্থনীতি নয়, দেশের শাসক দলের পক্ষেও শেষ বিচারে বিপজ্জনক।