ATYT-1420768901

দৈনিকবার্তা-ঢাকা ৯ জানুয়ারি: বিএনপিচেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কমিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে দ্বিতীয়বার লাগানো তালাটিও খুলে দেয়া হয়েছে৷শুক্রবার সকাল থেকে কার্যালয়ের সামনে ও কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে ৮৬ নম্বর রোডের মাথায় প্রায় ৩০ জন পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে৷ অথচ গত শনিবার রাত থেকে ওই রোডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগনিত সদস্যদের উপস্থিতি ছিল৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তাজনিত কারণেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷

কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাখা জলকামানটি আরেকটু সরিয়ে দক্ষিণ পাশ্বর্ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ তবে কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার বাসায় যাওয়ার রাস্তায় আগের মতো দুইটি পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড রয়েছে৷এদিকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরে ফের তালা ঝুলানোর খবর শোনা গেলেও সকালে থেকে সেখানে তালা দেখা যায়নি৷গুলশান কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত ওসি (তদন্ত) ফিরোজ সংবাদকর্মীদের বলেন, নিরাপত্তা আগের মতোই রয়েছে৷ তবে কার্যালয়ের সামনের অতিরিক্ত পুলিশকে প্রধান সড়কে রাখা হয়েছে৷তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু পুলিশকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে৷ তবে প্রয়োজন হলে আবার তাদেরকে নিয়ে আসা হবে৷

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিনটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ৩ জানুয়ারি গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়৷ তখন থেকে কার্যত তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন৷ সোমবার সমাবেশে যোগ দিতে কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলেও পুলিশ তাকে বের হতে দেয়নি৷

এ সময় মহিলা দলের কয়েকজন ওই কার্যালয়ের গেট ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ পিপার সপ্রে করে৷ পরে তিনি কার্যালয়ের ভেতরে দাঁড়িয়েই গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন৷ এ সময় তাকে কাশতে ও চোখ মুছতে দেখা যায়৷ ওইদিনই সন্ধ্যার দিকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ানো নারী পুলিশ সদস্যরা কিছুটা সরে অবস্থান নিয়েছেন৷ এ সময় ফটকের তালা খোলা দেখা যায়৷ প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, দুপুরের আগে কোনো এক সময় তালা খোলার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আবার আটকে দেওয়া হয়৷ সন্ধ্যার পর তা আবার খুলে দেওয়া হয়৷ এরপর রাত ১১টার দিকে শেষ দফায় আবার তালা লাগানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়৷

কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আগের মতো কড়াকড়ি রয়েছে৷ গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, এই কার্যালয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে আগের মতো কড়াকড়ি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ পাহারাও আগের মতো বহাল৷ কার্যালয়ের এক পাশে একটি জলকামান, আরেক পাশে দুটি প্রিজন ভ্যান আড়াআড়ি করে রাখা৷ ফটকের দুই পাশে ও কার্যালয়ের সামনে ৮৬ নম্বর সড়কের দুই মুখে পুরুষ পুলিশ সদস্যদের রাস্তা আটকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে৷ এর মধ্যেই বিশিষ্টজনেরা সেখানে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন৷ স্বজনেরা তাঁকে খাবার সরবরাহ করেন৷ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতো রয়েছে বলে জানা গেছে৷

গুলশানের রাজনৈতিক কাযার্লয়ে অবরুদ্ধ বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়ার বাধা এখন কাভার্ড ভ্যান আর একটি জলকামান৷শুক্রবার বিকেল ৩টায় সরেজমিনে দেখা যায়, গুলশান-২ সেক্টরের ৮৬ নম্বর রোডে অবস্থতি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কাযার্লয়ের মূল ফটকের সামনে পুলিশি কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল করা হয়েছে৷ খুলে দেওয়া হয়েছে ফটকের তালা৷

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা পর্যন্ত কাযার্লয়ের মূল ফটকে হেলান দিয়ে ডজনখানেক নারী পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও শুক্রবার এর সংখ্যা কমে পাঁচজনে নেমে এসেছে৷ মূল ফটক থেকে খানিকটা দূরে অবস্থান করছেন তারা৷অন্যদিন কার্যালয়ের সামনে পুরুষ পুলিশের দু’টি মানবপ্রাচীর থাকলেও শুক্রবার বিকালে তা দেখা যায় নি৷কার্যালয়ের আশপাশে বেশ কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও গত ৬ দিনের তুলনায় তার সংখ্যা খুবই কম৷তবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আগের মতোই কড়াকড়ি আরোপ অব্যাহত রয়েছে৷

এদিকে, মূল ফটকের তালা অপসারণ ও পুলিশের সংখ্যা কমানো হলেও কার্যালয়ের থেকে ৩০ ফুট দক্ষিণে দৈত্যাকৃতির একটি জলকামান সড়কের ওপর এখনো আড়াআড়িভাবে রাখা আছে৷ ওই জলকামানের পাশে যে জায়গাটুকু অবমুক্ত রয়েছে সেখান দিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়ি তো দূরের কথা একটি রিকশা পার করারও সুযোগ নেই৷অন্যদিকে, গুলশান কার্যালয়ে থেকে ১০ ফুট উত্তরে পুলিশের দুটি কাভার্ড ভ্যান এমনভাবে আড়াআড়িভাবে রাখা হয়েছে যে সেখান দিয়ে একজন মানুষ পার হওয়াই কঠিন৷খালেদা জিয়া তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসা অথবা অন্য কোথাও যেতে চাইলেও ওই জলকামান এবং কাভার্ড ভ্যান তাকে আটকে দেবে৷

সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নিজ বাসায় যাওয়ার প্রয়োজনে জলকামান ও কাভার্ড ভ্যানের ব্যারিকেড ভাঙবেন- এমনটিও ভাবতে পারছেন না তার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা৷এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ তার একান্ত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, খালেদা জিয়ার বের হতে বাধা কোথায় তা আপনারা সরেজমিনে এসে দেখে যান৷তিনি বলেন, বাসায় ফেরার জন্য সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে যদি জলকামান ও কাভার্ড ভ্যানের ব্যারিকেড ভাঙতে হয় তাহলে আর গণতন্ত্র থাকে কোথায়?

তবে গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) নুরুল আলম বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি বাসা ফিরতে চান তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা দেওয়া হবে৷

রাস্তার ওপর আড়াআড়িভাবে রাখা জলকামান ও কাভার্ড ভ্যান সরানো হবে কিনা জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নিরাপদে বাসায় ফেরার জন্য যা যা করার দরকার সবই করবে পুলিশ৷শনিবার (৩ জানুয়ারি) রাত ১১ টা ৪০ মিনিটে নিজ কাযার্লয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর ৫ জানুয়ারি বিকাল ৩ টা ৪৫ মিনিটে অফিস থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া৷ এর পর ৪ দিন কেটে গেলেও আর বের হবার চেষ্টা করেন নি তিনি৷

আস্তে আস্তে বাধাগুলো দূর হলেও নিজ কার্যালয় থেকে কবে তিনি বের হবেন সে ব্যাপারে কোনো কিছু বলছেন না কেউ৷