Hartal

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ১২ জানুয়ারি: এবারেও হরতালের ডাক দিয়ে মাঠে ছিলেন না গাজীপুর বিএনপি’র কোন শীর্ষ নেতা৷ দলের শীর্ষ পর্যায়ের কোন নেতা-কর্মীকে মাঠে না পেয়ে হতাশ ও ৰুব্ধ মাঠ পর্যায়ের দলের নেতা-কর্মীরাও জেলায় সোমবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালকালে পিকেটিং বা সমাবেশ করে নি৷ ফলে অতীতের মতো সোমবারের হরতালও গাজীপুরে পালিত হয়নি৷ তবে ২০ দলের শরীক দল জামায়াত শিবিরের কর্মীরা এদিন জেলার কয়েকটিস্থানে ঝটিকা হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে আন্দোলন কর্মসূচিকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে৷ এদিকে নাশকতা করার অভিযোগে পুলিশ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ অনত্মতঃ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে৷

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘অবরম্নদ্ধ’ করার প্রতিবাদে এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ছাত্রদলের পাশাপাশি গাজীপুর জেলা বিএনপি এজতেমার পর দিন সোমবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়৷ এছাড়াও অব্যাহত রয়েছে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি৷

এলাকাবাসি ও পুলিশ জানায়, গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের ডাকা সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কালে সকাল থেকেই জেলার সড়ক ও মহাসড়ক গুলোতে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করলেও দূর পালস্নার যানবাহন চলাচল করতে তেমন একটা দেখা যায় নি৷ জেলার সবক’টি বিপণী বিতান, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠাণ, মিল-কারখানা, অফিস খোলা ছিল৷ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল৷ তবে সোমবার সকালে হরতাল সমর্থিতরা ঝটিকা হামলা চালিয়ে গাজীপুর জেলা শহরের জয়দেবপুর রেলক্রসিং এলাকায় একটি সিমেন্টবাহী ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় পিকেটাররা৷ পুলিশ এবং স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গেই আগুন নিভিয়ে ফেলে৷

দুপুরে পৌণে ১২টার দিকে ঢাকা-গাজীপুর সড়কে গাজীপুর মহানগরের নলজানি এলাকায় পিকেটাররা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে৷ এসময় তারা একটি সিএনজি অটোরিকশায় পেট্রোল ছিটিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ আগুন নেভানোর চেষ্টার অপরাধে তারা চালক আসাদকে (২৭) মারধোর করে হাত ভেঙ্গে দিয়ে পালিয়ে যায়৷ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে৷ আহত চালক গাজীপুরের শ্রীপুরের মোহাম্মদ আলীর ছেলে৷ এছাড়া সোমবার ভোররাতে মহানগরের ধীরাশ্রম এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা৷

এদিকে, শ্রীপুর থানার ওসি মহসিন উল কাদির জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার গারারন এলাকা থেকে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তার বিরম্নদ্ধে শ্রীপুর মডেল থানায় দ্রম্নত বিচার আইনে মামলা রয়েছে৷ এছাড়াও জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা জানান, নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সোমবার সকালে শহরের জোড়পুকুর পার এলাকা থেকে সোহাগকে (২০) এবং বোর্ডবাজার থেকে সাদেকুর রহমান (২৫) নামে ছাত্রদলের দু’কর্মীকে আটক করা হয়৷

গাজীপুরের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর (ডিআইও-১) সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযান চালিয়ে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে ২০ দলীয় জোটের আরো দুই কর্মীকে আটক করা হয়েছে৷ অপরদিকে সকাল সোয়া ৭টার দিকে টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে ছাত্রদলের একটি ঝটিকা মিছিল থেকে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়৷ এসময়ভাঙচুরের শিকার হয় আরও কয়েকটি যানবাহন৷ খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ টঙ্গী মডেল থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আরিফ হাওলাদারসহ দুই জনকে আটক করে পুলিশ৷

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, গাজীপুরে রয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েক নেতা৷ এদের মধ্যে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান একজন, তিনি বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, এছাড়াও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল একই সঙ্গে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার বিএনপি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার শ্রমিকদলের কেন্দ্রিয় কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি৷ তাছাড়া বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আসম হান্নান শাহ্র বাড়িও গাজীপুরে৷ অথচ প্রভাবশালী এসব নেতাদের অধিকাংশই ন্বপরিবারে গাজীপুরের বাইরে বান করেন৷

দলের স্থানীয় নেতা কর্মীদের অভিযোগ দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য এসব নেতাদের খুব একটা মাঠে পাওয়া যায় না৷ অথচ দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে স্থানীয় নেতা কর্মীরা বিভিন্ন মামলার আসামী হচ্ছেন, গ্রেফতার ও পুলিশী হয়রানীর শিকার হচ্ছেন৷ অপরদিকে জেলার এসব হেভিওয়েট নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং নিজেদের সুবিধা নিচ্ছেন৷ ফলে রাজধানীর পাশর্্ববর্তী এ জেলায় এ পর্যনত্ম সরকার বিরোধী আন্দোলনের কোন কর্মসূচি তেমন একটা সফলভাবে পালন হয় নি৷ এতে স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে ৰোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে৷ গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে খালেদা জিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হলেও স্থানীয় কর্মীরা এসব নেতাদের মাঠে পায় নি৷ এমনকি তাদের অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল৷

এছাড়াও গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি’র কেন্দ্রিয় ঘোষিত কর্মসূচি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের জন্য জেলার শীর্ষ নেতারা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কোন নিদের্শনা বা কর্মসূচী না দেওয়ায় গাজীপুরের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হতাশ ও ৰুব্ধ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনত্মতঃ ৬০ জন নেতা কেন্দ্রিয় কর্মসূচি বাদ রেখে গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে আনন্দ ভ্রমণে সুন্দর বনে যান৷ সুন্দর বনে আনন্দ ভ্রমণ শেষে তারা ৮ ফেব্রম্নয়ারি গাজীপুরে ফিরে আসেন৷