anisul-haque_205152

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি: এক বছর শান্ত থাকার পর দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সহিংসতা ফিরে আসার প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন করা হবে৷ তিনি বলেন, হরতালে নামে এখন যেটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে সন্ত্রাস৷ এগুলো মোকাবেলায় সন্ত্রাস দমন আইন আছে৷ এখন এ আইন প্রয়োগ করা হবে৷বিএনপির পলাতক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার৷

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য দেন৷ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন৷ আইনমন্ত্রী বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি পলাতক৷ তাকে ফিরিয়ে আনা হবে৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে আইনে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে সে আইন করা হয়৷ হরতাল বন্ধ জনগণের দাবি হলে আইন করা হবে৷ হরতালের নামে এখন যা হচ্ছে তা সন্ত্রাস৷ সন্ত্রাস দমন আইন আছে৷ এখন এ আইন প্রয়োগ করা হবে৷পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংলাপে যাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, পাকিস্তানে ১৩২ স্কুল শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে তালেবানরা৷ সেখানে কি সংলাপ সম্ভব?৷ তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা করা না গেলে, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা নয়৷ আর আলোচনার জন্য এজেন্ডা কী? ডবশৃঙ্খলা করে আলোচনার জন্য বলা হলে বসবো না৷ কেউ যদি দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চান তাহলে একশ’বার আলোচনায় বসবো৷

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করতে সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত৷ আইন সবার ঊধের্্ব৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্ত করতে সময় লাগছে৷ তার মানে এই নয় যে, তদন্ত ধামাচাপা পড়ে আছে, নো৷ তদন্ত অব্যাহত আছে৷ তদন্তের মাধ্যমে আসল খুনি ধরা পড়বে৷ এখানে কিছু বিষয় আছে, যা বললে তদন্তে ব্যাঘাত ঘটবে৷ গণমাধ্যমের পরিস্থিতি সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন সরকার সহ্য করবে না৷

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমাকে বিশ্বাস করুন৷ আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ নুর চৌধুরী কানাডায়, রাশেদ আছেন ইউএসএ৷ তারা যেন ওই দেশ থেকে পালাতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে আইনে জনগণের সম্পৃৃক্ততা রয়েছে, সে আইন করা হয়৷ হরতাল বন্ধের জন দাবি উঠলে এ বিষয়েও আইন করা হবে৷

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিকে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া৷ এর মধ্যে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলায় বিএনপি ও শরিকদের হরতাল চলছে, নাশকতায় প্রাণহানি ঘটছে৷

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যেই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে আসেন আইনমন্ত্রী৷তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আমলে হরতাল বললে গাড়ির চাকা বন্ধ হয়ে যেত৷ জনগণ বের হত না৷ এখন হরতাল ডেকে ফার্মগেইটে দুইটা ককটেল মারে৷ জনগণকে ভয়ভীতি দেখায়৷ সারা জীবন কষ্ট করে কেনা গাড়ি নিয়ে কে বেরুবে?

এর আগে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালে বছরজুড়ে সংঘাত সহিংসতার কারণে ব্যবসায়ীরা আইন করে হরতাল বন্ধের দাবি জানিয়েছেন একাধিকবার৷আর গত কয়েকদিনের হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপূরণীয়’ ক্ষতির কথা জানিয়ে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বন্ধে তারা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবছেন৷

হরতাল বন্ধের দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগের গত সরকারেও সংসদে আলোচনা হয়েছে৷ আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের কর্মসূচির সমালোচনা করে আইন করার কথা বলেছেন৷ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷

তিনি বলেন, আর আলোচনার জন্য এজেন্ডা কি হবে? বিশৃঙ্খলা করে আলোচনার জন্য বলা হলে বসব না৷ কেউ যদি দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় তাহলে তাদের সঙ্গে একশবার আলোচনায় বসব৷ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৫ জানুয়ারি আটকানো না হলে ওই দিন ৫০০ লোক মারা যেত বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক৷ খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, অবরোধের নামে বিএনপি যা করছে, তা সন্ত্রাস৷ বিএনপি হরতাল নয়, সন্ত্রাস করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

বিএনপিকে সভা, সমাবেশ করতে না দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, তাঁরা সারা দেশে সভা করেছেন৷ বাধা দেওয়া হয়নি৷ এখন বিএনপি সন্ত্রাস করছে৷ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য সভা করতে দেওয়া হয়নি৷বিএনপির উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্ন আসে না৷ আলোচনার কথা বললে এজেন্ডা কী? এজেন্ডা পরিষ্কার করতে হবে৷

তিনি বলেন, একদিকে সন্ত্রাস করবেন আরেক দিকে আলোচনার কথা বলবেন-সেটা তো হতে পারে না৷ গান পয়েন্টে বোমা মেরে এই সরকারকে আলোচনায় বসানো যাবে না৷ তবে গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব হলে আলোচনা হবে বলে জানান মন্ত্রী৷ কিন্তু তার আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ সন্ত্রাস দমনের জন্য আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা সেই আইন প্রয়োগ করবেন৷

মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিচারে আইনের খসড়া এ মাসের শেষে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী৷ আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের আইন হবে বলেও জানান তিনি৷