বিজিবি’র গুলি চালাবার যে নির্দেশ সম্পূর্ণ এখতিয়ার-বহির্ভূত ও আইন-পরিপন্থী

37729_00

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি: সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র মহাপরিচালক রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গুলি চালাবার যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাতে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন নির্দেশ সম্পূর্ণ এখতিয়ার-বহির্ভূত ও আইন-পরিপন্থী। ভোটার-বর্জিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্রমাগত অস্বীকার করে আসায় দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘণীভূত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-(বিএনপি)র জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন ।বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির পুরো বক্তব্য এ ওয়ান নিউজ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো

সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র মহাপরিচালক রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গুলি চালাবার যে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা তাতে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন নির্দেশ সম্পূর্ণ এখতিয়ার-বহির্ভূত ও আইন-পরিপন্থী।

ভোটার-বর্জিত ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্রমাগত অস্বীকার করে আসায় দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘণীভূত হয়েছে।

গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে একটি জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছে। তারা চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান তো দূরের কথা বরং এ সংকটকে স্বীকারই করছে না। রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ভুত চলমান অচলাবস্থাকে ক্ষমতাসীনেরা আইন-শৃংখলার সমস্যা হিসেবে প্রচার করছে এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীসমূহ ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে সব কিছু দমিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীনদের অনেকেই চরম উস্কানিমূলক হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। পাশাপাশি আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতি উৎসাহী কতিপয় কর্মকর্তা বেআইনি নির্দেশ এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য প্রকাশ্যে দিতে শুরু করেছেন। এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। আমরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহকে আইনসম্মত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এই শাসক দল ১৯৭৪ সালে বিরোধী দল দমন, সংবাদ-মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ, বিরোধী দলকে দেখা মাত্র গুলি করার জন্য রক্ষীবাহিনীকে নির্দেশ এবং মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সন্তোষে অবরুদ্ধ রেখে জনগণের সকল মৌলিক মানবিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। সেই একই ধারায় তারা এবার বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানে ১২ দিন ধরে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও আন্দোলনকে তারা নিষ্ঠুর পন্থায় দমন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে গত কয়েকদিনে অন্তত: ১৩ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন কয়েক শত।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। তাদের অনেকের উপর উৎপীড়ন করা হচ্ছে। ধরে নিয়ে অনেককে হত্যা ও গুম করে ফেলা হচ্ছে। নারীদেরকে পর্যন্ত নির্যাতন করা হচ্ছে। ধরে নিয়ে গিয়ে আটকাবস্থায় তাদের ওপর দৈহিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাড়ায় মহল্লায় সন্ত্রাসীদের সংঘবন্ধ করা হচ্ছে।

তারা প্রবীণ কূটনীতিক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের অন্যতম উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর উপর গুলি চালিয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বাসা ও অফিসে গুলি ও বোমা হামলা করছে।

সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের ওপরেও বিভিন্ন জায়গায় হামলা করছে। সংবাদ মাধ্যমে সে সবের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হলেও কাউকে ধরা হচ্ছেনা। অনেক জায়গায় অস্ত্র-গুলি-বোমাসহ গ্রেফতার হলেও সরকারের উর্ধতন মহলের নির্দেশে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

একাধিক বার সহিংস অবরোধ ও অসহযোগে দেশ অচল করা, গান পাউডার দিয়ে চলন্ত বাসে অগ্নিসংযোগ করে যাত্রীদের পুড়িয়ে মারা, অফিস যাত্রীদের দিগম্বর করা, সমুদ্র বন্দর অচল করা, রেল স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়া, বছরে ১শ ৭৩ দিন হরতাল করা এবং পেট্রোল বোমা মেরে ও লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার অতীত কলঙ্কিত রেকর্ডধারীরা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। তারা এখন আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও জনসাধারণকে রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। উপরন্ত পুলিশ পাহারায় তারা ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের দিয়ে মিছিল-সমাবেশ করাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর প্রহরায় চলাচলকারী সীমিত সংখ্যক যানবাহনে বোমা হামলায় বা আগুনে পুড়িয়ে নারী ও শিশুসহ নিরাপরাধ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এসব নাশকতার প্যাটার্নের সঙ্গে শাসকদের অতীত হীন অপতৎপরতাসমূহ হুবহু মিলে যায়। তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব অঘটন ঘটাচ্ছে। এর সঙ্গে জনগণের আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ সবের দায়-দায়িত্ব পুরোপুরি ক্ষমতাসীনদের ওপরেই বর্তাবে। বিরোধী দলের ওপর নাশকতার দায় চাপিয়ে দমন-পীড়ন ও হত্যালীলা জোরদার করতে তারাই সুপরিকল্পিতভাবে এসব ঘৃণ্য নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমরা এসব অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা এবং হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি জানাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের হারানো মৌলিক ও ভোটাধিকার এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সফল করেই এসব অপতৎপরতার জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।