20130127-192317_55605

দৈনিকবার্তা=ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সফলতা না আসা পর্যন্ত ঘরে ফিরছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া৷সরকার পতনের ধারাবাহিক আন্দোলনে অবরোধ কর্মসূচি টানা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট৷পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নতুন কর্মসূচির কথাও ভাবছেন তারা৷ তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর আস্থা রাখছে দলীয় নেতাকর্মীরা৷
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানে তার নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷ কার্যালয় ঘিরে রয়েছে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি৷ ওই রাস্তায় সীমিত করা হয়েছে যান চলাচল৷সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনকে আরওবেগবান ও সফল করতে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত৷ সরকার বিরোধী জোটের শক্তিধর দু’টি দল তাদের এ বার্তায় চলমান আন্দোলনকে যেকোন মূল্যে সফল করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন৷ বিএনপি-জামায়াতের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে৷

সূত্রগুলো জানায়, বিগত দিনগুলোতে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে৷ কিন্তু সরকারের মারমুখী ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি৷ তবে এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ এবার ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তাকে তারা সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন হিসেবে ধরে নিয়েছেন৷ চলমান আন্দোলন সফল হবে বিশ্বাস করে বিএনপি-জামায়াত জোট৷ এবারের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সফল হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া৷ বেগম জিয়া কার্যালয়ে অবস্থান করছেন নাকি অবরুদ্ধ তা নিয়ে বিএনপি ও সরকারের বক্তব্যে পার্থক্য থাকলেও এরই মধ্যে টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট৷

এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং আন্দোলনকে ঘিরে চলমান সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে৷ জ্বালাও- পোড়াও অব্যাহত থাকলে প্রয়োজনে জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এছাড়া মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ অবরোধ শিথিল করতে প্রয়োজনে অবরোধকারীদের দেখা মাত্র গুলি’ চালানোর অনুমতিও দেয়া হয়েছে৷এদিকে সহিংসতা বন্ধ না হলে বিএনপির সাথে কোনো সংলাপেও যাবে না সরকার- এমন কথা স্পষ্টভাবেই বলছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা৷

সরকার এই মুহূর্তে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা,জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়াসহ মহাসড়কগুলো চালু রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে৷সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে৷ ধ্বংসাত্মক কর্মকা- প্রতিরোধে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে নিরাপত্তা জোরদার করাসহ বিভিন্নস্থানে রেড এলার্টও জারি করা হয়েছে৷ সেই সাথে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান৷ অভিযানের ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেন, সরকার কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে দেবে না৷ এজন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিরো টলারেন্স দেখাতে বলা হয়েছে৷

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক শীর্ষ নেতাই বিভিন্ন মামলায় এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন৷ অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সীমিত করা হয়েছে নেতাকর্মীদের সাক্ষাত্‍৷ এ অবস্থায় দলের পক্ষে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া সম্ভব কিনা, এই প্রশ্ন ছিল দলের নেতাদের কাছে৷বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্যাতন অত্যাচার যত তীব্রতর হবে৷ আমাদের আন্দোলন, জনগণের প্রতিরোধ আরো তীব্র হবে৷ তবে এই মুহূর্তে অবরোধ প্রত্যাহারের প্রশ্নই উঠে না৷

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের দাবি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন জনগণের সরকার গঠন৷ এ দাবি যতদিন পর্যন্ত আদায় না হবে ততদিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলবে বলে বেগম জিয়া আমাদের জানিয়েছেন৷টানা অবরোধ কর্মসূচির পরও নমনীয় হয়নি সরকারের মনোভাব৷ এ অবস্থায় নতুন কর্মসূচির কথা ভাবছে ২০দলীয় জোট৷ তবে সে কর্মসূচি সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা না থাকলেও দলের নেতাকর্মীরা আস্থা রাখছেন বেগম জিয়ার উপর৷

রফিকুল আরো বলেন, বসে যে একটা সিদ্ধান্ত নেবো সে পরিবেশও নেই৷ বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বের হলে গুলি করা হয়৷ সেই অবস্থায় অন্য কোনো কথা চিন্তা করা হবে কিনা? ২০ দলীয় জোট বসে সেটা স্থির করবে৷বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ১৪ দিন ধরে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন৷ কার্যালয় ঘিরে শুক্রবারও ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্‍পরতা আর ব্যারিকেড৷ রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িকে ঘিরে গত ৩ জানুয়ারি থেকে পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড রয়েছে৷ পাশাপাশি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দুই পাশে জলকামান আর পুলিশের ২টি ট্রাক দিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে আগের মতোই৷ মহিলা পুলিশের একটি দল অবরুদ্ধ করে রেখেছে মূল ফটকের সামনের অংশ৷ এছাড়া সামনের রাস্তা ঘিরে সারিবদ্ধভাবে পোশাকধারী পুলিশের অবস্থানও ছিল গতকাল পর্যন্ত৷ এছাড়া রাস্তার উত্তর পাশে পুলিশের একটি ছোট ট্রাক দিয়ে রাস্তার ওপর ব্যারিকেড সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে৷

বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয় ঘিরে পুলিশের এসব ব্যারিকেড এবং তল্লাশির কারণে সাধারণ মানুষজন এ এলাকা দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন৷ ওই সড়কের সাধারণ যান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এতে খালেদা জিয়ার মতো কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ওই সড়কের বাসিন্দারাও৷ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা৷ তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারছেন না বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এ প্রতিবেদকের কাছে৷ এছাড়া পুলিশি ব্যারিকেড দেয়ায় কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম৷এলাকাবাসী জানান, বিএনপির সঙ্গে সরকারি দলের সমস্যা৷ সে হিসেবে খালেদা জিয়াকে তারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন৷ কিন্তু আমাদের কি সমস্যা? আমাদের চলাচলের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ বাসার কাজের লোকদেরকেও ঠিকমতো কাজে আসতে দিচ্ছে না পুলিশ৷ অনেক সময় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করা হয়৷ এমনকি আমাদেরকেও বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বলে আমরা প্রায় সময়ই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ি৷ বারবার জিজ্ঞাসাবাদের নামে দাঁড় করিয়ে রাখা হবে৷ আমাদের কী অপরাধ?

তারা জানান, দীর্ঘ ১৩ দিন ধরে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ৮৬ ও ৮৮ নম্বর সড়কের অর্ধশতাধিক পরিবার, একটি স্কুল, একটি দূতাবাস, একটি তেল-গ্যাস কোম্পানির অফিসের কর্মকর্তারা৷ এমনকি ওই রোডের অ্যাপার্টমেন্টে বেড়াতে আসা আত্মীয়স্বজনও শিকার হচ্ছেন হয়রানির৷ তাদের বাসায় ঢুকতে যেমন পুলিশের অনুমতি লাগে তেমনি বের হতেও লাগে অনুমতি৷ এতে প্রতিনিয়তই পুলিশের সঙ্গে তাদের ঘটছে বাকবিতণ্ডা৷বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকের বাড়িটি (৬-বি) জাতীয় পার্টির এমপি আলহাজ কাশেম আলীর৷ ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী মো. রাসেল জানান, গায়ে ইউনিফর্ম থাকার পরও পুলিশ আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়৷ এছাড়া প্রায় সময় বাসার জন্য বাজার করতে হয়৷ এ সময় পুলিশকে বলে যাওয়ার পরও ঢোকার সময় তারা হয়রানি করে৷ তিনি আরো বলেন, গত বুধবার আমার ডিউটি ছিল সকাল ৬টায়৷ আমি যথারীতি ডিউটিস্থলে উপস্থিত হলেও সড়কের মাথায় পুলিশের ব্যারিকেড দিয়ে আমাকে প্রবেশ করতে দেয়নি৷ তারা আমাকে লেকপাড়ের রাস্তা দিয়ে ডিউটিতে যেতে বলে৷ আমি লেকপাড়ের রাস্তা দিয়ে যেতে চাইলে ওখানকার পুলিশ আমাকে আটকে দেয়৷ আমি তাদেরকে বারবার অনুরোধ করার পরও যথাসময়ে আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি৷

এদিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের পশ্চিম দিকে রয়েছে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করে৷ বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রী নেই৷ শিক্ষকরাও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে চলে গেছেন৷ গেটে পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষী আমান আলী৷ তিনি বলেন, অবরোধ আর পুলিশের ব্যারিকেডের জন্য ছাত্রছাত্রী আসে না৷

শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ স্কুলে এলেও পুলিশ এই সড়কে শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেয়নি৷ স্কুলের সামনে থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ফটকের সামনে দেয়ার অনুরোধ জানালেও পুলিশ তা শোনেনি৷ শিক্ষার্থীহীন ফাঁকা পড়ে আছে স্কুলের মাঠ৷স্কুলটির শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, এখন ক্লাস করানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ আর দু-একদিন পরিস্থিতি দেখব৷ তারপর সিদ্ধান্ত নেব ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে দেয়া যায়৷ রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়ার কারণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও ক্লাস কোনো কিছুই করানো যাচ্ছে না৷

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উত্তরদিকের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করে ১০টির মতো পরিবার৷ এরপর বাড়িটি হলো এক ব্যবসায়ীর৷ এছাড়া ৮৬ নম্বর রোডের উত্তরের এক নম্বর বাড়িটি হলো কিংস পার্ক নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট৷ ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করে পাঁচটি পরিবার৷ ৩ জানুয়ারি রাতে বালু ও ইটভর্তি ট্রাকের ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল ওই সড়কের উত্তরদিকে৷ এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ওই তিনটি বাড়ির বাসিন্দারাও৷ গাড়ি নিয়ে কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি, কিংবা ঢুকতেও পারেননি৷ ৬ জানুয়ারি বালুর ট্রাক সরিয়ে নেয়ার পর পুলিশি নিরাপত্তা কিছুটা শিথিল করা হয়৷ এরপর পুলিশি ব্যারিকেড কিছুটা দক্ষিণ দিকে সরিয়ে আনা হয়৷ এতে কিছুটা স্বস্তি পান ওই তিনটির বাড়ির বাসিন্দারা৷ এদিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের উত্তর-পূর্বদিকের গলিটি হলো ৮৮ নম্বর র