17-01-15-PM_NSI HQ-3দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৫ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আবারো কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, তাদের হাত পুড়িয়ে দিলে তারা বুঝবে পোড়ার কি যন্ত্রণা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমায় একজন অন্তঃস্বত্ত্বা মায়ের গর্ভেই তার সন্তান মারা গেছে একথা শুনে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। যারা বোমা বানায় ও তা ছুঁড়ে মারে, গ্রেফতারের পর তাদের হাত পুড়ে দেয়া উচিত যেন তারা পোড়ার যন্ত্রণা বুঝতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক আঁতেল (তথাকথিত বুদ্ধিজীবী) আমার কথার সমালোচনা করবেন তাদেরকে বলছি, বার্ণ ইউনিটে (হাসপাতাল) গিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের সন্ত্রাসীদের নৃশংসতায় আক্রান্তদের কান্না ও দুর্ভোগ দেখে আসুন। তিনি আজ বিকেলে সেগুনবাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) ২০ তলা বিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণকালে একথা বলেন।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা প্রথম এনএসআই সদর দফতর পরিদর্শন করেন। এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শামসুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। এসময় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক পাচার ও চোরাকারবারীর মতো সমাজ বিরোধী কার্যক্রম রোধে এনএসআই সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশের মাটিতে স্থান হবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের স্থান হবে না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবো না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনএসআই সদস্যরা সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ‘এ ধরনের সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে আপনাদের কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বিএনপি-জামায়াতের বিগত সরকার সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তারা নিজেরা নিজেদের জন্য কূপ খনন করছে। এটি প্রমাণিত যে, প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষতির জন্য জঙ্গিদের আশ্রয় ও অস্ত্র সরবরাহ দিলে দেশকে এর জন্য মূল্য দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। এ অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, তা সত্ত্বেও একটি মহল দেশে হীন খেলায় মেতে আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায় এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ?

শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের উৎখাতের মাধ্যমে তাঁর সরকার বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ‘এই নীতি গ্রহণ করায় দেশে গত ৬ বছর শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় ছিলো।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না তারা কোন ইস্যুতে আন্দোলন করছেন। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ একটি অনুকরনীয় আদর্শ ও সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে, নেতিবাচক কর্মকান্ড দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক… আমি আন্দোলনের জন্য কোন ইস্যু খুঁজে পাই না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে কি দেখি? আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠনের কোন কারন আছে কি , আমরা কি ০৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছি, দেশকি অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত হয় নি, জঙ্গীবাদি কর্মকান্ড কি বন্ধ হয় নাই এবং জনগনের ক্রয় ক্ষমতা কি বৃদ্ধি পায়নি?’ ‘আমরা ৬.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি ও দারিদ্রতার হার ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং আশা করি আগামি চার বছরে এই হার ১০ শতাংশ কমবে। তাহলে কোথায় আমাদের ভুল?’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য কোন দেশই এত অল্প সময়ে এ ধরনের অগ্রগতি লাভ করে নি। বিএনপি’র সাথে সংলাপের ব্যাপারে কারও কারও পরামর্শের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি টেলিফোনে এ ধরনের সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু বিএনপি নেত্রীর উত্তর ছিল নেতিবাচক।

তিনি বলেন, ‘আমার সাথে টেলিফোন আলাপে বেগম জিয়া কি ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা সবাই শুনেছেন। আমরা ওই ধরনের শব্দ ও ভাষা শুনতে আগ্রহি নই। এছাড়াও আমার ফোন ধরতে তাঁর ছয় ঘন্টা সময় লেগেছিল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার যে, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কি করবে না। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাদের মিত্র জামায়াত-ই-ইসলামী উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কারনে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেনি’।