Thakurgaon Amon Paddy  Price Pic-01

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ১৭ জানুয়ারি: হরতাল অবরোধের কারনে উত্‍পাদিত চাল জেলার বাইরে পাঠাতে না পারায় ও বাইরে থেকে ধানের ক্রেতারা আসতে না পারায় আমন ধানের বাজারে ধ্বস নেমে এসেছে৷ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাইরে ধান-চাল বিক্রি করতে না পেরে হতাশায় পড়ে ধান ক্রয়ে অনীহা দেখা দিয়েছে৷ এতে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকদের চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে৷ শুধু নয় দিনে, গত ১২দিনে প্রায় ৮ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে জেলাবাসিকে৷

খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর ১ লাখ ২৮ হাজার ৪শ ৩৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করা হয় ৷ আর উত্‍পাদন হয়েছে ৩ লৰ ৮৮ হাজার ১৫২ মেট্রিক টন৷সরকারি খাদ্য গুদাম গুলোতে কিছু চাল কেনা হয় আর বেশিরভাগই চলে যায় জেলার বাইরে৷

মওসুমের শুরম্নতে প্রতি মন ধান বিক্রি হয়েছে ৭৫০টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে ৷ কিন্তু বর্তমানে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০০ টাকা বা তারও কম৷ বর্তমানে কৃষকেরা মরিচ, গম আলু ৰেতে সেচ ও সার প্রয়োগের জন্য আমন ধান বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন৷ কিন্তু ক্রেতার অভাবে অনেকেই পানির দামে ধান বিক্রি করছেন আর কেউ কেউ ধান বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন৷

ব্যবসায়ী নজরম্নল ইসলাম জানান, প্রতিদিন কমপৰে ১০টি ট্রাকে করে জেলার বাইরে ধান ও চাল যায়৷কিন্তু দীর্ঘ ৯দিনের অবরোধের কারণে একটি ট্রাকও পাঠানো যায়নি এ জেলা থেকে৷ এতে ৯দিনে জেলাবাসী প্রায় ৩ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে৷ আরেক ব্যবসায়ী সোলেমান আলী বলেন, ‘গত কয়েক দিনে তিন-চার হাজার মণ ধান কিনেছি কিন্তু তা পাঠাতে পারছি না৷ সব ধান স্তুপ করে রাখায় আদ্র্রতা কমে কালচে হয়ে যাচ্ছে৷ এতে ধানের ওজন কমে যাচ্ছে এবং গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে৷ ফলে আর্থিকভাবে আমাদের লোকসান গুনতে হবে৷ তাই বাধ্য হয়ে এখন আর ধান কিনছি না৷’

সদর উপজেলার ভুলস্নী গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘গত দু’বছর জেলায় তেমন ধানের দাম পাওয়া যায়নি৷ এবার ধান চাষ করে একটু ভালো ফলন পেলেও হরতাল-অবরোধ আমাদের শেষ করে দিচ্ছে৷’ এদিকে সাইফুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, অব্যাহত লোকসানের মুখে কৃষকদের মেরম্নদন্ড আজ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে৷ তাই তারা আইন করে হরতাল অবরোধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন৷

অপরদিকে সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম ধীর গতিতে চলার কারণে চাল বিক্রি করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা ধান ক্রয়ে অনিহা প্রকাশ করছেন৷ ফলশ্রম্নতিতে লোকসান গুনছেন চাষিরা৷

এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ভুপেশ কুমার মন্ডল জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় আমন ধানের উত্‍পাদন ভালো হয়েছে৷ তবে হরতাল অবরোধের কারণে কৃষকদের উত্‍পাদিত ধানের দাম কিছুটা কমে গেছে৷

ঠাকুরগাঁও জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু জানান, হরতাল অবরোধে কারনে চাল বিক্রি করতে না পেরে জেলার প্রায় ১৩’শ হাসকিং মিলের প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে৷ ফলে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক৷

অপরদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ এনামুল হক নূর জেলায় এবার ১৭ হাজার ৭শ ৩৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লৰ্যমাত্রা ধরা হয়৷ ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়েছে ৷ অবশিস্ট ৬ হাজার ৭শ ৪ মেঃ টন চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে যথানিয়মে৷