Khalada_bnpsm_banglanews24_410651325

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি: বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ’ হয়ে আছেন ১৫ দিন ধরে৷সেখানে অবস্থান করেই তিন চলমান আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন৷আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় না দেখে তিনি কার্যালয় ছাড়বেন না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন৷গত ৪ জানুয়ারি থেকেই গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন খালেদা জিয়া৷ মূল ফটকে তখন থেকেই একাধিকবার তালা লাগানো ও খোলার নাটক করা হয়েছে৷শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে সেখানে আবারো তালা লাগানো হয় বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের প্রেসউইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার৷

চলমান আন্দোলন জোরদার করতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সরাসরি নিজেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিএনপি চেযারপারসন খালেদা জিয়া৷ নিচ্ছেন খোঁজখবর, দিচ্ছেন উত্‍সাহ৷ জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন৷

সরকারের পক্ষ থেকে খালেদাকে অবরুদ্ধ করার কথা অস্বীকার করা হলেও কার্যালয় থেকে শুধু নিজ বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷ খালেদা জিয়াও গৃহবন্দী হওয়ার চেয়ে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকাকেই বেছে নিয়েছেন৷ এ অবস্থায় তিনি সারা দেশের অবরোধ কর্মসূচির খোঁজখবর নিচ্ছেন৷ কথা বলছেন জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও৷খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশি কড়াকড়ি থাকায় দলের কোনো নেতাকর্মী স্বাভাবিকভাবে সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না৷ সংশ্লিষ্ট সড়কে যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে এখনো বাধা দিচ্ছে পুলিশ৷

অবরুদ্ধ কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় অনেকটা শুয়ে-বসে সময় কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসনের৷ মাঝে মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও অন্যান্য নেত্রীর সঙ্গে গল্প করে বেশির ভাগ সময় কাটছে তার৷ বর্তমানে কার্যালয়ে রয়েছেন সেলিমা রহমান, এম এ কাইয়ুম, মারুফ কামাল খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার ছাড়াও অফিস সহকারী ও চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা স্কোয়াডের সদস্যরা৷

প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুলশান কার্যালয়ে আসেন বেগম খালেদা জিয়া৷ সেদিন তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দেখার জন্য নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়৷ পর দিন রোববার পুলিশ এই কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়৷ একই সঙ্গে কার্যালয়ের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন এবং রাস্তায় ইট, বালু ও মাটিভর্তি ১১টি ট্রাক দিয়ে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ পিপার সপ্রে করে৷ এরপর থেকে বেগম খালেদা জিয়া কার্যালয়েই আছেন৷ নেতারা বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর নিয়েছেন৷ ফোনে ম্যাডাম আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ দিয়েছেন আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া জেলার এক নেতা জানান, ম্যাডাম ফোনে সর্বসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেছেন৷ ম্যাডামের ফোন আমাদের আন্দোলনে উত্‍সাহ যোগাচ্ছে৷ আমরা সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই৷ জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই৷

একই ধরনের কথা বলেন রাজশাহী জেলার এক শীর্ষ নেতা৷তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে৷ আর বিএনপি চেয়ারপারসন জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছে৷ আমরা ম্যাডামের সঙ্গে আছি৷ ম্যাডামের ডাকে আমরা আন্দোলন সফল করবোই৷এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হিসেবে তৃণমুলে যোগাযোগ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানাতেই পারেন৷ যদি দলীয় চেয়ারপারসন সরাসরি তৃণমুলে যোগাযোগ করেন তবে তা একটি ভালো উদ্যোগ৷

এর মাধ্যমে দলীয় প্রধান জনগণের কাছে পৌঁছুতে পারবেন৷ সাধারণ জনগণের সঙ্গে চেয়ারপারসনের সম্পৃক্ততা বাড়বে৷ জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আরও বেশি সক্রিয় হবে৷ এতে আন্দোলন জোরদার হবে বলে৷

এদিকে কয়েকটি জেলার একাধিক নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্মসূচি দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না বের হয়ে ঘরে বসে থাকছেন৷ কোনো কোনো নেতা গোপন স্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন৷ কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে মনবল ভেঙ্গে যাচ্ছে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মীদের৷ কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বিরক্ত বলে তার কাছের একাধিক নেতা জানিয়েছেন৷ গত ১১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু মিরপুর থেকে আটক হলে বিএনপির গুলশান কর্যালয়ের এক কর্মকর্তা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷

গুলশান কার্যলয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ আন্দোলনে নামছেন না৷ অথচ ঠিকই আটক হচ্ছেন৷ এসব নেতা আন্দোলন যাতে না করতে হয় সে জন্য নিজেরাই পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছেন বলেও বিদ্রুপ প্রকাশ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ম্যাডাম সবকিছুই বোঝেন৷

টানা ৮ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর ওই দিনই (১১ জানুয়ারি) প্রথম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা৷ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ওই দিন দেখা করা তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার৷

কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন আচরণে কিছু কিছু জেলা ও উপজেলার নেতারা আন্দোলনে না গিয়ে সরকার দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন৷ এ ধরনের কর্মীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷ কিন্তু তাদের কেউ মাঠে থাকেন না৷ সাধারণ মানুষ কি চায় সে বিষয়টি খুব একটা বিবেচনায় আনেন না এসব নেতা৷ ফলে আন্দোলন করতে গিয়ে জন আক্রোশের মুখে পড়তে হয়৷ তাছাড়া বিপক্ষ দলের কর্মীদের হাতে নির্যাতন ও হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনাতো আছেই৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আন্দোলনের মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না৷জেলা পর্যায় থেকে আন্দোলন করতে গিয়ে আমরা সরকার দলীয় ক্যাডারদের হাতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি৷ অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ এ পরিস্থিতে সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করতে হচ্ছে৷ওই নেতা বলেন, কেন্দ্র ঠিক না করে শুধু তৃণমূলে আন্দোলন করে লাভ হবে না৷ এতে তৃণমূলের কর্মীরা শুধু নির্যাতনের শিকার হবেন৷ চেয়ারপারসনের উচিত আগে কেন্দ্র ঠিক করা৷

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ এছাড়া রোববার সকাল সাতটা থেকে সেখানে লাইভ ক্যামেরা বসানো হয়েছে৷ তবে শনিবার রাতে মূল ফটকে আবার তালা লাগানো হলেও রোববার তা আর দেখা যাচ্ছে না৷

সূত্র জানায়, যে কোন পরিস্থিতি সদর দপ্তরকে জানাতে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যালয়ের সামনে লাইভ ক্যামেরা বসানো হয়েছে৷ ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করছেন কনস্টেবল কামরুল আহসান ও মোহাম্মদ মাবুদ৷ কামরুল আহসান বাংলামেইলকে জানান, আজ সারাদিন লাইভ ক্যামেরা থাকতে পারে৷তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুলশান জোনের ডিসি লুত্‍ফর রহমান বলেন, এ ডিএমপি থেকে এ ধরনের কোনো ক্যামেরা বসানো হয়নি৷উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি থেকেই গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন খালেদা জিয়া৷ মূল ফটকে তখন থেকেই একাধিকবার তালা লাগানো ও খোলার নাটক করা হয়েছে৷ যদিও প্রথম থেকেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে৷

সরকারের পক্ষ থেকে খালেদাকে অবরুদ্ধ করার কথা অস্বীকার করা হলেও কার্যালয় থেকে শুধু নিজ বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে৷ খালেদা জিয়াও গৃহবন্দি হওয়ার চেয়ে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকাকেই বেছে নিয়েছেন৷অপরদিকে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত তালাবদ্ধ৷ সেখানে কোনো নেতাকর্মীকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না৷