সমাজসেবা অধিদপ্তর
দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি: শুরুটা ১৫ই ডিসেম্বর, ২০১৪ইং তারিখ রাত ১১:৩০ মিনিটের সময় টেলিভিশনের সংবাদ দিয়ে- একটা ফুটফুটে মেয়ে নবজাতক শিশুকে (বয়স আনুমানিক ২১ দিন) র‍্যাব-০৩ উদ্ধার করেছে এবং শিশু পাচারকারী দলের চার (০৪) জন মহিলা সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাচ্চাটাকে দেখে অন্তরটা কেঁপে উঠল। মাত্র পাঁচ (৫) মাস আগে আমি আমার বহু কাঙ্খিত একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়েছি। জন্মের ৯ম দিনেই সুষ্টিকতা আমার সন্তানটিকে তাঁর কাছে নিয়ে গেছেন। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছি আমরা। হটাত টেলিভিশনে দেখানো শিশুটির সাথে আমার সন্তানের যেন মিল খুজে পেলাম। আমার স্বামীকে বিষয়টি বলা মাত্রই তিনি র‍্যাব-০৩ এর টিকাটুলিস্থ কাযালয়ে রাত আনুমানিক ১২:৪৫ মিনিটে উপস্থিত হলেন। সেখানকার দায়িত্বরত কমকতাকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি লালবাগ থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। তিনি ততক্ষনাত লালবাগ থানার উদ্দ্যেশ্যে রওনা হলেন, রাত তখন আনুমানিক ১:৩০ মিনিট (১৬ই ডিসেম্বর ২০১৪ইং)।

এমতাবস্থায় দু’জনই সিদ্ধান্ত নিলাম, শিশুটিকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিব, তাকে আমাদের সন্তান হিসেবে বড় করব। ব্যাব, পুলিশ উভয়ই আমাদের জানালেন যে, একমাত্র মহামান্য আদালতের মাধ্যমেই আইনগতভাবে শিশুটিকে আপনারা পেতে পারেন। তারা সবাই আমাদের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেন এবং সকল প্রকার সহায়তার আশ্বাস দিলেন। তাদের দেখানো পথেই হাঁটা শুরু করলাম। একদিন, দু’দিন করে পুরোটা মাস থানা ও সিএমএম কোটে দৌড়াতে দৌড়াতে দু’জনের অবস্থাই শোচনীয়। নিজেদের কমক্ষেত্র ও সংসার সককিছু ঠেলে একদিকে সরিয়ে দিয়ে শিশুটিকে পাওয়ার আশায় ছুটছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটি যতদিন ছিল ততদিনের ভরন-পোষনও আমরা দিয়েছি। নিয়মানুযায়ী এরপর শিশুটি চলে গেল সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে “ছোটমনি শিশু নিবাস” -এ। সেখানকার উপ-তত্ত্বাবধায়ক জনাবা ফেরদৌসী আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানালেন যে, একমাত্র আদালতের রায় নিয়ে এলেই তিনি শিশুটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

একটি সদ্য উদ্ধারকৃত নবজাতক ও তার ভবিষ্যৎ এবং মানবতা ....
একটি সদ্য উদ্ধারকৃত নবজাতক ও তার ভবিষ্যৎ এবং মানবতা ….

অত:পর মহামান্য আদালতের ৫-৬টি শুনানী ও দীঘ যাচাই বাছাইয়ের পর গত ১২ই জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখে শিশুটিকে আদলতে হাজির সাপেক্ষে্ আমাদের পক্ষে রায় প্রদান করেন। সিএমএম কোটের বারান্দায় যখন শিশুটিকে আমরা কোলে তুলে নিলাম তখন মনে হল আমার সন্তানটি যেন আমার কোলে ফিরে এসেছে। প্রাপ্তির আনন্দে এতদিনের কষ্ট সব বেমালুম ভুলে গেলাম। আমাদের জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেয়া হয় এবং উক্ত আদেশের মূলকপিটি “ছোটমনি শিশু নিবাস” -এর উপ-তত্ত্বাবধায়ক জনাবা ফেরদৌসী আক্তারের দপ্তরে পৌঁছানো হয়। এরপর আদালতের রায় মোতাবেক যখন শিশুটিকে “ছোটমনি শিশু নিবাস” থেকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা তখন থেকেই শুরু জটিলতা। প্রতিষ্ঠানটির উপ-তত্ত্বাবধায়ক জনাবা ফেরদৌসী আক্তার তার ব্যক্তি স্বাথে রায়টি মানতে নারাজ। তিনি অফিসে উপস্থিত হন খুব কম দিন তার উপরে তাকে মুঠোফোনে পাওয়াটা দুষ্কর। রায়ের বিষয়ে তার স্ব-স্বীকৃতি“আমি যদি না দেই তবে কোন আদালতের রায়ই এখানে কাযকর হবে না।” উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে তার অধিনস্থ কমচারী দ্বারা আমাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে আদালতে না গিয়ে তাদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে অথনৈতিক লেন-দেনের মাধ্যমে বিষয়টি ফয়সালা করতে বলেছিলেন। তাদের ভাষ্য, আদালতে গিয়ে কি লাভ, শুধু শুধু কোট-থানা দৌড়াদৌড়ী না করে তাদের সাথে লিয়াজো করে সহজে আমরা বাচ্চাটা পেতে পারি। আর এই অশুভ লিয়াজোর কাজটি করেন তার অধিনস্থ কতিপয় কমচারীদের দ্বারা। আমরা তাদের দেখানো অবৈধ পথে যাইনি। মহামান্য আদালতের মাধ্যমে এগিয়েছি। আমাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে শুরু করেছে হয়রানি।

মানবতা বলতেও তো মানুষের কিছু থাকার কথা। একটি শিশুর ভাল ভবিষ্যত হবে তা কে না চায়! অবৈধ অথের লোভে, ব্যক্তি স্বাথের জন্য, শিশুটিকে নিয়ে যে নোংরা খেলায় নেমেছেন “ছোটমনি শিশু নিবাস” -এর উপ-তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী আক্তার তা কিভাবে মেনে নিতে পারি? তাহলে কি র‍্যাব, পুলিশ, মাহামান্য আদালতের রায় সব মিথ্যা, সব বানোয়াট? আইনগতভাবে না এগিয়ে যদি অবৈধভাবে টাকা দিয়ে শিশু কিনতাম তাহলেতো এভাবে কষ্ট করতে হত না! নিজের কাছে আজ নিজেই হেরে গিয়েছি। এই আমাদের মানবতা! মানবতায় বাঙালী জাতি নাকি শ্রেষ্ঠ! বলতে পারেন এই হয়রানির শেষ কোথায়? শিশুটির বাবা-মায়ের অধিকার কি কেউ দিতে পারবেন? নাকি একজন অথ পিপাশু কমকতার কারনে পুরো সরকারী কমকতারা চিহ্নিত হবেন অমানবিক হিসেবে? অবুঝ শিশুটি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন -এর ভিকটিম হওয়ায় আমরা কি কেউই তার পাশে দাঁড়াবো না?

ভাই, অনেক দৌড়িয়েছি, আর পারছি না। আমরা দু’জনই অনেক ক্লান্ত ও অবসন্ন। শিশুটিকে আমাদের কোলে তুলে দিন। সমাজের সবস্তরের সহায়তা আমাদের কাম্য। মানবতাকে সম্মান জানান। আইনের উধ্বে কেউ নয়, মানবতাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধম -প্রমান করুন।

ধন্যবাদ।

শারিয়া মোস্তাফিজ সিমি ও মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল