SM10

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনের তোড়জোর দেখা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনে, এজন্য সরকারের কাছে টওায় ৪৫ কোটি বরাদ্দ চেয়েছে তারা৷স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিব বলছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ জটিলতা শেষ হবে৷ সেক্ষেত্রে ভোট অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি রাখা হবে৷স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন চলতি জানুয়ারি মাস নাগাদ করতে গত বছরের শেষ ভাগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সিইসি বলছিলেন, এই সময়ে তারা প্রস্তুতি শেষ করতে পারবেন না৷

চলতি অর্থ বছরেই (২০১৪-১৫) ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)৷ এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অতিরিক্ত’বরাদ্দ চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি৷অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব (অর্থ বিভাগ) মাহবুব আহমেদের কাছে রোববার (এক চিঠির মাধ্যমে এ অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম৷

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল হয়৷ উচ্চ আদালত সেই নির্বাচনের উপর স্থগিতাদেশ দেন৷ এরপর ২০১৪ সালের ১৩ মে রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন উচ্চ আদালত৷ কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা জটিলতা থাকার কারণে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি৷ সরকার সীমানা জটিলতা দূর করলে চলতি অর্থ বছরেই নির্বাচন হতে পারে৷ এ নির্বাচনের জন্য সংস্থানকৃত আগের ৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আরও ৪৫ কোটি টাকার টওয়োজন৷

তাই ইসি সচিব এ নির্বাচনের জন্য মোট ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চিঠিতে অর্থ বিভাগের সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷

বর্তমান কমিশন ২০১২ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই বছরেরই ২৪ মে তফসিল ঘোষণা করে৷ কিন্তু উত্তর সিটিতে সীমানা জটিলতা নিয়ে রিট আবেদনের কারণে এ নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়৷ এখন ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে প্রশাসক দিয়ে কাজ চালাচ্ছে সরকার৷ সর্বশেষ ডিসিসি নির্বাচন হয়েছিলো ২০০২ সালে ২৫ এপ্রিল৷ সেবারের নির্বাচিত কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের মে মাসে৷এরপর এনিয়ে আর কথা না ওঠার পর রোববার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদকে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম চলতি অর্থবছরে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখার অনুরোধ করে চিঠি পাঠিয়েছেন৷

জুলাই মাস থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে৷ তার আগে বরাদ্দ চাওয়ার অর্থ জুন মাসের মধ্যে এই নির্বাচন করতে চায় ইসি৷

ইসি কর্মকর্তারা জানান, হালনাগাদ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে ৩১ জানুয়ারি৷ সে ক্ষেত্রে মে-জুনকে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় বিবেচনা করা হচ্ছে৷ এ সময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও করার কথা রয়েছে৷

ডিসিসি দক্ষিণের সীমানা চূড়ান্ত হলে মার্চের শেষে বা এপ্রিলের শুরুতে তফসিল দেওয়ার আশা জাগবে, বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা৷কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়কে আমাদের রেডি করে রাখতে হবে৷ হঠাত্‍ করে সরকার যদি বলে সীমানা নির্ধারণ হয়ে গেছে, তখন তো আমার কিছু করার থাকবে না৷ যেহেতু আগে থেকে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য টাকা রাখিনি, তাই আগে চেয়ে রাখছি, যাতে প্রস্তুতিটা থাকল৷

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, আমাদের সীমানা নির্ধারণের অংশটি এখনও ফাইনাল হয়নি৷ সর্বোচ্চ আরও মাস খানেক লাগতে পারে৷ সীমানা চূড়ান্ত করতে সর্বোচ্চ দেড়-দুই মাস ধরে নেন৷এরপর ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তটি আসবে, বললেও এককভাবে তিনি এই বিষয়ে এখনি কোনো কথা বলতে চাইছেন না৷

৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকাসহ পুরো দেশের হালনাগাদ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, সীমানা নির্ধারণ করে দিলে আমরা দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন নামিয়ে দিতে পারব৷

ইসি সচিব অর্থবিভাগের সচিবকে চিঠিতে লিখেছেন, সরকার সীমানা নির্ধারণ জটিলতা নিরসন করলে চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে৷

২০০২ সালের এপ্রিলে ভোটের পর ২০০৭ সালের মে মাসে অবিভক্ত ডিসিসির নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়৷এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময় দুই বার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়৷এরপর ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বরে ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণ ও ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তর নামে দুই ভাগ হয় ডিসিসি৷দুই ভাগ করার পর অনির্বাচিত প্রশাসক দিয়ে চলছে ডিসিসি, যদিও স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছে বিভিন্ন মহল৷

অর্থবিভাগের সচিবের কাছে দেওয়া ইসি সচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে উচ্চ আদালতের রিট পিটিশন দাখিল হয় এবং বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করা হয়৷ গত বছরের ১৩ মে আদালত রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেয়৷ কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা জটিলতার কারণে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি৷এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্বাচন ব্যয় খাতে সংস্থানকৃত ৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত আরও ৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে৷

অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট ৯৫ কোটি টাকা সংস্থান রাখার অনুরোধও করেন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম৷তিনি বলেন, ডিসিসি নির্বাচনের জন্যে আলাদা বরাদ্দের দরকার নেই বলে আগে বলা হয়েছিল৷ যখনই ইসির দরকার হবে, তখনই চাইলে দেওয়ার কথা রয়েছে অর্থবিভাগের৷