27-01-15-PM_Police Week Opening-5

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি : জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একই সঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করতেও জনসাধারণের প্রতি আহবান জানান তিনি৷শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে৷ এখানে সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোনও স্থান নেই৷

মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৫’ এর উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন৷ এ সময় বিএনপি-জামাতের সহিংসতাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী৷অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ পরে সেবার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও সাহসিক তার জন্য রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পরিয়ে দেন শেখ হাসিনা৷

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও প্রতিটি জাতীয় সংকটে পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷ এ ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি৷শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন কোনো কারণ ছাড়াই বিএনপি জামাত দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, উন্নয়নের গতি রোধ করছে৷

পুলিশকে দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় পুলিশই জনগণের প্রধান ভরসা৷ বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হরতাল ও অবরোধের নামে নিরীহ মানুষ হত্যাসহ ঘৃণ্য অপকর্ম প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে৷ তিনি এজন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানান৷পুলিশের অনেক সমস্যা রয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, পুলিশ বাহিনীর পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করবে সরকার৷

তিনি বলেন, প্রয়োজনে পুলিশ পদের সংখ্যা আমরা বৃদ্ধি করবো৷ এ বাহিনীর সংখ্যাও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি করা হবে৷ এ পর্যন্ত পুলিশ ঝুঁকিভাতা ৩০% প্রবর্তন করা হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, এরইমধ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো জোরদার করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে৷

দেশের মানুষকে এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সন্ত্রাস প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে এবং আমাদের পুলিশ বাহিনীকে এ কাজে সর্বত্তম সহযোগিতা করতে হবে৷সন্ত্রাস প্রতিরোধে দল-মত নির্বিশেষে পুলিশকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷একইসঙ্গে যথাযথভাবে কর্তব্য পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতেও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷”তাই আমি দেশের সকল জনগণের কাছে আহ্বান জানাব-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং এই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে৷ আমাদের পুলিশ বাহিনীকে সর্বতভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি৷পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা আপনাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে যাবেন এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করবেন সেটাই আমরা চাই৷এসময় দেশে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী৷

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক সেই সময় কোন কারণ ছাড়াই হঠাত্‍ আমরা দেখছি বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল, অবরোধের নামে নাশকতামূলক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে৷মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, সারাজীবনের মত পগু করে দিচ্ছে৷ এর থেকে জঘন্য কাজ আর হতে পারে না৷নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট গত ২২ দিন টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে; যাতে নাশকতায় অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে৷ এদের অধিকাংশই নিহত হয়েছে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায়৷ কেন এই ধরনের নাশকতা তা আমরা বুঝতে পারি না মন্তব্য করে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের কাজ থেকে তাদের বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি৷

এ সময় ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন,নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুলিশ বাহিনীর ১৭ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে তারা হত্যা করেছিল৷শত বাধার মধ্যে অর্পিত দায়িত্ব দিন-রাত পরিশ্রম করে আপনারা পালন করে যাচ্ছেন৷ সেজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী৷

সামপ্রতিক বছরগুলোতে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হরতাল ও অবরোধের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা, যাত্রীবাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে নারী-শিশু হত্যার ঘৃণ্য অপকর্ম প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে৷ আমি এজন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই, বলেন তিনি৷

এসময় পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি৷গত ছয় বছরে পুলিশে ৩১ হাজার ৭৪৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আরো ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷

পুলিশে বর্তমানে গ্রেড-১ পদ রয়েছে দুটি৷ প্রয়োজনে আরো একটি গ্রেড-১ পদ বাড়ানোর আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী৷বর্তমানে কনস্টেবল হতে এসআই পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের পুলিশ সদস্যদের জন্য বাস্তবায়নের’ও আশ্বাস দেন তিনি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপতত্‍পরতা রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি নিভর্র ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ শুরু হয়েছে৷থানা পুলিশি সেবার সবচেয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান ইউনিট হওয়ায় সেখানে জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি৷সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যা যা প্রয়োজন সেটা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করি৷পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশের বার্ষিক কুজকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী৷এসময় তিনি পেশায় কৃতিত্বের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পাওয়া সদস্যদের পদক তুলে দেন৷অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷