29-01-15-PM_Tangile-3

দৈনিকবার্তা- টাঙ্গাইল,২৯জানুয়ারি :  সেনাবাহিনীর মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, নারীরাও দেশ রক্ষার গর্বিত সৈনিক বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুসারি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আর্মি মেডিকেল কোরের প্রথম নারী রিক্রুট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করতে মহিলা মিলিটারি প্যারামেডিকসদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, সেবার মহান ব্রত নিয়ে আজ আপনারা যে শপথগ্রহণ করলেন, তা আপনাদের আত্মত্যাগ, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বের প্রতি একাগ্রতার মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তিনি সকালে এখানে শহীদ শাহেদ সালাউদ্দিন সেনানিবাসে আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার এন্ড স্কুলে প্রথম প্রশিক্ষণার্থী মহিলা রিক্রুট ব্যাচের শপথগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।এর আগে প্রধানমন্ত্রী আর্মি মেডিকেল কোরের একটি চৌকস মহিলা কন্টিনজেন্টের চিত্তাকর্ষক মার্চপাস্ট প্রত্যক্ষ করেন। পরে তিনি একটি খোলা জীপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও আর্মি মেডিকেল কোর সেন্টার ও স্কুলের কম্যান্ডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী আবুল কালাম আজাদ।

আজকের এই রিক্রুটের মাধ্যমের এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মোট ৮৭৯ জন মহিলা সৈন্য নিয়োগ হলো। বিশ্বের ইতিহাসে একই সঙ্গে মহিলা সৈন্যদের শপথগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনীর এটাই সবচেয়ে বড় কন্টিনজেন্ট।এর মধ্যে মোসাম্মৎ মেমোরি হাসান ও শান্তনা রানী মন্ডল যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় রিক্রুট বিবেচিত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী তাদরে হাতে ট্রফি তুলে দেন।

29-01-15-PM_Tangile-2

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সংসদ সদস্য, তিনবাহিনী প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রেস সচিব, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং নিয়োগকৃতদের অভিভাবকগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীবলেন,বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এ বাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসাবে নারী সামরিক প্যারামেডিকস নিয়োগ করা হলো। তিনি বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে যে, এখন আপনারা এ দেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।তিনি বলেন, আপনাদেরকে মহান মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসাবে যুদ্ধ ও শান্তিতে সুস্থ থাকার মন্ত্রে এবং পেশাদারিত্বের উৎকর্ষের মহান লক্ষ্যে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ নারী সামরিক প্যারামেডিকসদের জন্য এক আনন্দের ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ তারা গর্বিত সৈনিক হিসাবে এক বিশাল কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।তিনি বলেন, আজ থেকে তোমাদের ওপর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হলো।তিনি বলেন, তোমরা এএমসি সেন্টার এন্ড স্কুলে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে সেনাবাহিনীতে স্বাস্থ্যসেবা সার্ভিস নিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।

শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় এই নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোন ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তাঁর সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদার ও একুশ শতকের দক্ষবাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।তিনি আরো বলেন, আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে আমরা আর্মি মেডিকেল কোর্পস-এর পাশাপাশি অন্যান্য কোর্পসের জন্য নারী অফিসার নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই নারী অফিসারগণ এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে এবং দেশে ও শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কাজ করছে।তিনি বলেন, কোর্স গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পুরুষ অফিসারের পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক নিয়োগের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নার্সিং সেবার সূচনা ঘটে। সকল পেশাদার সেনাবাহিনীর একটি অবিচেছদ্য অংশ হিসেবে নার্সিং সার্ভিস স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

29-01-15-PM_Tangile-12

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর্মি মেডিকেল সার্ভিসকে সময়োপযোগী করে তুলতে এবং আরো প্রসার ও আধুনিকায়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আর্মি মেডিকেল কোর্পস সেন্টার এ্যান্ড স্কুলকে মেডিকেল এ্যান্ড হেলথ টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা পরিচালনার জন্য ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দিয়েছে।তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আধুনিক সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দূরদর্শী নির্দেশনায় উজ্জীবিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে পৌঁছেছে। আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্মি যে সুনাম অর্জন করেছে তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে পৌঁছেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই এবং তাদের শ্রম, মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্বে অবস্থান ধরে রেখে তারা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং ও সাহসী দায়িত্বে তারা তাদের সাফল্য তুলে ধরেছে।শেখ হাসিনা বলেন, দেশের নারীরা রাজনীতি থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক কার্যক্রম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্লোবাল জেন্ডার গ্যাপস’র ২০১৩ সালের রিপোর্টে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো সপ্তম। ‘নারীরা যদি পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যায় এবং তাদের মূল্যায়ন করা হয় তাহলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুঃসময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিপণœ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুস্থ মানবতার সেবায় আর্মি মেডিকেল কর্পস অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং তাদের সেবা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বে সম্প্রসারিত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্পস কর্মকর্তা ও সৈনিকরা বিনা স্বার্থে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন বিদেশী মিসনে সেবা প্রদান করে যাচেছ। কর্পস’র সদস্যরা বর্তমানে কঙ্গো, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, পশ্চিম সাহারা ও কুয়েতে দায়িত্ব পালন করছেন।