image_175576.pm-22

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি: টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে পূর্বপাড়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১.৪০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস উদ্বোধন করেছেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাহ উদ্দিন সেনানিবাসে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম মহিলা মিলিটারি প্যারামেডিকস্ রিক্রুট ব্যাচের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল শহীদ সালাহ উদ্দিন সেনানিবাসে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম মহিলা মিলিটারি প্যারামেডিকস্ রিক্রুট ব্যাচের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ সত্যিই আমি গর্বিত, বাংলাদেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। যে দেশের নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়েছেন সে দেশের নারীরা পিছিয়ে থাকবে না। তিনি বলেন, আজ ৮৭৯ জন নবীন মহিলা প্রশিক্ষণার্থী তাদের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে শপথ নিলেন। আমি সকল নবীন সৈনিককে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।

timthumb.php.jpgm

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে একুশ শতকের চৌকস পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ১৯৯৬ সালে আর্মি মেডিক্যাল কোরে নারী অফিসারের পাশাপাশি অন্যান্য কোরেও নারী অফিসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় তার সরকার। ২০০০ সালে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন আর্মস ও সার্ভিসে মহিলা অফিসাররা দেশে ও শান্তিরক্ষা মিশনে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে নারী অফিসারের পাশাপাশি নারী সৈনিক নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর মত একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যাই নারী। নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা জানি ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল-এর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে নার্সিং সার্ভিসের পথচলা শুরু হয়েছিল। সেই নার্সিং সার্ভিস আজ পৃথিবীর সকল পেশাদার সেনাবাহিনীর অনিবার্য অংশ হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল সার্ভিস আরও বিস্তৃত, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আর্মি মেডিক্যাল কোর সেন্টার অ্যান্ড স্কুুলকে ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি’ পরিচালনার অনুমতি দেয়।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সৈনিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি আপনাদের জীবেন অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সৈনিক হিসেবে আপনারা বৃহত্তর কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। আপনাদের উপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব।

এএমসি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল অ্যান্ড হেলথ টেকনোলজি স¤পন্ন করে সেনাবাহিনীর চিকিৎসাসেবায় এই সৈনিকরা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেবার মহান ব্রত নিয়ে আজ আপনারা শপথ গ্রহণ করলেন। আপনাদের আতœত্যাগ, দায়িত্বের প্রতি একাগ্রতা ও পেশাদারিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের চিকিৎসাসেবায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। আপনারা নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও জনগণের সেবা করবেন। আমার দোয়া ও শুভ কামনা আপনাদের জন্য সব সময় থাকবে।

তিনি বলেন, ইসলামের সেবার প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন একজন নারী। তিনি বিবি খাদিজা। প্রায় শত বছর আগে বেগম রোকেয়া বাঙালি মুসলিম নারী সমাজকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়ার অবদান বাঙালি নারীর জন্য চিরকালের প্রেরণা হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আগাগোড়া এই সংগ্রামে ধৈর্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। সদা সর্বদা জাতির পিতার পাশে থেকে প্রেরণা দেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি দমে যাননি।

প্রধানমন্ত্রী আরও স্মরণ করেন, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম এবং তারামন বিবির কথা। তারা আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। ৭১-এ নারীরা সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়ে এবং খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে, অনুপ্রেরণা ও ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ আর পিছিয়ে নেই। নিজেদের শ্রম, মেধা এবং দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নারীরা এগিয়ে চলছে সর্বক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জিং এবং দুঃসাহসিক কাজে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন নারীরা।
প্রধানমন্ত্রী নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজনীনের এভারেস্টজয়, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রথম মহিলা ছত্রীসেনা হওয়ার গৌরব অর্জন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাঈমা হক এবং ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফার প্রথম সামরিক বৈমানিক হওয়ার যোগ্যতা লাভের কথাও স্মরণ করেন। এদের সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।

নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করে গর্বিত সদস্য হিসেবে আজ আপনারা সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনারা এদেশের জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর্মি মেডিক্যাল কোর আর্ত-মানবতার সেবায় নিবেদিত। যাঁদের সেবার প্রসার বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মিশনে এ কোরের অফিসার ও সৈনিকরা নি:স্বার্থ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে কঙ্গো, লাইবেরিয়া, আইভরিকোস্ট, পশ্চিম সাহারা ও কুয়েতসহ মোট ৫টি দেশে এই কোরের সদস্যগণ চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বলেন, মানবতার সেবায় এই কোরের ফিল্ড ইউনিটগুলো বহিরাঙ্গন অনুশীলনে বেসামরিক ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ¦ল করেছেন।

‘সমরে ও শান্তিতে রাখিব সুস্থ’-এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সেনাবাহিনী তথা জাতিকে সেবাদানের জন্য পেশাগত উৎকর্ষ, নিরলস পরিশ্রম এবং ত্যাগের মহান ব্রত নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য অনুসারী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে নবীন সেনাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১.৩৯ মিনিটে বঙ্গবন্ধুসেতুর পূর্বপাড় এসে পৌঁছান। দুপুর ১.৪০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস উদ্বোধন করেন। দুপুর ১.৫৫ মিনিটে সেনানিবাসে নব নির্মিত সদর দফতর ৫৮ কম্পোজিট ব্রিগেড অফিস ভবন, ১২তলা বিশিষ্ট অফিসার্স মেস কমপ্লেক্স, অফিসার, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সৈনিকদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট পারিবারিক বাসস্থানের ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১.৩৯ মিনিটে এ সেনানিবাসে পৌঁছলে সেনাপ্রধানসহ অন্যান্য সেনাকর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান।

ফলক উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানসহ সেনা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন।

বঙ্গবন্ধুসেতুর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ১৯৯৯ সালের ২০ মে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর দফতর ৯৮ কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেন। তখন বঙ্গবন্ধুসেতুর নামের সঙ্গে মিল রেখে এই সেনানিবাসের নাম রাখা হয় ‘বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস‘। এই প্রথম কোনো সেনানিবাসের নামকরণ বঙ্গবন্ধুর নামে করা হল।