rijvi-sk003546_51977

দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি: রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসের পাঠশালা৷ গুণ্ডামি হচ্ছে এদের শাসনপ্রণালী৷ সন্ত্রাসীরা যেমন আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সবকিছু দখল করে নিতে চায়, তেমনি আওয়ামী লীগও তাদের আগ্রাসী ক্ষুধায় বহুদলীয় গণতন্ত্রসহ জাতীয় জীবনের সব অর্জন উচ্ছেদ করে গোটা দেশটাকেই তাদের জমিদারী বানাতে চায়৷’ এমনটাই বললেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী৷

দেশব্যাপী চলমান অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ৷আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে সরকার দলের বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী ও দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির হরতাল প্রত্যাহার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন৷

রিজভী বলেন, শতকরা ৫ ভাগ ভোট নিয়ে আওয়ামী মহাজোট অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে আছে, ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের কথা ভেবে ভোটারবিহীন সরকার পদত্যাগ করলেই তো দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে৷

রিজভী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর ভাগ্যের কথা বলে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করতে বিএনপি ও জোটকে আহবান জানিয়েছেন৷ কিন্তু তারা দেশের ১৬ কোটি মানুষের কথা চিন্তা করেননি৷

তিনি বলেন, যতদিন এরা ক্ষমতায় থাকবে ততদিন জনজীবনে নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি থাকবে না৷ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না৷ মানুষের সহায় সম্পত্তি জীবন পদে পদে বিপন্ন হবে৷

১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর ভাগ্যের কথা বলে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করতে বিএনপি ও জোটকে আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী৷ এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শতকরা ৫ ভাগ ভোট নিয়ে আওয়ামী মহাজোট অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জনগণের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়ে আছে, ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের কথা ভেবে ভোটারবিহীন সরকার পদত্যাগ করলেই তো দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে৷ পরীক্ষার ফলাফল অস্বাভাবিক, অতিরিক্ত কৃতকার্য দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও প্রতিযোগিতার মূল দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে জাতিকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলার উপক্রম করেছে এই সরকার, তারা আবার পরীক্ষার্থীদের ভাগ্য নিয়ে কথা বলে৷

রিজভী আহমেদ বলেন, এখন গণতন্ত্রের ভাগ্য চরম দুর্যোগের মুখে, মানুষের মানবিক মর্যাদা ভুলুন্ঠিত, সার্বভৌম ক্ষমতাকে আত্মসাত্‍ করে জনগণকেই করা হয়েছে অপমানিত৷ মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ক্ষমতাসীনদের অধীন করা হয়েছে৷ একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাকশাল পদ্ধতি আবার অবিকলভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে৷ সুতরাং দুঃশাসনের অবসানের মধ্য দিয়েই কেবলমাত্র বর্তমান অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠীর মুক্তি সম্ভব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি সম্ভব৷

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্ষমতার নেশায় প্রধানমন্ত্রী মনে হয় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন৷ শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি আইন, মানবতা, জনমত, শিষ্টাচার, দেশের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ কোনো কিছুই পরোয়া করছেন না৷ প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগীরা অনর্গল শুধু দমন করো ‘বিচার হবে এই বুলিগুলিই আওড়ে যাচ্ছেন৷ আর এই ধরো মারোর ঘোষণায় দেশকে পরিণত করা হয়েছে রক্তাক্ত প্রান্তরে৷ বন্দুকযুদ্ধের অভিনব গল্প বানিয়ে নয় এখন প্রকাশ্যেই বলে কয়েই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে৷ ক্রস ফায়ারে শুধু সাধারণ স্তরের নেতাকর্মীরাই নয়, এখন ব্যবসায়ী ও কলেজের অধ্যাপক, যারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারা পর্যন্ত খুন হচ্ছেন৷

রিজভী আহমেদ গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি পুলিশী দমনের দায় গ্রহণ করেন তাহলে তো সারা দেশটিকেই এখন বধ্যভূমিতে পরিণত হতে হবে৷ এই দায় গ্রহণের জন্যই পুলিশ, র্যাব, যৌথবাহিনী মরণের বার্তা নিয়ে ঝটিকা আক্রমণ চালাচ্ছে পাড়ায় মহল্লায়৷ বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের বাসা ও বাড়িতে আহাজারি আর শোকের মাতম৷

তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে পুরস্কার ঘোষণার সুযোগ দিয়ে বিএনপি ও জোটের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা জোরেশোরে চলছে৷ এই ভোটারবিহীন সরকার আইন, বিচার, শাস্তি সব নিজের হাতে তুলে নিয়েছে৷ আইন প্রয়োগকারী বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য৷ আর এই দায়িত্বটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি৷

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, ব্যক্তি ও দলকে যারা রাষ্ট্রের ওপরে স্থান দেন তারা গণতন্ত্রের কাঠামোকেই ভেঙে ফেলেন৷ দেশে আলোচনা-সমালোচনা ও সমঝোতার কোনো জায়গা তারা রাখেন না৷ মানুষের সকল অধিকার থেঁতলিয়ে দেয়া হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের চাকায়৷ এটিকেই নাত্‍সী শাসন বলে৷ বাংলাদেশের জনগণ এখন এই নির্দয় শাসনের ত্রাসের মধ্যে জীবনযাপন করছে৷ দেশের বিশিষ্টজনরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অধিকার গ্রুপ, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন সংলাপের কথা, আলোচনার কথা, সমঝোতার কথা৷ কিন্তু সরকার ওই একই বিরোধী দল বিনাশের ক্রুদ্ধ প্রতিহিংসার পরিধির মধ্যেই নিজেদের সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছেন৷

রিজভী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই প্রকৃত গণতন্ত্রের সারবত্তা গ্রহণ করতে চায়নি৷ তারাও ঘন ঘন এক ধরনের গণতন্ত্রের কথা বলে, তবে সেটি তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের অবাধ স্বাধীনতা৷ তারা বরাবরই মনে করে দেশের সকল রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মাঠ, অডিটোরিয়াম সবই আওয়ামী লীগের সম্পত্তি৷ সুতরাং সেগুলি ব্যবহারের সুযোগ কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের, অন্য কারো নয়৷ সেগুলিতে কথা বলা ও সেগুলি ব্যবহার করতে একমাত্র অধিকার তাদেরই, অন্য কোনো দলের সেখানে অনুমতি মিলবে না- এটাই হচ্ছে আওয়ামী গণতন্ত্র৷ যেভাবে আওয়ামী সাঙ্গপাঙ্গরা বিগত ছয় বছর ধরে দখল, হানাহানি ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটে লিপ্ত ছিল তাতে অবাধ অনাচারের স্বাধীনতা ভোগ করার জন্যই তারা বিরোধী দল, বিরোধী সমালোচকদের দমন করতে এতো তত্‍পর৷ যুবলীগ-ছাত্রলীগকে এমনই মাতৃস্নেহে বেয়াড়া করে গড়ে তোলা হয়েছে যে, বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ চালাতে প্রথমেই এদেরকে দিয়েই ‘ওফেনসিভ ফোর্স’ হিসেবে কাজ করানো হয়৷

তিনি বলেন, ‘কঠিন কঠোর ব্রত নিয়ে পথে পথে গড়ে ওঠা শান্তিপূর্ণ অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে৷ এই অবরোধ দেশে শান্তির জন্য, নিরাপত্তার জন্য, মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার জন্য৷ কোনো চোখ রাঙানি, হুমকি আর যৌথবাহিনীর টার্গেট প্র্যাকটিস আন্দোলনকারীদের অদম্য পথ চলাকে থমকে দিতে পারবে না৷